Waqf Board Amendment Bill

ওয়াকফ সংশোধনী বিল নিয়ে মুসলিমদের অভিযোগ শুনবে বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চা! নজর বিরোধী মতেও

ওয়াকফ সংশোধনী বিল সম্পর্কে দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মতামত সংগ্রহ করবে বিজেপির সাত সদস্যের একটি দল। তাতে থাকবেন রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারপার্সনও।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:১২
Share:

সংসদের চিত্র। — ফাইল চিত্র।

ওয়াকফ বিলের বিষয়ে মুসলিমদের পরামর্শ চাইবে বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চা! বিলের খসড়া পরিমার্জনের জন্য সদ্য গড়া সংসদীয় কমিটির কাছে পেশ করার আগে বিলটি সংস্কারের বিষয়ে পক্ষ ও বিপক্ষ মত শুনবে তারা।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানাচ্ছে, ওয়াকফ সংশোধনী বিল সম্পর্কে দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মতামত সংগ্রহ করবে বিজেপির সাত সদস্যের একটি দল। তাতে থাকবেন রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারপার্সনও। বিজেপির জনৈক নেতা বলেছেন, ‘‘আমরা কমিটির কাছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরব। যদি বিলের কোনও সংশোধনের বিষয়ে তাঁদের আপত্তি থাকে, তা-ও কমিটিকে জানাব আমরা। কিন্তু আমরা নিশ্চিত যে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বেশির ভাগ মানুষই ওয়াকফ বোর্ডগুলিতে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন।’’

বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চা এর পর জগদম্বিকা পালের নেতৃত্বাধীন সংসদীয় কমিটির কাছে সেই রিপোর্ট পেশ করবে। রিপোর্ট পেশ করা হবে বিজেপি নেতৃত্বের কাছেও। আপাতত সাত সদস্যের এই দলে রয়েছেন উত্তরাখণ্ডের সাদাব শামস, মধ্যপ্রদেশের সানওয়ার পটেল এবং গুজরাতের মোহসিন লোখন্ডওয়ালা। এঁরা নিজ নিজ রাজ্যে ওয়াকফ বোর্ডের নেতৃত্বে রয়েছেন। এ ছাড়া রয়েছেন হরিয়ানা ওয়াকফ বোর্ডের প্রধান জাকির হুসেনও।

Advertisement

ওয়াকফ সংশোধনী বিলের বিরোধিতা প্রসঙ্গে মুসলিম সংগঠনগুলির যুক্তি ছিল, ওয়াকফ বোর্ডের বিতর্কিত জায়গাগুলি বিভিন্ন শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত হওয়ায় সে সব সম্পত্তি দখলের উদ্দেশ্যেই ওই বিল আনছে কেন্দ্র। জমিয়তে ইসলামি হিন্দ এবং অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের মতো প্রধান মুসলিম সংগঠনগুলির মতে, গেরুয়া শিবির দীর্ঘ সময় ধরেই দিল্লি-সহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ওয়াকফ সম্পত্তি দখল করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। সেই কারণেই তড়িঘড়ি পাশ করাতে চাইছে সংশোধনী বিল। যদিও কেন্দ্রের যুক্তি ছিল, খোদ মুসলিম সমাজের গরিব এবং মহিলারা নিজেরাই নাকি এত দিন ওয়াকফ আইন সংস্কারের দাবি জানাচ্ছিলেন। তার পরেও থামেনি সমালোচনা। এ বার সেই বিতর্কে রাশ টানতেই সংখ্যালঘুদের মতামত জানতে চাইছে কেন্দ্র। ইতিমধ্যেই ওয়াকফ সংশোধনী বিলের খসড়া পরিমার্জনের জন্য গড়া হয়েছে যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি)। জেপিসির চেয়ারম্যান করা হয়েছে বিজেপিরই লোকসভা সাংসদ জগদম্বিকা পালকে।

গত ৮ অগস্ট বিরোধীদের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও লোকসভায় ওয়াকফ সংশোধনী বিল পেশ করেন কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু মন্ত্রী কিরেন রিজিজু। ওয়াকফ প্রসঙ্গ উত্থাপন করা মাত্রই সরব হন বিরোধীরা। তাঁদের দাবি ছিল, হিন্দু-মুসলিম বিভাজনের রাজনীতি উস্কে দিতেই ওই বিতর্কিত বিল পেশের পরিকল্পনা। বিলটিকে ‘অসাংবিধানিক’ এবং ‘মুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপকারী’ বলেও সমালোচনা শুরু হয় বিভিন্ন মহলে। দীর্ঘ বিতর্কের পর শেষমেশ ঐকমত্যের লক্ষ্যে বিলটি যৌথ সংসদীয় কমিটির (জেপিসি)-র কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় নরেন্দ্র মোদী সরকার।

প্রসঙ্গত, প্রস্তাবিত সংশোধনটি গ্রাহ্য হলে এর পর থেকে আইনটির নতুন নাম হবে ‘ইউনিফায়েড ওয়াকফ ম্যানেজমেন্ট, এমপাওয়ারমেন্ট, এফিশিয়েন্সি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাক্ট’। এই বিলে পুরনো আইনটিতে ৪৪টি সংশোধন আনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে সংশোধনের মূল লক্ষ্য হল একটি কেন্দ্রীয় পোর্টালের মাধ্যমে ওয়াকফ সম্পত্তির নথিভুক্তিকরণ নিয়ন্ত্রণ করা। এ ছাড়াও প্রস্তাবিত অন্যান্য সংশোধনগুলির মধ্যে রয়েছে একটি কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কাউন্সিলের পাশাপাশি প্রতি রাজ্যে ওয়াকফ বোর্ড গঠন, যেখানে মুসলিম মহিলা এবং অমুসলিমদের প্রতিনিধিরা থাকবেন।

১৯৫৪ সালে প্রথম ওয়াকফ আইন পাশ হয়েছিল। ১৯৯৫ সালে ওয়াকফ আইনে সংশোধনী এনে ওয়াকফ বোর্ডের হাতে সব ক্ষমতা তুলে দেওয়া হয়। তার পর থেকেই বার বার প্রশ্ন উঠেছে বোর্ডের একচ্ছত্র অধিকার নিয়ে। ওয়াকফ আইনের ৪০ নম্বর ধারা অনুযায়ী, যে কোনও সম্পত্তিকে ওয়াকফ হিসাবে ঘোষণার অধিকার এত দিন ছিল ওয়াকফ বোর্ডের হাতেই। ফলে ওয়াকফ বোর্ডের বিরুদ্ধে বার বার বহু গরিব মুসলিমের সম্পত্তি, অন্য ধর্মাবলম্বীদের ব্যক্তির সম্পত্তি অধিগ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। নতুন সংশোধনীতে ওয়াকফ বোর্ডের সেই একচ্ছত্র অধিকার কেড়ে নিয়ে কোনও সম্পত্তি ওয়াকফ কি না, সেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হবে জেলাশাসক বা সমপদমর্যাদার কোনও আধিকারিকের হাতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement