ছবি: পিটিআই।
দলের নির্বাচনী প্রতীক তির-ধনুক। তাদের পোস্টার-ব্যানার পতাকায় ‘জয় মহারাষ্ট্র’ স্লোগানের পাশে শোভা পায় হুঙ্কার দেওয়া বাঘের মুখ। মহারাষ্ট্রে ভোট মিটতেই নাগাড়ে তির ছুড়ে যাচ্ছিলেন শিবসেনার প্রধান উদ্ধব ঠাকরে। প্রায় দ্বিগুণ আসন পাওয়া দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গীর বিরুদ্ধে ব্যাঘ্রগর্জনেও পিছপা হননি। এনডিএতে থেকেই বুক ঠুকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহকে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে মিথ্যেবাদী তকমা দিয়ে হুঙ্কার ছেড়েছেন, ৫০:৫০ সমীকরণ মেনে অন্তত আড়াই বছরের জন্য মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি তাঁদের চাই।
রাজনীতির লোকজন বলছেন, লড়াইয়ের সুর এমন চড়া তারে বেঁধে দেওয়ার ফলেই উদ্ধবের এখন বাঘের পিঠে সওয়ার হওয়ার দশা। কুল খুইয়েও মান রাখতে পারছেন না। উল্টে পড়েছেন উভয়সঙ্কটে। ভয়ে আছেন, দলে ভাঙন ধরাবে না-তো বিজেপি! উদ্ধব এ দিন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, বিজেপি যদি শিবসেনা বিধায়কদের ভাঙানোর চেষ্টা করে তবে চুপ থাকবেন না তাঁরাও। কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বাঁধায় শিবসেনার নিচুতলার কর্মীদের একাংশ যে প্রবল ক্ষুব্ধ, উদ্ধব তা বিলক্ষণ জানেন। আর জানেন বলেই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সরকার গড়ার কাজ সেরে ফেলতে চাইছিলেন। যাতে ক্ষমতা দখলের সাফল্যে সেই ক্ষতে প্রলেপ পড়ে।
মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেবেন্দ্র ফডণবীস দ্বিতীয় বার শপথ নেওয়ার পরে আজ সকালেও আক্রমণ শানিয়েছেন উদ্ধব। বলেছেন, ‘‘মহারাষ্ট্রের বুকে এটা সার্জিক্যাল স্ট্রাইক।’’ কিন্তু এতে গর্জনের বদলে আক্রান্তের আর্তিই শুনতে পাচ্ছেন রাজনীতির লোকজন। যে ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর মসনদের জন্য গত এক মাস এবং বিশেষ করে এখন এনসিপি নেতা শরদ পওয়ারের দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে উদ্ধবকে, তা-ও শিবসেনার বরাবরের হুঙ্কারের সঙ্গে তেমন মানানসই নয়।
দিল্লির বাতাসে গুঞ্জন, বাণিজ্য-নগরীতে এক মাসের আকচাআকচির পরে বিজেপির পয়লা নম্বর নিশানা এখন উদ্ধবই। রাজনৈতিক ভাবে তাঁকে পথে বসানোই নাকি পাখির চোখ এখন মোদী-শাহ জুটির। মুখ্যমন্ত্রিত্বের অর্ধেক মেয়াদের দাবিতে অনড় থাকা, শাহকে মিথ্যাবাদী বলার পরেও সরাসরি এনডিএ ছাড়ার কথা এখনও ঘোষণা করেনি উদ্ধবের দল। তবে শরদের কথা মতো কেন্দ্রে মন্ত্রিত্ব ছেড়েছে শিবসেনা। হাত মেলাতে পিছপা হয়নি এনসিপি, কংগ্রেসের মতো ‘ঘোর শত্রুর’ সঙ্গে। মনে করা হচ্ছে, এর ‘বদলা’ নিতেই নাকি তলে-তলে শরদের সঙ্গে যোগসাজশ করেছে বিজেপি। সংসদে খোদ প্রধানমন্ত্রী মোদী এনসিপি-র প্রশংসা করায় সেই জল্পনা আরও বেড়েছে। মোদী-শরদ বৈঠকের পরে ঘি পড়েছে জল্পনার আঁচে।
রাজনৈতিক সূত্রের মতে, শরদের মাধ্যমেই নাকি গত এক মাস উদ্ধবকে ‘পথে আনতে চেয়েছে’ বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রিত্বকে সামনে রেখে শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউত যত সুর চড়িয়েছেন, সরকার গঠনে যত তাড়া দেখিয়েছে শিবসেনা, অঘোষিত ভাবে তত ‘ধীরে চলো’ নীতি নিয়েছেন শরদ। দিনের পর দিন বৈঠক হয়েছে। কিন্তু বলা হয়েছে, আলোচনা বাকি রয়ে গিয়েছে এখনও! এরই মধ্যে গত কাল হঠাৎই উদ্ধবকে শিবসেনা-এনসিপি-কংগ্রেস জোটের সর্বসম্মত প্রার্থী ঘোষণা করে দেন শরদ। অথচ পাশা উল্টে যায় ১২ ঘণ্টার মধ্যেই! ভাইপো অজিত পওয়ারের হাত ধরে।
শিবসেনার লোকজনই ঘরোয়া ভাবে মানছেন, নাকের ডগা দিয়ে ফডণবীসের কুর্সি দখল করাটা উদ্ধবের কাছে নাক কাটা যাওয়ার মতো। আগামী দিনে যদি ফের পাশা উল্টে দলের বিধায়কদের সমর্থন নিজের দিকে টেনে এনে সরকার গড়ার রাস্তা করে দেন শরদ, তাতেও তাঁর উপরে প্রবল ভাবে নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হবে উদ্ধবকে। ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলবে মোদী-শাহ জুটি। প্রশাসনের অভিজ্ঞতা তো দূর, ভোটে লড়ারও অভিজ্ঞতা নেই নিজের। তার উপরে নেই সংখ্যার জোরও। কুর্সিতে বসতে পারলেও, সরকারের রিমোট থাকবে শরদের হাতে। দীর্ঘদিন যেটা থাকত উদ্ধবের বাবা বাল ঠাকরের হাতে!
সব চাপ সামলে উদ্ধব যদি শেষমেশ বাজি জেতেন, নিদেনপক্ষে উতরে যান পরীক্ষায়, শিবসেনার বাঘের গর্জন বজায় থাকবে তবেই। নইলে? কারও নাম না-করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ান আজ টুইট করেছেন, ‘‘সড়কে সেই সব জন্তুই মারা পড়ে, যারা ঠিক করতে পারে না, ডান দিকে যাবে না বাঁয়ে!’’