‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’-এর প্রশংসায় পঞ্চমুখ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেছেন, ‘‘এমন সিনেমার মাধ্যমে সাধারণ মানুষ প্রকৃত সত্য জানতে পারেন।’’ কিন্তু যে জায়গাকে কেন্দ্র করে এই সিনেমা সেই কাশ্মীরে ১৯৯০ সাল থেকে সিনেমা হল বন্ধ।
ছবির পোস্টার
বিবেক অগ্নিগোত্রীর ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ নিয়ে চর্চা তুঙ্গে। ছবিটির পক্ষে এবং বিপক্ষে যুক্তি-পাল্টা যুক্তি নিয়ে চলছে তরজা। যে কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে এই সিনেমা, সেই উপত্যকাবাসীদের বড় অংশের মতে, এটি ‘উদ্দেশ্যমূলক ছবি’। কাশ্মীরি পণ্ডিতদের কাশ্মীরের মুসলিমদের বিরুদ্ধে দাঁড় করানোর চেষ্টা। তাঁরা পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন, সন্ত্রাসবাদী হামলা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে কয়েক হাজার কাশ্মীরি নিহত হয়েছেন, তাঁদের নিয়ে কেন কোনও সিনেমা তৈরি হয় না?
‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’-এর প্রশংসায় পঞ্চমুখ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেছেন, ‘‘এমন সিনেমার মাধ্যমে সাধারণ মানুষ প্রকৃত সত্য জানতে পারেন।’’ কিন্তু যে জায়গাকে কেন্দ্র করে এই সিনেমা সেই কাশ্মীরে ১৯৯০ সাল থেকে সিনেমা হল বন্ধ। এমনকি, এখানকার মানুষ সিনেমার পাইরেটেড সংস্করণ দেখতেও আগ্রহী নন। যদিও ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ নিয়ে তাঁদের অসন্তোষ গোপন করেননি উপত্যকাবাসী। কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক আহমেদ ওয়ানির কথায়, ‘‘ভালই তো কাশ্মীরি পণ্ডিতদের নিয়ে সিনেমা হয়েছে। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, গত ৩৩ বছরে সন্ত্রাসবাদের শিকার কমবেশি ২০০ কাশ্মীরি পণ্ডিত। ২০১৬ সালে হিজবুল কমান্ডার বুরহান ওয়ানিকে হত্যার পরে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে শতাধিক তরুণ-যুবক প্রাণ হারাল। সেই ঘটনা নিয়েও তো সিনেমা হতে পারে!’’ রাজনৈতিক অভিসন্ধি নিয়েই ওই ছবি তৈরি করা হয়েছে। ওই অধ্যাপকের সোজাসাপ্টা মন্তব্য, ‘‘এই ছবিকে গৈরিক শিবির নির্বাচনে ব্যবহার করবে এবং দেশের সম্প্রীতি নষ্ট করবে।’’
একই মত উপত্যকায় পণ্ডিতদের স্বার্থ নিয়ে লড়াই করা কাশ্মীর পণ্ডিত সংঘর্ষ সমিতির। সংগঠনের সদস্য সঞ্জয় টিকুর কথায়, ‘‘কিছু লোক এই ছবি দেখিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চায়। তাদের অঙ্গুলিহেলনেই ছবিটি তৈরি করা হয়েছে। ওরা চায় এখন উপত্যকায় যে সব পণ্ডিত রয়েছেন, তাঁদেরও হত্যা করুক জঙ্গিরা।’’ সোম্যা লাখানি নামে জনৈক কাশ্মীরি পণ্ডিতের কথায়, ‘‘এই সিনেমা শিল্প নয়, প্রচার। শিল্প ও প্রচারের সূক্ষ্ম ফারাক আছে। সেই পার্থক্যটা বোঝা জরুরি।’’
কাশ্মীর কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক মহম্মদ শাকিরের মতো অনেকেই মনে করেন, সিনেমায় যা দেখানো হচ্ছে, তা সঠিক নয়। ওই অধ্যাপক বলেন, ‘‘জম্ম-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার, ডাকাতির চেয়ে কোনও অংশে কম নয়।’’ বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারে পরে উপত্যকায় প্রবল ভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। শাকিরের অভিযোগ, ‘‘কথা বললেই সন্ত্রাস-বিরোধী আইনে জেল বন্দি করা হচ্ছে। দারুণ ভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে আমাদের মৌলিক অধিকারগুলি।’’