One Nation One Election

‘এক দেশ এক ভোট’ নীতি রূপায়ণ কমিটির প্রধান কোবিন্দের কাছে নড্ডা, এগোবে লোকসভা নির্বাচন?

এক দেশ এক ভোট’ চালু করার জন্য প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বাধীন কমিটির সুপারিশ ১৮-২২ সেপ্টেম্বরে সংসদের বিশেষ অধিবেশনে পেশ করা হতে পারে বলে সরকারি সূত্রের খবর।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৩:৩৪
Share:

রামনাথ কোবিন্দ এবং জেপি নড্ডা। ছবি: পিটিআই।

কমিটি গড়ার পরেই শুরু হয়ে গেল ‘তৎপরতা’। ‘এক দেশ এক ভোট’ (ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন) নীতি কার্যকর করার লক্ষ্যে নরেন্দ্র মোদী সরকারের গড়া কমিটির প্রধান তথা প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে শুক্রবার সাক্ষাৎ করলেন বিজেপি সভাপতি জেপি নড্ডা। যা দেখে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ সংশয় প্রকাশ করেছেন পাঁচ রাজ্যের আসন্ন বিধানসভা ভোট হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে। সেই সঙ্গে আলোচনায় চলে আসছে লোকসভা ভোট এগিয়ে আনার প্রসঙ্গও।

Advertisement

বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে পাঁচ দিনের জন্য সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকার কথা ঘোষণা করেছেন। সেখানে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির পাশাপাশি ‘এক দেশ এক ভোট’ সংক্রান্ত বিল পাশ করানো হতে পারে বলে জল্পনা রয়েছে। গত বাদল অধিবেশনে রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুনরাম মেঘওয়াল জানিয়েছিলেন, ‘এক দেশ এক ভোট’ চালু করার জন্য আইন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছে কেন্দ্র। এই পরিস্থিতিতে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বাধীন কমিটির সুপারিশ ১৮-২২ সেপ্টেম্বরের বিশেষ অধিবেশনে পেশ করা হতে পারে বলে সরকারি সূত্রের খবর।

বস্তুত, কমিটি গড়ার পরেই কোবিন্দের বাড়িতে বিজেপি সভাপতির হাজির হওয়ার ঘটনা শাসকদলের ‘তড়িঘড়ির’ ইঙ্গিতবাহী বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, আলোচনার ভিত্তিতে ‘এক দেশ এক ভোট’ নীতি কার্যকরের দিশা খুঁজতে শুক্রবারই প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি কোবিন্দের নেতৃত্বে কমিটি গড়েছে মোদী সরকার। বিশেষ অধিবেশনে ওই কমিটির সুপারিশ পেশ করে ‘এক দেশ এক ভোট’ বিল পাশ করিয়ে নিলে বিরোধী জোট ‘ঘর গুছোতে’ বিপাকে পড়বে বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের ধারণা। তাঁদের মতে বিজেপি তাই এ ক্ষেত্রে ‘দ্রুততার কৌশল’ নিয়েছে।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে লোকসভা-বিধানসভা ভোট এক সঙ্গে করার উদ্যোগের সমালোচনায় সরব হয়েছে বিরোধীরা। মুম্বইয়ে ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকে যোগ দিতে গিয়ে সিপিআই সাংসদ বিনয় বিশ্বম শুক্রবার বলেন, ‘‘কোনও অবস্থাতেই আমরা ‘এক দেশ এক ভোট’ পরিকল্পনা সমর্থন করব না। মোদী সরকারের এই পদক্ষেপ ভারতীয় বহুত্ববাদী চেতনার পরিপন্থী।’’

যদিও লোকসভা ভোটের সঙ্গেই সব রাজ্যের বিধানসভা ভোট সেরে ফেলার পক্ষে মোদী সরকারের যুক্তি হল, এতে নির্বাচনের খরচ কমবে। একটি ভোটার তালিকাতেই দু’টি নির্বাচন হওয়ায় সরকারি কর্মীদের তালিকা তৈরির কাজের চাপ কমবে। ভোটের আদর্শ আচরণ বিধির জন্য বার বার সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ থমকে থাকবে না। নীতি আয়োগ, আইন কমিশন, নির্বাচন কমিশনও এই ভাবনাকে নীতিগত সমর্থন জানিয়েছে বলে কেন্দ্রের দাবি। প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে প্রথম বার প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার পরেই মোদী ‘এক দেশ এক ভোট’ তত্ত্ব প্রকাশ্যে এনেছিলেন।

যদিও বিরোধী দলগুলি গোড়া থেকেই ‘এক দেশ এক ভোট’ পদ্ধতির সমালোচনায় মুখর। মুম্বইয়ে ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধী নেতারা। তাঁদের মতে, এই নীতি নিয়ে মোদী সরকার ঘুরপথে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ধাঁচের ব্যবস্থা চালু করতে চাইছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং সংসদীয় গণতান্ত্রিক ভাবনার পরিপন্থী বলেও বিরোধী নেতৃত্বের অভিযোগ। বিশেষত বিজেপি-বিরোধী আঞ্চলিক দলগুলির আশঙ্কা, ‘এক দেশ এক ভোট’ নীতি কার্যকর হলে লোকসভার ‘ঢেউয়ে’ বিধানসভাগুলি ‘ভেসে যাবে’। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয়, সাংসদ এবং বিধায়ক নির্বাচনের ক্ষেত্রে যেটুকু বৈচিত্রের সম্ভাবনা রয়েছে, বিজেপির আগ্রাসী প্রচারের মুখে তা ভেঙে পড়বে। ‘এক ভোট’ ব্যবস্থা চালুর পরে কেন্দ্রে বা কোনও রাজ্যে পাঁচ বছরের আগেই নির্বাচিত সরকার পড়ে গেলে কী হবে, প্রশ্ন রয়েছে তা নিয়েও।

এরই পাশাপাশি রাজনৈতিক বিশ্লষকদের একাংশ মনে করছেন, সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক কৌশল থেকেই ‘এক দেশ এক ভোট’ পদ্ধতি কার্যকর করতে চাইছে বিজেপি। তাদের উদ্দেশ্য, শুধু লোকসভা ভোট হলে বিরোধী দলগুলির পক্ষে আসন সমঝোতা করা সহজ হবে। কিন্তু একই সঙ্গে বিধানসভা ভোট জুড়ে দিতে পারলে কংগ্রেসের সঙ্গে সহযোগী আঞ্চলিক দলগুলির বিরোধ অনিবার্য। বিরোধীদের একাংশের আশঙ্কা, পরবর্তী পর্যায়ে এই নীতিতে হেঁটে রাজ্য নির্বাচন কমিশনগুলিকে কার্যত ক্ষমতাহীন করে দিয়ে পঞ্চায়েত-পুরসভা ভোটকেও এই প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ঘটনাচক্রে, সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপ সংক্রান্ত মামলায় ধাপে ধাপে উপত্যকার পঞ্চায়েত থেকে বিধানসভার ভোটের আয়োজনের কথা বলেছে মোদী সরকার।

‘এক দেশ এক ভোট’ পদ্ধতি করতে সংবিধানের বেশ কিছু অনুচ্ছেদ বদলের প্রয়োজন হতে পারে বলে সরকারি সূত্রের খবর। ৮৩ নম্বর অনুচ্ছেদে সংসদের দুই কক্ষের মেয়াদের কথা বলা হয়েছে। ৮৫ নম্বর অনুচ্ছেদে লোকসভা ভেঙে দেওয়ার নিয়ম নথিবদ্ধ রয়েছে। ১৭২ নম্বরে রয়েছে রাজ্য বিধানসভাগুলির মেয়াদের কথা। ভারতীয় সংবিধানের ১৭৪ নম্বর অনুচ্ছেদে বিধানসভা ভেঙে দেওয়ার নিয়ম নথিবদ্ধ রয়েছে। এ ছাড়া ৩৫৬ নম্বর ধারায় রাষ্ট্রপতি শাসন জারি সংক্রান্ত বিধি এবং ১৯৫১ সালের ভারতীয় জনপ্রতিনিধিত্ব আইনও কিছু সংশোধন করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি কোবিন্দের নেতৃত্বাধীন কমিটি সেই আইন সংশোধনের দিশাও খুঁজবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement