— প্রতীকী চিত্র।
সরকারি স্কুলে কেজি (কিন্ডার গার্টেন) থেকে পিজি (পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন) পর্যন্ত নিখরচায় পড়তে পারবেন গরিব পড়ুয়ারা। পিছিয়ে থাকা সমাজের পড়ুয়াদের মাসিক হাজার টাকার বৃত্তি, চাকরির পরীক্ষার্থীদের ১৫ হাজার টাকা এককালীন সাহায্য, অটোচালকদের বিমা— রাজধানীর মন জিততে আজ দ্বিতীয় সঙ্কল্প পত্রে খয়রাতির বন্যা ছোটালেন বিজেপি নেতৃত্ব। যা দেখে আম আদমি পার্টি (আপ)-র কটাক্ষ, এখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী খয়রাতির রাজনীতি নিয়ে নীরব কেন! বিজেপি যখন দিল্লি-দখলের জন্য খয়রাতির উপর ভরসা করছে, তখন মোদী সরকারের আর্থিক নীতির সমালোচনা করে লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, ‘‘প্রকৃত উন্নয়ন হল সেটাই যেখানে সকলের উন্নয়ন হয়।’’
গত সপ্তাহে বিজেপি প্রথম সঙ্কল্প পত্রে মহিলাদের জন্য একাধিক আর্থিক সুবিধার কথা ঘোষণা করেছিল। এ যাত্রায় গেরুয়া শিবিরের লক্ষ্য, ছাত্র-যুবদের মন জয়। আজ সাংসদ অনুরাগ ঠাকুর বিজেপি দফতরে দ্বিতীয় সঙ্কল্প পত্র প্রকাশ করেন। যাতে আপের ধাঁচে সরকারি স্কুল ও কলেজে কেজি-পিজি পর্যন্ত পড়ুয়াদের বিনামূল্যে পড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিজেপি। তফসিলি জাতির পলিটেকনিক পড়ুয়াদের ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বসার প্রস্তুতি হিসেবে প্রতি মাসে অম্বেডকর বৃত্তি প্রকল্পে হাজার টাকা করে সাহায্যের প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে। দিল্লিতে বিভিন্ন সর্বভারতীয় পরীক্ষার জন্য পড়তে আসা পড়ুয়াদের এককালীন ১৫ হাজার টাকা, দু’বার বাড়ি যাওয়ার টিকিটের খরচ ও পরীক্ষার আবেদনের টাকা দিয়েও সাহায্য করা হবে বলে জানিয়েছে বিজেপি। আপ নেতা সন্দীপ পাঠকের কটাক্ষ, ‘‘সব ভুয়ো প্রতিশ্রুতি। এখানে যারা সর্বভারতীয় পরীক্ষার জন্য পড়তে আসেন তাঁরা সকলেই অন্য রাজ্যের ভোটার। দিল্লির ভোটার নয়, এই যুক্তিতে তখন অধিকাংশকেই ওই সাহায্য থেকে বাদ দেওয়া হবে। গত কয়েক বছরে তফসিলিদের অর্থ সাহায্যের পরিমাণ ক্রমশ কমেছে। ফলে সরকার নতুন করে বৃত্তি দেবে এই যুক্তি আদৌ বিশ্বাসযোগ্য নয়।’’
দিল্লিতে আপের শক্ত খুঁটি হলেন অটোচালকেরা। গোড়া থেকেই ওই অংশের কার্যত নিঃশর্ত সমর্থন পেয়ে এসেছেন অরবিন্দ কেজরীওয়াল। তাতে ফাটল ধরাতে আজ অটোচালকদের জন্য ১০ লক্ষ টাকার জীবনবিমা ও পাঁচ লক্ষ টাকার দুর্ঘটনাজনিত বিমার ঘোষণা করেছে বিজেপি। অটোচালকদের সমস্যা খতিয়ে দেখতে ক্ষমতায় এলে একটি বোর্ড গঠনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। বৃত্তি ঘোষণা করা হয়েছে অটোচালকদের ছেলেমেয়েদের জন্যও। একই ধাঁচের আর্থিক সাহায্য ও বিমার ঘোষণা করা হয়েছে বাড়িতে কাজ করেন এমন মহিলা, চালক ও মালিদের জন্য। বৃত্তি সুযোগ পাবেন তাঁদের সন্তানেরাও। এ ছাড়া দিল্লিতে যে চার লক্ষ হকার ফুটপাথে বসে ব্যবসা করেন, তাঁদের কোনও ধরনের গ্যারান্টার ছাড়াই ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে সঙ্কল্প পত্রে।
বিজেপির দু’টি ইস্তাহারে যে ঘোষণা করা হয়েছে তাতে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের পরিবর্তে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে খয়রাতির রাজনীতিকে। এ ক্ষেত্রে অন্যান্য দলের মতোই নির্বাচনে বিজেপি অর্থের বিনিময়ে মানুষের ভরসা জিততে চেয়েছে বলেই মনে করছেন রাজনীতিকেরা। অথচ, অতীতে ওই খয়রাতির নীতির প্রকাশ্যে সমালোচনা করতে দেখা গিয়েছে মোদীকে। এ নিয়ে আজ আপ আহ্বায়ক কেজরীওয়াল বলেন, ‘‘প্রতিশ্রুতি থেকে স্পষ্ট এখন আমাদের শিক্ষা মডেলকেই বিজেপি বেছে নিচ্ছে। কিন্তু বিজেপির উদ্দেশ্যে অসৎ। বিজেপি ক্ষমতায় এলে বিনামূল্যে শিক্ষা, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য পরিষেবার সুযোগ, মহিলাদের বিনামূল্যে বাসে ভ্রমণ সব বন্ধ করে দেবে। তাই বিজেপির আসল উদ্দেশ্য বুঝতে হবে দিল্লিবাসীকে।’’
মোদীর দল যখন দিল্লি-জয়ে খয়রাতিতে আস্থা রাখছে, তখন কেন্দ্রের আর্থিক নীতি নিয়ে সরব রাহুল প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘ব্যবসার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ হল, একটি স্বচ্ছ কর কাঠামো এবং শ্রমজীবীদের আয় বৃদ্ধি। মোদী সরকারের উন্নয়মমুখী ভারতের প্রকৃত সত্য হল, আপনার কঠোর পরিশ্রম, কিন্তু লাভ কার? আপনার রক্ত জল করা পরিশ্রমে দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরছে কিন্তু আপনি কি যোগত্যার ভিত্তিতে পারিশ্রমিক পাচ্ছেন?’’