Kolkata Metro

‘পরীক্ষাযাত্রা’য় ট্রেন ‘বাঁচাল’ মেট্রো, ভিড়ে চ্যাপ্টা যাত্রীরা চান: অফিস টাইমে পুরনো সেই ৬ মিনিট আসুক নেমে

যাত্রীদের অভিযোগ, সোমবার থেকে কার্যকর হওয়া নতুন সিদ্ধান্তের ফলে মেট্রোর পরিষেবার সংখ্যা কমে গিয়েছে। ফলে মেট্রোয় আগের তুলনায় ভিড় বেশি হচ্ছে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ১১:৪৬
Share:

ছবি: গেটি ইমেজেস

সম্প্রতি দুই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন কলকাতা মেট্রো কর্তৃপক্ষ। এক, প্রায় সব মেট্রো দক্ষিণেশ্বর থেকে ছাড়বে। দুই, এখন থেকে দিনভর ৭ মিনিট অন্তর মেট্রো চলবে। তবে গোটাটাই পরীক্ষামূলক ভাবে। সোমবার থেকে সেই সিদ্ধান্ত কার্যকরও হয়েছে। আর তার পর থেকেই যাত্রীদের একটা বড় অংশের সমালোচনার মুখে পড়েছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। বিশেষত দমদম থেকে নিয়মিত যাতায়াত করেন যাঁরা। সেই সব যাত্রীর অভিযোগ, সোমবার থেকে কার্যকর হওয়া নতুন সিদ্ধান্তের ফলে মেট্রোর পরিষেবার সংখ্যা কমে গিয়েছে। ফলে মেট্রোয় আগের তুলনায় ভিড় বেশি হচ্ছে। পাশাপাশি, কোনও মেট্রোই সময় মতো আসছে না স্টেশনে। ফলে যাত্রীদের ভোগান্তি হচ্ছে। মেট্রো কর্তৃপক্ষ যদিও জানিয়েছেন, দু’টি সিদ্ধান্তই পরীক্ষামূলক ভাবে কার্যকর করা হয়েছে। দিনের শেষে সবটাই যাত্রীদের আরও ভাল পরিষেবা দেওয়ার জন্যই।

Advertisement

সোমবারের আগে পর্যন্ত কবি সুভাষগামী কিছু ডাউন মেট্রো ছাড়ত দক্ষিণেশ্বর স্টেশন থেকে। বাকিগুলি দমদম থেকে ছাড়ত। কিন্তু সোমবার থেকে প্রায় সব ডাউন মেট্রোই ছাড়ছে দক্ষিণেশ্বর থেকে। ফলে দমদম বা তার পরের স্টেশনগুলি থেকে ব্যস্ত সময়ে মেট্রোয় উঠতে গেলে ভিড়ের কারণে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। সোম, মঙ্গল— দু’দিনই ডাউন লাইনে দমদম এবং তার পরের বিভিন্ন স্টেশনে দিনের ব্যস্ত সময়ে থিকথিকে ভিড় দেখা গিয়েছে। মেট্রোর ভিতরেও তিলধারণের জায়গা ছিল না। দু’-এক জায়গায় দেখা গিয়েছে, ট্রেনের ভিতরে থাকা যাত্রীদের কেউ কেউ হাতজোড় করে প্ল্যাটফর্মের যাত্রীদের বলেছেন, ‘‘প্লিজ়, উঠবেন না এই মেট্রোয়! পরেরটায় আসুন।’’ একই অনুরোধ শোনা গিয়েছে মেট্রো কর্তৃপক্ষের প্ল্যাটফর্ম-ঘোষণাতেও। কর্তৃপক্ষের তরফে পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেমে ঘোষণা করা হয়েছে, পর পর মেট্রো রয়েছে। ভিড় মেট্রোয় আরও ভিড় না-বাড়ানোর অনুরোধ করা হয়েছে সেই ঘোষণায়।

এর আগে দিনের ব্যস্ত ও অন্যান্য সময়বিশেষে দমদম-কবি সুভাষ রুট (ব্লু লাইন)-এ মেট্রো চলত ৬ থেকে ১০ মিনিটের ব্যবধানে। সেটাই এখন নির্দিষ্ট হয়েছে ৭ মিনিট অন্তর। দক্ষিণেশ্বর থেকে সেই ব্যবধান আরও বেশি ছিল। যাত্রীদের অভিযোগ, ব্যবধান ৭ মিনিট করার ফলে দিনভর মেট্রো যে পরিষেবা দিত, তার সংখ্যা কমে গিয়েছে। মানিকতলার বাসিন্দা সৌমেন দত্ত কাজের সূত্রে প্রতি দিন গিরিশ পার্ক থেকে যান চাঁদনি চক। সোমবার সকাল ১১টা নাগাদ স্টেশনে গিয়ে তিনি দেখেন উপচে পড়ছে যাত্রীদের ভিড়। সেই ভিড় ঠেলে কোনও মতে ট্রেনে ওঠার চেষ্টা করেন সৌমেন, কিন্তু পারেননি। একটা, দুটো, তিনটে মেট্রো ছেড়ে দিয়েও কোনও লাভ হয়নি। অগত্যা উল্টো দিকের মেট্রো ধরে তিনি চলে যান দক্ষিণেশ্বর। সেখান থেকে আসেন চাঁদনি। তাঁর কথায়, ‘‘দক্ষিণেশ্বর থেকে এলেও মেট্রোয় মূল ভিড় হতে শুরু করে দমদম থেকে। পার্ক স্ট্রিট, এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত সেই ভিড় থাকে। যা দেখলাম, স্টেশনে যে ভিড় ছিল তার মাত্র এক শতাংশ কোনও ক্রমে ট্রেনে উঠতে পেরেছে। বাকি ভিড় অপেক্ষা করেছে পরের মেট্রোর জন্য।’’ তাঁর দাবি, ‘‘মেট্রো কর্তৃপক্ষ যদি পরিস্থিতি বিবেচনা করে ফের ৬ মিনিটের ব্যবধান ফিরিয়ে আনতে পারেন, সেটা আমাদের জন্য ভাল হবে।’’

Advertisement

সৌমেনের মতো একই মত দেবলীনা কুন্ডুর। তিনিও রোজ ক্ষুদিরাম স্টেশন থেকে মেট্রো ধরেন। আসেন এসপ্ল্যানেড। গত দু’দিন মেট্রোয় উঠতে সমস্যায় পড়েছেন দেবলীনা। তাঁর অভিযোগ, ‘‘অফিস টাইমে এক মিনিট দেরিতে মেট্রো চলা মানে অনেক যাত্রীর ভিড় বেড়ে যাওয়া। ভিড়ের জন্য সময়ে ট্রেন ছাড়তে পারছে না স্টেশন থেকে। ফলে দেরি হচ্ছে। আমার তো পর পর দু’দিন অফিস ঢুকতে দেরি হয়েছে।’’ দেবলীনার আরও যুক্তি, ‘‘মেট্রোর দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত যাওয়া এবং সেখান থেকে ছেড়ে আসা, একই সঙ্গে ৭ মিনিটের ব্যবধান— দু’টি কারণেই পরিষেবা দেখা-চোখে কমেছে। টাইমটা কমিয়ে যদি আবার ৬ মিনিট করা যায়, সেটা দেখা উচিত মেট্রোর।’’

মেট্রো সূত্রে জানা গিয়েছে, আগে দিনভর ২৮৮টি পরিষেবা মিলত। এখন তা কমে হয়েছে ২৪৮। এর সঙ্গে আরও দু’টি পরিষেবার কথা কর্তৃপক্ষ বলছেন, রাতের শেষ মেট্রো। অর্থাৎ সব মিলিয়ে ২৫০টি পরিষেবা পাওয়া যাচ্ছে এখন। অর্থাৎ ৩৮টি পরিষেবা কমে গিয়েছে। কারণ হিসাবে তাঁরা জানাচ্ছেন, আগে একটা মেট্রো যদি তার যাত্রাপথ শেষ করত দমদমে, তবে সেখান থেকেই সে ডাউনে কবি সুভাষের দিকে রওনা হত। এখন সেই মেট্রোই দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত যাচ্ছে। আবার সেখান থেকে কবি সুভাষের উদ্দেশে রওনা হচ্ছে। ফলে দমদম থেকে দক্ষিণেশ্বর যাতায়াতে ওই মেট্রোর যে অতিরিক্ত সময় লাগছে, সেটাই পরিষেবা কমে যাওয়ার একমাত্র কারণ।

তবে যাত্রীদের আর এক অংশ মেট্রোর নতুন সূচি নিয়ে খুশি। প্রসেনজিৎ নন্দী নামে এক যাত্রীর কথায়, ‘‘ব্যস্ত সময় বাদে আগে দিনের অন্যান্য সময়ে কখনও ৮ মিনিট, কখনও ১০, আবার কখনও ১২ মিনিট অন্তর মেট্রো পাওয়া যেত। ফলে একটা মেট্রো মিস করলে অপেক্ষা করতে হত অনেক ক্ষণ। তবে ৭ মিনিট ব্যবধানে মেট্রো চলায় সেই সমস্যার সমাধান হয়েছে।’’ একই যুক্তি দিচ্ছেন হুগলির চন্দননগর নিয়মিত শহরে আসা যুবক অমিত সিংহ। তিনি ব্যান্ডেল লোকালে বালি স্টেশনে নেমে সেখান থেকে দক্ষিণেশ্বর পৌঁছে মেট্রো ধরেন। তাঁর কথায়, ‘‘আগে একটা মেট্রো মিস করলে দক্ষিণেশ্বরে অনেক ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হত। এখন ৭ মিনিট দাঁড়ালেই বিষয়টা মিটে যাচ্ছে। আজকাল তো দক্ষিণেশ্বর থেকে প্রচুর যাত্রী মেট্রোয় ওঠেন। এটা ভালই হয়েছে।’’

মেট্রো কর্তৃপক্ষও জানিয়েছেন, শহরতলির যাত্রীদের কথা মাথায় রেখেই দক্ষিণেশ্বর থেকে প্রায় সব মেট্রো চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে পরীক্ষামূলক ভাবে করা হয়েছে গোটা বিষয়টিই। যদিও দমদম বা তার পরের স্টেশনের যাত্রীরা ৬ মিনিটের ব্যবধান ফিরিয়ে আনার দাবি তুলেছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement