RG Kar Case Verdict

‘আমাকে ধাক্কা দেবেন না...’, আদালতে সঞ্জয়

প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার থেকে সঞ্জয়কে এ দিন মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে শিয়ালদহের অতিরিক্ত দায়রা আদালতে নিয়ে হাজির করে পুলিশ। কার্যত গ্রিন করিডর করে তাকে আনা হয়।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫ ০৯:০৮
Share:

আরজি কর-কাণ্ডে শনিবার শিয়ালদহ আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন সঞ্জয় রায়। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

কখনও আকুতি। কখনও রাগ। কখনও বিচারক তথা উপস্থিত সকলের সামনে আত্মপক্ষ সমর্থনে প্রভাব তৈরির চেষ্টা! আদালত কক্ষে শনিবার দুপুরে এমনই ছিল আর জি কর খুন এবং ধর্ষণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া একমাত্র ধৃত সঞ্জয় রায়ের ছ’মিনিটের উপস্থিতি। নিজেকে নির্দোষ হিসাবে দাবি করার পাশাপাশিই এক সময়ে আদালতে হাজির সকলের দিকে ঘুরে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমাকে শুধু বলা হচ্ছে, তুমি এই দিন সব বলবে, ওই দিন সব বলবে। কিন্তু কখনওই কিছু বলতে দেওয়া হচ্ছে না।’’ এর পরে রীতিমতো ধাক্কা দিয়ে তাকে বার করে নিয়ে যাওয়া পুলিশ কর্মীদের উদ্দেশ করে সঞ্জয় বলে, ‘‘আমাকে ধাক্কা দেবে না বলে দিচ্ছি। ভাল হবে না।’’

Advertisement

প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার থেকে সঞ্জয়কে এ দিন মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে শিয়ালদহের অতিরিক্ত দায়রা আদালতে নিয়ে হাজির করে পুলিশ। কার্যত গ্রিন করিডর করে তাকে আনা হয়। বিচারক তাকে কাঠগড়ায় হাজির করার নির্দেশ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কার্যত নীরব হয়ে যায় আদালত কক্ষ। কক্ষের এক দিকের রাস্তা তখন পুলিশকর্মীরা ঘিরে দিয়েছেন। হাতে হাত ধরা সেই পুলিশি ঘেরাটোপের মধ্যে দিয়ে কাঠগড়ায় গিয়েদাঁড়ায় সঞ্জয়।

উচ্চতা মেরেকেটে সাড়ে পাঁচ ফুট। দোহারা চেহারা। ছোট করে ছাঁটা মাথার চুল। পরনে ধূসর রঙা ট্রাউজার্স আর ছাইরঙা শীত পোশাক। প্রথমে বিচারকের দিকে তাকিয়ে নীরবে সবটুকু শোনে সঞ্জয়। বিচারক তাকে জানান, কী অভিযোগে আর কোন কোন তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। এর পরে বিচারক জানতে চান, ‘‘তোমার কিছু বলার আছে?’’

Advertisement

উত্তরে প্রথমেই সঞ্জয় বলে, ‘‘আমি কিছু করিনি স্যর। আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।’’ বিচারক বলেন, ‘‘এখন আর এ সব বলে কী হবে? সব তো শোনা হয়েছে...!’’ বিচারককে থামিয়ে দিয়ে সঞ্জয় দাবি করতেশুরু করে, তাকে চক্রান্ত করে ফাঁসানো হয়েছে। এই সময়েই সে জানায়, তার গলায় রদ্রাক্ষের মালা ছিল। সে যদি ওই সেমিনার রুমের ঘটনাস্থলেযেত, তা হলে ধস্তাধস্তিতে রুদ্রাক্ষের মালা ছিঁড়ে পড়ে যেত। কিন্তু তা হয়নি। পরে পুলিশ তার গলা থেকে সেইমালা খুলে নিয়েছে। কিন্তু কোনও কাগজেই তার উল্লেখ করা হয়নি। এই সময়ে সঞ্জয় বিচারকের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘‘আপনিওসবটাই বুঝতে পারছেন স্যর। আমি গরিব বলে আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।’’ উত্তেজিত ভাবে সঞ্জয় দাবি করতে থাকে, ‘‘আমি তো কিছুকরিনি। যারা করেছে, তাদের কেন ছাড়া হয়েছে?’’ পুলিশকে বিচারক নির্দেশ দেন, সঞ্জয়কে যেন সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই সঙ্গেই বলেন, ‘‘সোমবার আপনার সবকথা শুনব।’’

কাঠগড়ায় উঠে এর পরে পুলিশ তাকে টেনে নামানোর চেষ্টা করে। ঘরভর্তি লোকের মধ্যে শোরগোল শুরু হয়। তাদের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে সঞ্জয় বলতে শুরুকরে, ‘‘আমাকে শুধু বলা হচ্ছে, তুমি এই দিন সব বলবে, ওই দিন সব বলবে। কিন্তু কখনওই কিছু বলতে দেওয়া হচ্ছে না।’’ সঞ্জয়ের আইনজীবীদের বিচারক অনুরোধ করেন, যাতে তাকে শান্ত করার চেষ্টা করা হয়। সঞ্জয়ের পক্ষের এক আইনজীবীতাকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। তখনই পুলিশ কাঠগড়া থেকে টেনে নামায় সঞ্জয়কে। এক ওসি পদমর্যাদার অফিসারকে উদ্দেশ করে সঞ্জয় বলে, ‘‘আপনারাই তো বলেছিলেন, সব বলা যাবে। এক জন আইপিএসও সব জানেন।’’ পুলিশ ধাক্কা মারতে মারতে বার করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে সঞ্জয়কে। চোখ বন্ধ করে দু’বার দাঁড়িয়ে পড়ে সঞ্জয়। কোনও মতে রাগ সামলে নেওয়ার কায়দায় মাথা ঝাঁকিয়ে বলে, ‘‘আমাকে ধাক্কা দেবেন না বলে দিচ্ছি। ভালহবে না।’’

(ধর্ষণ বা শ্লীলতাহানির ঘটনায় যত ক্ষণ না অভিযুক্তকে ‘দোষী’ সাব্যস্ত করা হচ্ছে, তত ক্ষণ তাঁর নাম, পরিচয় প্রকাশে আইনি বাধা থাকে। আনন্দবাজার অনলাইন সেই নিয়ম মেনেই আরজি কর পর্বের প্রথম দিন থেকে অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের নাম বা ছবি প্রকাশ করেনি। শনিবার আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করায় আমরা তাঁর নাম এবং ছবি প্রকাশ করা শুরু করছি।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement