গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা পরীক্ষা হয়েছে ৭ লক্ষ ৩৩ হাজার ৪৪৯ জনের। গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।
ফের ৬০ হাজারের গণ্ডি ছুঁল দৈনিক নতুন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। দিন চারেক ৬০ হাজারের গণ্ডিতে থাকার পর মঙ্গলবার নতুন সংক্রমণ কমে হয়েছিল ৫৩ হাজারোর কাছাকাছি। বুধবার তা ফের পৌঁছল প্রায় ৬১ হাজারে। এর জেরে দেশে মোট আক্রান্ত ২৩ লক্ষ ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে রেকর্ড সংখ্যক করোনা পরীক্ষা হয়েছে। গতকালের তুলনায় সংক্রমণ হারও একটু বাড়লেও তা নয় শতাংশের নীচেই রয়েছে। সেই সঙ্গে আক্রান্ত রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার হার ৭০ শতাংশ ছাড়াল।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৬০ হাজার ৯৬৩ জন নতুন করে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। ওই সময়ের মধ্যে, আমেরিকা ও ব্রাজিলে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা যথাক্রমে ৪৬ হাজার ৮৫৫ ও ১৯ হাজার ৭১০ জন। অর্থাৎ এক দিনের সংক্রমণের নিরিখে বিশ্বে এক নম্বরেই রইল ভারত। ভারতে মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২৩ লক্ষ ২৯ হাজার ৬৩৮ জন। সেখানে বিশ্বে প্রথম স্থানে থাকা আমেরিকাতে মোট আক্রান্ত ৫১ লক্ষ ৪১ হাজার ও দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্রাজিলে ৩০ লক্ষ ৫৭ হাজার।
প্রতি দিন যে সংখ্যক মানুষের পরীক্ষা হচ্ছে, তার মধ্যে যত শতাংশের কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ আসছে, সেটাকেই বলা হচ্ছে ‘পজিটিভিটি রেট’ বা সংক্রমণের হার। মঙ্গলবার বেশ কিছুটা কমে তা হয়েছিল ৭.৬৮ শতাংশ। বুধবার তা দাঁড়িয়েছে ৮.৩১ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে কোভিড পরীক্ষা হয়েছে ৭ লক্ষ ৩৩ হাজার ৪৪৯ জনের। যা করোনাকালের মধ্যে সর্বোচ্চ।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। )
আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও, ভারতে করোনা রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার পরিসংখ্যানটাও শুরু থেকেই স্বস্তি দিয়ে আসছে। এখনও পর্যন্ত মোট ১৬ লক্ষ ৩৯ হাজার ৫৯৯ জন করোনা আক্রান্ত সুস্থ হয়ে উঠেছেন। অর্থাৎ দেশে মোট আক্রান্তের ৭০.৩৮ শতাংশ সুস্থ হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৫৬ হাজার ১১০ জন।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
মৃত্যুর নিরিখে স্পেন, ফ্রান্স, ইটালিকে পিছনে ফেলে বিশ্বে পঞ্চম স্থানে রয়েছে ভারত। যদিও মৃত্যুর হার ওই সব দেশগুলির তুলনায় ভারতে অনেকটাই কম। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার জেরে মৃত্যু হয়েছে ৮৩৪ জনের। এ নিয়ে দেশে মোট ৪৬ হাজার ৯১ জনের প্রাণ কাড়ল করোনাভাইরাস। এর মধ্যে মহারাষ্ট্রেই মারা গিয়েছেন ১৮ হাজার ৩০৬ জন। দ্বিতীয় স্থানে থাকা তামিলনাড়ুতে মোট মৃত ৫ হাজার ১৫৯ জন ছাড়িয়েছে। দেশের রাজধানীতে সেই সংখ্যাটা ৪ হাজার ১৩৯ জন।
জুলাই জুড়েই মৃত্যু বেড়ে তালিকার চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছিল কর্নাটক। সেখানে কোভিডের কারণে এখনও অবধি ৩ হাজার ৩৯৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। গুজরাতে ২ হাজার ৬৯৫ জনের প্রাণ কেড়েছে করোনাভাইরাস। অন্ধ্রপ্রদেশ (২,২০৩), উত্তরপ্রদেশ (২,১৭৬) ও পশ্চিমবঙ্গে (২,১৪৯) মৃতের সংখ্যা রোজদিন বেড়েই চলেছে। এর পর ক্রমান্বয়ে রয়েছে মধ্যপ্রদেশ (১,০৩৩), রাজস্থান (৮১১), তেলঙ্গানা (৬৫৪), পঞ্জাব (৬৩৬), হরিয়ানা (৫০০), জম্মু ও কাশ্মীর (৪৯০), বিহার (৪১৩), ওড়িশা (২৯৬), ঝাড়খণ্ড (১৯২), উত্তরাখণ্ড (১৩৬) ও ছত্তীসগঢ় (১০৪)। বাকি রাজ্যগুলিতে মৃতের সংখ্যা এখনও ১০০ পেরোয়নি।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
শুরু থেকেই মহারাষ্ট্র সংক্রমণের শীর্ষে রয়েছে। সে রাজ্যে মোট আক্রান্ত ৫ লক্ষ ৩৫ হাজার ৬০১ জন। দ্বিতীয় স্থানে থাকা তামিলনাড়ুতে মোট আক্রান্ত ৩ লক্ষ ৮ হাজার ৬৪৯ জন। সংক্রমণ তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ। সেখানে এখন মোট আক্রান্ত ২ লক্ষ ৪৪ হাজার ৫৪৯ জন। সংক্রমণের নিরিখে চতুর্থ স্থানে থাকা কর্নাটকে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১ লক্ষ ৮৮ হাজার ৬১১ জন। তবে জুলাই থেকেই রাজধানী দিল্লিতে দৈনিক সংক্রমণ বৃদ্ধিতে বেশ খানিকটা লাগাম পড়েছে। রাজধানীতে এখনও অবধি মোট আক্রান্ত হয়েছেন এক লক্ষ ৪৭ হাজার ৩৯১ জন। উত্তরপ্রদেশে মোট আক্রান্ত ১ লক্ষ ৩১ হাজার ৭৬৩ জন। পশ্চিমবঙ্গে মোট আক্রান্তের সংখ্যা হল ১ লক্ষ ১ হাজার ৩৯০ জন।
বিহার (৮৬,৪১৩), তেলঙ্গানা (৮৪,৫৪৪), গুজরাত (৭৩,১৬৩), অসম (৬৪,৪০৬), রাজস্থান (৫৪,৮৮৭) ও ওড়িশাতে (৪৮,৭৯৬) আক্রান্তের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়ছে। এর পর ক্রমান্বয়ে রয়েছে হরিয়ানা (৪৩,২২৭), মধ্যপ্রদেশ (৪০,৭৩৪), কেরল (৩৬,৯৩২), জম্মু ও কাশ্মীর (২৫,৯৩১), পঞ্জাব (২৫,৮৮৯), ঝাড়খণ্ড (১৯,২২৫), ছত্তীসগঢ় (১২,৯২৯) ও উত্তরাখণ্ড (১০,৪৩২)-এর মতো রাজ্য। গোয়া, ত্রিপুরা, মণিপুর, হিমাচল প্রদেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা এখনও দশ হাজারের কম।
পশ্চিমবঙ্গেও বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের প্রকাশিত বুলেটিন অনুসারে, নতুন করে ২ হাজার ৯৩১ জনের দেহে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছে। এ নিয়ে রাজ্যে মোট আক্রান্ত হলেন ১ লক্ষ ১ হাজার ৩৯০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে মৃত্যু হয়েছে ৪৯ জনের। করোনার কবলে রাজ্যে এখনও অবধি মোট প্রাণ হারিয়েছেন ২ হাজার ১৪৯ জন।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)