এ বছর মহাষষ্ঠী ২২ অক্টোবর। সেই তারিখে বঙ্গে করোনায় মোট সংক্রমিতের সংখ্যা দাঁড়াতে পারে ১ লক্ষ ৬৮ হাজারেরও বেশি। পরিস্থিতি যদি খুব খারাপ হয়, তবে আগামী বছরের মার্চে ভারতের আক্রান্তের সংখ্যা পেরোতে পারে ৬ কোটি। মৃত্যু হতে পারে কমপক্ষে ২৪ লক্ষ মানুষের!
বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সেসের তৈরি গাণিতিক মডেল বলছে, দেশের করোনা পরিস্থিতি ‘সব চেয়ে খারাপ’ অবস্থায় পৌঁছলে এমনই হতে পারে ছবিটা। গত ২৩ মার্চ থেকে ১৮ জুন— এই তিন মাস ধরে দেশে করোনা সংক্রমণের হারকে বিভিন্ন অঙ্ক ও শর্তে বিশ্লেষণ করে গাণিতিক মডেলটি বানিয়েছেন আইআইএসসি-র ডেটা সায়েন্স বিভাগের গবেষক-অধ্যাপক শশীকুমার গণেশন ও দীপক সুব্রহ্মণি। অন্তত ৬টি সম্ভাব্য পরিস্থিতির নিরিখে দেশের করোনা পরিস্থিতির আভাস দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তাঁরা।ভারতীয় বিজ্ঞান গবেষণা সংস্থাগুলির মধ্যে দ্বিজোত্তম আইআইএসসি। ফলে, সেই সংস্থা এমন একটি পূর্বাভাস দিলে তা আরও বেশি মান্যতা পায়।
এই হিসেব অনুযায়ী ২০২১-এর মার্চের শেষে এ রাজ্যেই আক্রান্তের সংখ্যা হতে পারে ১০ লক্ষের বেশি। আর পরিস্থিতি ‘সবচেয়ে খারাপ’ হলে দেশ জুড়ে আক্রান্তের সংখ্যাটা দাঁড়াতে পারে ৬.১৮ কোটি। আর, সংক্রমণের ‘চলতি হার’ অনুযায়ী কী হতে পারে? দুই গবেষকের মত হল, সে ক্ষেত্রে মার্চে দেশে মোট সংক্রমিত দাঁড়াবে ৯১ লক্ষ।
অথচ আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় দেশ আজই সংক্রমিতের সংখ্যা ১০ লক্ষ পার করে ফেলেছে। ‘চলতি হার’-এর হিসেব ধরে চললে যেটা অক্টোবরে হওয়ার কথা ছিল। অর্থাৎ দেশ জুড়ে সংক্রমণের এখনকার গতি খারাপের দিকেই যাচ্ছে। গবেষকেরা তাঁদের মডেলে গত তিন মাসে সংক্রমণের যে হারের উপরে ভিত্তি করে বর্তমান পরিস্থিতির ছবি তুলে ধরতে চেয়েছেন, বাস্তবে প্রতিনিয়ত, তার থেকে অনেক দ্রুত হারে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে দেশে। ‘সবচেয়ে খারাপ’ পরিস্থিতির হিসেবে, ১৬ জুলাই সংক্রমিতের সংখ্যা হওয়ার কথা ছিল ৯.৭৮ লক্ষ। দৃশ্যতই তা টপকে গিয়েছে দেশ। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের হিসেবে অবশ্য আজ সকাল ৮টা পর্যন্ত সংক্রমিতের মোট সংখ্যা ছিল ৯,৬৮,৮৭৬। মন্ত্রকের হিসেবে, চব্বিশ ঘণ্টায় নতুন সংক্রমণের সংখ্যা আজই প্রথম বার ৩০ হাজারের গণ্ডি টপকে পৌঁছে গিয়েছে ৩২,৬৯৫ জনে। আরও ৬০৬ জন মারা যাওয়ায় মৃতের মোট সংখ্যা হয়েছে ২৪,৯১৫। আর আজ রাতে আন্তর্জাতিক সমীক্ষা ভারতে মোট করোনা-সংক্রমিতের সংখ্যা ১০ লক্ষ পার করিয়ে দিয়েছে। সংখ্যাটা ৯ থেকে ১০ লক্ষে পৌঁছতে সময় লেগেছে মাত্র দু’দিন!
আরও পড়ুন: গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমিত ১ হাজার ৬৯০, কমল দৈনিক সংক্রমণের হার
আইআইএসসি-র মডেল অনুযায়ী, ‘আশাব্যঞ্জক পরিস্থিতি’তে যদি সংক্রমণের হার কমবে বলে ধরে নেওয়া হয়, সে ক্ষেত্রে মার্চের শেষে সব মিলিয়ে দেশে ৩৭.৪ লক্ষ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হবেন। যদিও দেশে যে হারে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, তাতে ভারত ওই সংখ্যা চলতি বছরেই ছুঁয়ে ফেলবে বলে আশঙ্কা। গবেষকেরা বিশেষ ভাবে জোর দিয়েছেন প্রতি সপ্তাহের শেষে ও মাঝখানে এক বা দু’দিন লকডাউন পালনের উপরে। তাঁদের মতে, এর ফলে সংক্রমণের শৃঙ্খল (চেন) ভাঙা সম্ভব। চলতি হারে সংক্রমণের পরিস্থিতিতে যদি প্রতি রবিবার লকডাউন করা হয়, সে ক্ষেত্রে মার্চে সব মিলিয়ে সংক্রমিত হবেন ৩৩.২ লক্ষ দেশবাসী। আর যদি বুধ ও রবিবারে লকডাউন করা যায়, সে ক্ষেত্রে মোট সংক্রমণ নেমে আসবে ১৩.৯ লক্ষে। গবেষকদের মতে, প্রতিষেধক আবিষ্কারের আগে পর্যন্ত কড়া লকডাউন, পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখাই হল নতুন সংক্রমণের হারকে থামিয়ে দেওয়ার শ্রেষ্ঠ উপায়। আইসিএমআরের ডিজি বলরাম ভার্গব আজ সব রাজ্যের মুখ্যসচিবকে চিঠি লিখে বলেছেন, অনুমোদিত সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি ল্যাবে র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করাতে হবে এবং তার ফলাফল আইসিএমআরের পোর্টালে তুলতে হবে।
আরও পড়ুন: সেপ্টেম্বরে দেশে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫ লক্ষ, রাজ্যে প্রায় ৬০ হাজার, দাবি গবেষণায়