জাতির উদ্দেশে ভাষণ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। —ফাইল চিত্র
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে প্রয়োজন ছিল বড়সড় আর্থিক প্যাকেজের। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জাতির উদ্দেশে ভাষণের আগে থেকে তেমন প্রত্যাশাও তৈরি হয়েছিল। করোনাভাইরাসের মোকাবিলায় এবং অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ২০ লক্ষ কোটি টাকার বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যা ভারতের জিডিপির প্রায় ১০ শতাংশ। এই প্রকল্পের নাম দিয়েছেন ‘আত্মনির্ভর ভারত অভিযান’। এই আর্থিক প্যাকেজ দেশে বিরাট সংস্কার আনবে বলে আশ্বস্ত করেছেন মোদী। পাশাপাশি চতুর্থ দফার লকডাউন যে সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী হবে, সে কথাও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোর আগে থেকেই ধুঁকছিল অর্থনীতি। কোভিড-১৯ গোটা বিশ্বের সঙ্গে ভারতের অর্থনীতিও কার্যত পঙ্গু করে দিয়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়াতে ২০ লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মঙ্গলবার প্রায় ৩৩ মিনিটের প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের মূল সারবত্তা ছিল এই আর্থিক প্যাকেজই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘টোয়েন্টি টোয়েন্টিতে ২০ লক্ষ কোটির প্যাকেজ। এই আর্থিক প্যাকেজের মধ্যে কৃষক, শ্রমিক থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র শিল্পক্ষেত্র— যাঁরা নিয়ম মেনে কর দেন, শিল্পক্ষেত্র সবার জন্য বন্দোবস্ত থাকবে।’’ প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, আগামিকাল থেকে ধাপে ধাপে এই প্যাকেজের বিষয়ে বিস্তারিত জানাবেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।
এই আর্থিক প্যাকেজে ভারতের অর্থনীতিতে এক বিরাট সংস্কার নিয়ে আনবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘এই প্যাকেজের মাধ্যমে চেষ্টা করা হবে যাতে কৃষিক্ষেত্রে সবচেয়ে কম ক্ষতি হয়। আর্থিক ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে মানবসম্পদের উন্নয়ন করতে হবে। এ ছাড়া মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্পে এই প্যাকেজ আরও উৎসাহ বাড়াবে।’’ শ্রমিকশ্রেণির কথা বলতে গিয়ে মোদী বলেন, ‘‘শ্রমিক, মজুর-সহ নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষ এই করোনা সঙ্কটে অনেক কষ্ট করেছেন, অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। এ বার সময় এসেছে, আমাদের তাঁদের জন্য কিছু করার। সেই কথা মাথায় রেখেই গরিব, শ্রমিক, মৎস্যজীবী— সংগঠিত হোক বা অসংগঠিত ক্ষেত্র, সবার কথা ভেবেই এই আর্থিক প্যাকেজ তৈরি হয়েছে।’’
১৭ মে শেষ হচ্ছে তৃতীয় দফার লকডাউন। তার পরেও কি লকডাউন থাকবে? থাকলেও কতটা নিয়ন্ত্রণ বা কোন কোন ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হবে, তা নিয়ে দেশবাসীর কৌতূহল ছিল। লকডাউনের চরিত্র কেমন হবে, তা স্পষ্ট না করলেও প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘লকডাউন-৪ সম্পূর্ণ অন্য রকমের হবে।’’ প্রধানমন্ত্রীর কথায় স্পষ্ট চতুর্থ দফায় লকডাউন বাড়ছে। তবে নিয়ন্ত্রণ বা শিথিলতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়নি। সেটা ১৮ তারিখের আগেই জানিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল সোমবারই মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী। ১৫ তারিখের মধ্যে রাজ্যগুলির পরামর্শ চেয়েছেন। রাজ্যগুলির কাছ থেকে সেই সংক্রান্ত অনেক পরামর্শ পাচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তব্য:
• ভারতবাসীর প্রতিটি নাগরিকের প্রতি আমার আহ্বান, স্বনির্ভর ভারত গড়ে তুলুন
• রাজ্যগুলির কাছ থেকে আমরা অনেক মতামত পাচ্ছি
• চতুর্থ দফার লকডাউন পুরোপুরি আলাদা প্রকৃতির হবে
• এটা ঠিক যে করোনাভাইরাস দীর্ঘদিন আমাদের মধ্যে থাকবে
• আপনাদের প্রয়াস-প্রচেষ্টা আপনাদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা আরও বেড়ে যাচ্ছে
• এ বার থেকে স্থানীয় বাজারের প্রচারও করতে হবে
• তার গুরুত্ব বাড়তে বাড়তে গ্লোবাল হয়েছে
• গ্লোবাল মার্কেটও এক সময় স্থানীয় স্তরে ছিল
• স্থানীয় বাজারের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এই আর্থিক প্যাকেজে
• এ বার সময় হয়েছে আমাদের তাঁদের জন্য় কিছু করার
• গরিব, নিম্নবিত্ত মানুষ অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন
• এই সঙ্কটে ভারতবাসী অনেক কষ্ট সহ্য করেছেন
• এটা এমন এক সঙ্কট যেখানে বড় বড় অর্থনীতির ভিতও নড়ে গিয়েছে
• আর্থিক প্যাকেজে অনেক বিকল্প রয়েছে, যাতে আমাদের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়বে, গুণগত মানও নিশ্চিত থাকবে
• আগামী সময়ে প্রমাণিত হবে, ভারত সব সময় বিশ্বে সব কিছুতেই নেতৃত্ব দিয়েছে
• এই সংস্কার অর্থনীতিকে আরও মজবুত করবে
• এই সংস্কার কর ব্যবস্থা, কৃষিকাজ-সহ সমস্ত ক্ষেত্রের জন্য়
• গত ৬ বছরে যে সব সংস্কার হয়েছে, তার জন্য় এই সঙ্কটের সময়ে ভারত অধিকতর শক্তিশালী
• কাল থেকে শুরু করে আগামী কয়েক দিন অর্থমন্ত্রী এই প্যাকেজের বিষয়ে ঘোষণা করবেন
• এই আর্থিক প্যাকেজ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের জন্য
• এই আর্থিক প্যাকেজ দেশের গরিব সাধারণ মানুষের জন্য
• ২০ লাখ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা, যা জিডিপির প্রায় ১০ শতাংশ
• কিছু দিন আগে যে আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা হয়েছে, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পদক্ষেপও কাজে এসেছে
• করোনা সঙ্কটের মোকাবিলা করতে এক বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা হয়েছে
• এই পাঁচটি ব্যবস্থাকে আরও মজবুত করতে হবে
• পঞ্চম: বাজার বা চাহিদা, আমাদের দেশে রয়েছে বিরাট বাজার, চাহিদা বাড়াতে যোগানও বাড়াতে হবে
• চতুর্থ: জনসংখ্যা, আমাদের বিরাট সংখ্যক জনসংখ্যা আমাদের সম্পদ
• তৃতীয়: সিস্টেম
• দ্বিতীয়: পরিকাঠামো
• প্রথম: অর্থনীতি, যা একটা সুদৃঢ় ভিতের উপর দাঁড়িয়ে থাকবে
• এই আত্মনির্ভরতা পাঁচটি স্তম্ভের উপর খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে
• আমরা ভারতকে স্বনির্ভর করে তুলব
• কিন্তু পরবর্তীকালে দেখেছি আমরা, কী ভাবে উঠে দাঁড়িয়েছে কচ্ছ
• সেই সময় কেউ ভাবেনি যে এই কচ্ছ আবার ঘুরে দাঁড়াবে
• কচ্ছের ভূমিকম্প দেখেছি আমি, চার দিকে শুধুই ধ্বংস আর ধ্বংস
• আমরা এটা করতে পারি এবং অবশ্যই করব
• আমাদের কাছে সেরা প্রতিভা রয়েছে, আমাদের গুণমান আরও উন্নত করব, যোগান আরও বাড়াব
• এর জবাব হচ্ছে, ১৩০ কোটি ভারতবাসীর আত্মনির্ভরতা
• কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কী ভাবে?
• সারা বিশ্বে এই বিশ্বাস তৈরি হয়েছে যে, ভারত বিশ্ববাসীর জন্য অনেক কিছু করতে পারে
• ভারতের ওষুধ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গিয়েছে, তার জন্য ভারতীয়দের প্রশংসাও হচ্ছে
• টিবি হোক বা পোলিও হোক, ভারতের প্রকল্পের প্রভাব সারা বিশ্বে পড়বেই
• এই ভারতে আত্মনির্ভর হয়, এক সুখী ও সমৃদ্ধ বিশ্বের ছবি উঠে আসে
• এটা সম্ভব হয়েছে ভারতের প্রতিজ্ঞার জোরে
• সেই ভারতই আজ প্রতিদিন ২ লক্ষ পিপিই এবং ২ লক্ষ মাস্ক তৈরি করছে
• একটাও এন-৯৫ মাস্ক ছিল না
• যখন ভারতে করোনাভাইরাস পাওয়া গিয়েছিল, তখনও একটাও পিপিই কিট ছিল না
• একটা উদাহরণ দিচ্ছি
• এই সময় ভারতের জন্য একটা সংবাদ, একটা সুযোগ নিয়ে আসছে
• রাষ্ট্র হিসেবে আমরা এক বিরাট সঙ্কটের মুখে দাঁড়িয়ে
• এই ভাইরাস থেকে এগনোর একটাই উপায়, আত্মনির্ভর ভারত
• আমাদের বাঁচতেও হবে, এগোতেও হবে
• আমাদের করোনা পরিস্থিতিকে দেখার সুযোগ হয়েছে
• কিন্তু হেরে যাওয়া, ভেঙে পড়া মানবতার অভ্যাস নয়
• মানবজাতির কাছে এ এক অভূতপূর্ব সঙ্কট
• এই রকম সঙ্কট আমরা আগে না কখনও দেখেছি, না শুনেছি
• জীবন বাঁচাতে সারা বিশ্ব এক জোট হয়েছে
• সারা বিশ্বে কোটি কোটি মানুষ এই সংকটের মোকাবিলা করছে
• একটা ভাইরাস সারা বিশ্বকে টালমাটাল করে দিয়েছে
• করোনার মোকাবিলা করতে চার মাস সময় কেটে গিয়েছে
• প্রিয় দেশবাসী, আপনাদের সবাইকে নমস্কার
আরও পড়ুন: রেড জোনকে তিন ভাগে ভেঙে লকডাউনের আলাদা পরিকল্পনা, বললেন মমতা
আরও পড়ুন: নতুন সংক্রমণ উহানে, শহরের কোটির বেশি লোকেরই করোনা পরীক্ষা করবে প্রশাসন