যোগগুরু রামদেব। — ফাইল চিত্র।
পতঞ্জলির ‘বিভ্রান্তিকর এবং মিথ্যা বিজ্ঞাপন’ মামলায় আবারও সুপ্রিম কোর্টের রোষের মুখে পড়তে হল উত্তরাখণ্ড লাইসেন্সিং বিভাগকে। মঙ্গলবার পতঞ্জলি মামলায় উত্তরাখণ্ড লাইসেন্সিং বিভাগের ‘নিষ্ক্রিয়তা’র জন্য ভর্ৎসনা করেছে দেশের শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের মন্তব্য, কর্তৃপক্ষ ‘সব কিছু মুছে ফেলার চেষ্টা’ করছেন!
সোমবার সুপ্রিম কোর্টে পতঞ্জলির ‘বিভ্রান্তিকর এবং মিথ্যা বিজ্ঞাপন’ মামলায় হলফনামা জমা দিয়েছিল উত্তরাখণ্ড লাইসেন্সিং বিভাগ। সেই হলফনামায় জানানো হয়েছিল, গত ১৫ এপ্রিল রাজ্যের লাইসেন্সিং বিভাগ পতঞ্জলির ১৪টি পণ্য উৎপাদন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। এ ছাড়াও একটি নোটিস জারি করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, পতঞ্জলির কোনও বিজ্ঞাপন প্রকাশ করলে শাস্তির মুখে পড়তে হবে।
মঙ্গলবার আদালতে সেই কথাই জানান উত্তরাখণ্ড লাইসেন্সিং বিভাগ কর্তৃপক্ষ। তা শুনে বিচারপতি হিমা কোহলি এবং বিচারপতি আহসানউদ্দিন আমানুল্লার ডিভিশন বেঞ্চ প্রশ্ন করে, ‘‘কেন পদক্ষেপ করতে এত দেরি হল? কর্তৃপক্ষ এখন ঘুম থেকে জেগে উঠেছেন। আপনাদের পদক্ষেপ থেকে স্পষ্ট, আপনারা যদি কিছু করতে চান, তবে তা বিদ্যুতের গতিতে করেন। কিন্তু আপনি যদি কিছু করতে না চান, তবে বছরের পর বছর ধরে কিছুই হয় না। তিন দিনে আপনারা সমস্ত পদক্ষেপ করেছেন। কিন্তু গত ন’মাস ধরে কী করছিলেন?’’ তার পরই শীর্ষ আদালত বলেছে, ‘‘আপনারা সব কিছু মুছে ফেলার চেষ্টা করেছেন।’’
২০২০ সালের ২৩ জুন প্রথম বার করোনিল কিট বাজারে এনেছিল পতঞ্জলি। ‘করোনিল’ এবং ‘শ্বাসারি বটি’ নামে দু’ধরনের ট্যাবলেট এবং ‘অণু তৈল’ নামের ২০ মিলিলিটারের একটি তেলের শিশি নিয়ে তৈরি ওই কিটের দাম রাখা হয়েছিল ৫৪৫ টাকা। চাইলে আলাদা ভাবে ট্যাবলেট এবং তেল কেনা যাবে বলেও জানানো হয়েছিল। তার পর ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২৩ লক্ষ ৫৪ হাজার করোনিল কিট বিক্রি হয়েছে বলে সংস্থার তরফে জানানো হয়।
এই বিজ্ঞাপন নিয়ে আপত্তি জানিয়ে রামদেবের সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা করেছিল আইএমএ। আইএমএ-র অভিযোগ ছিল, পতঞ্জলির বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপনে অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা এবং চিকিৎসককে অসম্মান করা হয়েছে। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সাধারণ জনগণকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগও আনা হয়েছিল। অভিযোগ ছিল, কোভিড প্রতিরোধী না-হওয়া সত্ত্বেও শুধু করোনিল কিট বিক্রি করেই আড়াইশো কোটি টাকার বেশি মুনাফা করেছিল রামদেবের পতঞ্জলি। আর তার জন্য ‘বিভ্রান্তিকর এবং মিথ্যা’ বিজ্ঞাপনী প্রচার চালানো হয়েছিল বলে অভিযোগ ছিল আইএমএ-র।
সু্প্রিম কোর্টে এই মামলায় বার বার ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয় যোগগুরু রামদেব এবং এবং তাঁর সহযোগী আচার্য বালকৃষ্ণকে। ‘বিভ্রান্তিকর এবং মিথ্যা বিজ্ঞাপন’ দেওয়ায় রামদেবদেরকে ক্ষমা চাইতে বলে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের নির্দেশ মোতাবেক গত ২৪ এপ্রিল সংবাদপত্রে ক্ষমাপত্র ছাপান রামদেবরা। যা নিয়ে মঙ্গলবার বিচারপতি আমানুল্লা বলেন, ‘‘আগে ক্ষমাপত্রে শুধু পতঞ্জলির নাম ছিল, এখন রামদেবদের নাম আছে। আমরা এই পদক্ষেপের প্রশংসা করি।’’