বিপর্যস্ত ওয়েনাড়ে চলছে উদ্ধারকাজ। — ফাইল চিত্র।
ধসবিধ্বস্ত ওয়েনাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকায় নেই কোনও প্রাণের স্পন্দন। কোথাও কোথাও বদলে গিয়েছে ভূমিরূপটাই! সে বদল এমনই যে, আর সে সব জায়গা মানুষের বসবাসের উপযোগী নেই! এ বার এমনটাই জানিয়ে দিল কেরল সরকার।
কেরলের ওয়েনাড়ে ভূমিধসের পর পেরিয়ে গিয়েছে এক মাস। এখনও ছন্দে ফেরেনি ধস কবলিত পাহাড়ি এলাকার জনজীবন। উদ্ধারকাজ শেষের মুখে। সরকারি হিসাবে প্রাণ হারিয়েছেন ২৮০ জন। সর্বস্বান্ত হাজার হাজার মানুষ। এখনও নিখোঁজ ১৩০ জন। কিন্তু অন্যান্য সূত্র বলছে, মৃতের সংখ্যা ৪০০ পেরিয়েছে। ঘটনার পর দিন থেকেই মলপ্পুরম জেলার চালিয়ার নদীতে ভাসতে দেখা গিয়েছে একের পর এক মৃতদেহ। ধসের জেরে গৃহহীন হয়ে পড়া দশ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরে। ধস কবলিতদের সঙ্গে দেখা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও।
গত ৩০ জুলাই ভোররাতে যখন ঘুমে আচ্ছন্ন গোটা গ্রাম, তখনই হঠাৎ প্রবল শব্দে মাটি কেঁপে ওঠে ওয়েনাড়ে। মুহূর্তেই মাটির তলায় চাপা পড়ে যায় গ্রামের পর গ্রাম। এর পরের ক’দিন ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে সরিয়ে প্রাণের স্পন্দন খুঁজে গিয়েছেন উদ্ধারকারীরা। সাড়া মেলেনি। কোথাও আবার ভূমিধসের পর আমূল বদলে গিয়েছে ভূমিরূপও। চালিয়ার নদীর উপত্যকার দুর্গম অঞ্চল হয়েছে দুর্গমতর। সেই সব এলাকায় আর কোনও দিনই গড়ে উঠবে না মানুষের বসতি। সেই জায়গাগুলিকে শীঘ্রই ‘বসতি শূন্য’ ঘোষণা করতে চলেছে কেরল সরকার।
ধসে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চুড়ালমালা, মুন্ডাক্কাই এবং পুঞ্চিরিমত্তোম গ্রাম। ওই তিন গ্রামে উদ্ধারকাজ চালানো দলগুলি জানাচ্ছে, পুঞ্চিরিমত্তোম এবং চুড়ালমালা আর কোনও দিনই মানুষের বসবাসের যোগ্য হয়ে উঠতে পারবে না। গতিপথ বদলে জনপদের দিকে এগিয়ে এসেছে গায়ত্রী নদীও। তার দু’পাড়ে এখনও স্তূপাকার হয়ে রয়েছে উপড়ানো গাছ, কাদামাটি, বিশাল বিশাল পাথরের চাঁই। আসার পথে তারা ধুয়েমুছে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে ঘরবাড়ি, মন্দির কিংবা স্কুল। আর যেখানে বদলায়নি ভূমিরূপ, সে সব জায়গাতেও এখনই স্বাভাবিক হচ্ছে না জনজীবন। বসতবাড়ি চাপা পড়েছে মাটির তলায়। সব খুইয়ে পথে বসেছেন বহু মানুষ। অধিকাংশই আর ফিরতেও চান না সে ধ্বংসস্তূপে। আপাতত জনহীন সে সব গ্রাম দাঁড়িয়ে থাকবে একাই।