গুয়াহাটি: পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় রাস্তায় বার হচ্ছেন স্থানীয়রা। ছবি: পিটিআই।
পরিস্থিতি এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। তবে বিক্ষোভের আঁচ অনেকটাই স্তিমিত অসমে। রাজধানী গুয়াহাটিতে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত শিথিল করা হয়েছে কার্ফু। তবে নিরাপত্তার কারণে ইন্টারনেট ও ব্রডব্যান্ড পরিষেবা এখনও বন্ধ রাখা হয়েছে। শুক্রবারই অল অসম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (আসু) শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের আবেদন জানায়। আসুর উপদেষ্টা সমুজ্জ্বল ভট্টাচার্য বিক্ষোভকারীদের সংযত হওয়ার আহ্বান জানান। ফলে একটু একটু করে স্বাভাবিক হয়ে উঠছে পরিস্থিতি।
সিএবি-র প্রতিবাদে যে ভাবে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোতে হিংসা ছড়িয়ে পড়েছে সেই পরিস্থিতির দিকে নজর রেখে তাদের দেশের নাগরিকদের সতর্কবার্তা দিয়েছে আমেরিকা ও ব্রিটেন। এই মুহূর্তে ভারতের এই রাজ্যগুলোতে খুব প্রয়োজন না হলে যেতে নিষেধও করেছে দুই দেশ। ব্রিটেন যে অ্যাডভাইজরি জারি করেছে, তাতে বলা হয়েছে, সিএবি-র প্রতিবাদে ফুটছে ভারতের কিছু অংশ। হিংসার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে অসম ও ত্রিপুরায়। যদি ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোতে একান্তই যেতে হয়, তা হলে সে দেশের পর্যটকরা যেন গোটা পরিস্থিতির খবর নিয়ে যেন সেখানে যান। শুধু তাই নয়, স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশও মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ওই অ্যাডভাইজরিতে। একই রকম অ্যাডভাইজরি জারি করেছে আমেরিকাও। তবে অসম ভ্রমণে তাদের নাগরিকদের উপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আমেরিকা।
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে গত কয়েক দিন ধরে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে অসম, ত্রিপুরা-সহ উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলো। পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়ানক হয় অসম ও ত্রিপুরায়। গুয়াহাটিতে হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করেন সিএবি-র বিরুদ্ধে। রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় ভাঙচুর, যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া মতো ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি সামাল দিতে আধাসামরিক বাহিনী নামানো হয়। পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধে দুই বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয় বৃহস্পতিবার। কার্ফু জারি করা হয় গুয়াহাটিতে। কিন্তু তা উপেক্ষা করেই চলে আন্দোলন। তবে রাজ্য প্রশাসন সূত্রে খবর, শুক্রবার রাত থেকে রাজ্যে কোনও হিংসার ঘটনা ঘটেনি।
অসম পুলিশের ডিজি ভাস্করজ্যোতি মহন্ত শুক্রবার রাতে জানান, রাজ্যের হিংসা পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। নতুন করে হিংসা যাতে ছড়িয়ে না পড়ে এবং পরিস্থিতি যাতে আয়ত্তের বাইরে চলে না যায়, সে জন্য কড়া নজরদারি চালানো হচ্ছে রাজ্য জুড়ে। মহন্ত বলেন, “শান্তি ফিরিয়ে আনতে সর্বোত ভাবে চেষ্টা চালাচ্ছি আমরা। শুক্রবার রাত থেকে নতুন কোনও হিংসার পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তবে পরিস্থিতির দিকে কড়া নজর রাখা হচ্ছে। পুলিশ দিনরাত এক করে কাজ করে যাচ্ছে। খুব কঠিন সময়। তবে সেটাকে বাগে আনতে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
তাঁর দাবি, মানুষের উপর জোর করে কোনও বিধিনিষেধ আরোপ করছে না পুলিশ। সাধারণ মানুষ যাতে বাইরে বেরিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে পারে, সে কারণে লাগাম অনেকটাই আলগা করা হয়েছে। তবে সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেই ইন্টারনেট পরিষেবা স্বাভাবিক করা হবে বলে জানিয়েছেন মহন্ত। পাশাপাশি তাঁর হুঁশিয়ারি, যাঁরা হিংসায় উস্কানি দেবে তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। ইতিমধ্যেই অনেককে এই অভিযোগে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
অসম ছাড়াও ত্রিপুরা, মেঘালয়েও সিএবি-র বিরুদ্ধে আন্দোলন ছড়িয়ে প়ড়েছে। বাদ যায়নি পশ্চিমবঙ্গও। মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। পুলিশ-বিক্ষোভকারীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয় শুক্রবারেও। দিল্লিতেও জামিয়া-মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্বিদ্যালয়ের ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের খণ্ডযুদ্ধ হয়। অন্য দিকে, এ রাজ্যের উলুবেড়িয়া, বেলডাঙাতেও সিএবি-র প্রতিবাদে হিংসা ছড়িয়ে পড়ে। রেল ও সড়ক অবরোধ করা হয়। ভাঙচুর চালানো এবং আগুন ধরিয়ে দেওয়া মতো ঘটনা ঘটে। বহু ট্রেনে হামলা চালায় বিক্ষোভকারীরা।