অলঙ্করণ: শৌভিক দেবনাথ।
নতুন শুরু হওয়া গোষ্ঠীহিংসায় গত ৭২ ঘণ্টায় আট জনের মৃত্যু হয়েছে মণিপুরে। গুরুতর আহতের সংখ্যা ১৮। চূড়াচাঁদপুর এবং বিষ্ণুপুরের মতো অশান্ত জেলাগুলিতে নতুন করে নিরাপত্তা নজরদারি বাড়ানো হলেও হিংসায় ছেদ পড়েনি বলে অভিযোগ। সশস্ত্র মেইতেই এবং কুকিদের গুলির লড়াইয়ের খবর মিলেছে শুক্রবার সকালেও।
বুধবার ভোরে দুই জেলার সীমানাবর্তী খৈরেন্টক এলাকায় মেইতেই এবং কুকি জনগোষ্ঠীর গুলির লড়াই বাধে। তাতে দু’জনের মৃত্যু হয়। অভিযোগ, মায়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে জঙ্গিরাও হামলায় যোগ দিয়েছিল। এর পর থেকেই বিষ্ণুপুর এবং চূড়াচাঁদপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে হিংসার খবর আসতে শুরু করে। চূড়াচাঁদপুর এবং বিষ্ণুপুর সীমানায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহলদারি চালিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। তবে বেশ কিছু আগ্নেয়ান্ত্র এবং বিস্ফোরক উদ্ধার হয়েছে।
বৃহস্পতিবার চূড়াচাঁদপুর জেলার চিংফেই এবং খৌসাবুং থেকে গুলির লড়াইয়ের খবর আসে। ওই দুই এলাকায় থেকে প্রাণভয়ে বেশ কিছু গ্রামবাসী পালিয়ে গিয়েছেন বলেও অভিযোগ মিলেছে। এই পরিস্থিতিতে মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহ বলেন, ‘‘পরিস্থিতি সঙ্কটজনক। আমরা সব সম্প্রদায়ের কাছে শান্তির আবেদন জানাচ্ছি।’’ হিংসা নিয়ন্ত্রণের জন্য রাজ্য পুলিশের তরফে বিশেষ ‘কন্ট্রোল রুম’ খোলা হয়েছে বলে জানান তিনি। পুলিশ সূত্রের খবর, নিহতদের মধ্যে রয়েছে জনপ্রিয় জনজাতি গীতিকার এলএস মাংবোই।
গত ৩ মে জনজাতি ছাত্র সংগঠন ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ মণিপুর’ (এটিএসইউএম)-এর কর্মসূচি ঘিরে অশান্তির সূত্রপাত হয়েছিল উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ওই রাজ্যে। মণিপুর হাই কোর্ট মেইতেইদের তফসিলি জনজাতির মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারকে বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছিল। এর পরেই জনজাতি সংগঠনগুলি তার বিরোধিতায় পথে নামে। আর সেই ঘটনা থেকেই সংঘাতের সূচনা হয় সেখানে।
মণিপুরের আদি বাসিন্দা হিন্দু ধর্মাবলম্বী মেইতেই জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কুকি, জ়ো-সহ কয়েকটি তফসিলি জনজাতি সম্প্রদায়ের (যাদের অধিকাংশই খ্রিস্টান) সংঘর্ষ ঠেকাতে গত ৬ মে মণিপুরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। নামানো হয় সেনা এবং অসম রাইফেলস বাহিনীকে। সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকির ভার দেওয়া হয় সিআরপিএফের প্রাক্তন প্রধান কুলদীপ সিংহকে। তাঁর অধীনে এডিজিপি (ইন্টেলিজেন্স) আশুতোষ সিংহকে সমগ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থার অপারেশনাল কমান্ডারের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু চার মাস কেটে গেলেও হিংসা থামেনি। এখনও পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা প্রায় দু’শো। ঘরছাড়া ৬০ হাজারেরও বেশি মানুষ।