শ্রীনগরে বাহিনীকে রুখতে দিনরাত পাহারা

জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা লোপের পরে বড় বিক্ষোভের সাক্ষী থেকেছে সৌরা। বিদেশি সংবাদমাধ্যম দাবি করে, প্রায় ১০ হাজার মানুষের জমায়েত হয়েছিল।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শ্রীনগর শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৯ ০৩:০৭
Share:

ছবি: এএফপি।

প্রায় এক সপ্তাহ ধরে শ্রীনগরের সৌরা এলাকায় পালা করে পাহারা দিচ্ছেন স্থানীয় যুবকেরা। সৌরায় আধাসেনাকে ঢুকতে দিতে রাজি নন তাঁরা।

Advertisement

জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা লোপের পরে বড় বিক্ষোভের সাক্ষী থেকেছে সৌরা। বিদেশি সংবাদমাধ্যম দাবি করে, প্রায় ১০ হাজার মানুষের জমায়েত হয়েছিল। ভারত সরকার সেই খবরকে ‘ভুয়ো খবর’ বলে উড়িয়ে দেয়। পরে অবশ্য ১০ হাজার মানুষের জমায়েতের কথা না মানলেও সৌরায় বিক্ষোভের খবর মেনে নিয়েছে দিল্লি।

সৌরায় ঢোকার প্রায় এক ডজন রাস্তার মুখে ইট, কাঠ দিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করেছেন স্থানীয়েরা। যঁারা পাহারা দিচ্ছেন তাঁদের মধ্যে এক জন পঁচিশের ইজাজ। বললেন, ‘‘আমাদের কথা শোনার কেউ নেই। বিশ্ব যদি আমাদের কথা না শোনে তাহলে আমরা কী করব? বন্দুক তুলে নেব?’’

Advertisement

সৌরায় থাকেন প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। ক্রমশ দিল্লি-বিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্র হয়ে উঠছে শ্রীনগরের এই এলাকা। ইজাজ বললেন, ‘‘মনে হয় যেন আমরা নিয়ন্ত্রণরেখা পাহারা দিচ্ছি।’’

শ্রীনগরে এখনও কড়া নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিছু এলাকায় ল্যান্ডলাইন চালু হলেও সৌরায় হয়নি। কিন্তু যোগাযোগের অন্য উপায় খুঁজে নিয়েছেন সৌরার বাসিন্দারা। বাহিনীকে দেখলেই স্থানীয় কোনও মসজিদে গিয়ে ধর্মীয় গান চালিয়ে মানুষকে ‘বেআইনি দখলদারি’-র বিরুদ্ধে সমবেত হতে বলা হচ্ছে। অথবা লাউডস্পিকার থেকে সরাসরি সতর্ক করা হচ্ছে মানুষকে।

সৌরার মোড়ে মোড়ে বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য ইট-পাথর সাজিয়ে রাখা হয়েছে। শ্রীনগরের নানা রাস্তা কাঁটাতার দিয়ে ঘিরেছে বাহিনী। সৌরায় সরু গলির মধ্যে রয়েছে তেমনই কাঁটাতার। কিন্তু সেখানে পাহারা দিচ্ছেন স্থানীয় যুবকেরাই।

বাসিন্দাদের একাংশ জানাচ্ছেন, সৌরায় একাধিক বিক্ষোভের পরে ওই এলাকায় ঢোকার একাধিকবার চেষ্টা করেছে বাহিনী। তাঁদের দাবি, জিনাব সাহিব ধর্মস্থানের কাছে একটি ফাঁকা এলাকায় বিক্ষোভকারীরা সমবেত হচ্ছেন। ওই এলাকা সিল করতে চায় বাহিনী। বছর কুড়ির ওয়েইস বললেন, ‘‘ওরা আমাদের রোজই আক্রমণের চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা পাল্টা লড়াই চালাচ্ছি। মনে হচ্ছে আমরা ফাঁদে আটকে গিয়েছি।’’ নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক আধাসেনা কর্তাও বলছেন, ‘‘ওই এলাকায় বড় বাধার মুখে পড়ছি আমরা। তবে এলাকা ফের দখল করতেই হবে।’’

স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, গুরুতর জখম না হলে সংঘর্ষে আহত কেউ শ্রীনগরের শের-ই-কাশ্মীর ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস-এ যেতে চাইছেন না। কারণ, আহত বিক্ষোভকারীদের গ্রেফতার করার জন্য ওই হাসপাতালের উপরে নজর রেখেছে পুলিশ। তার বদলে আহত বিক্ষোভকারীদের চিকিৎসা করছেন ফিজিওথেরাপিস্ট ইয়াওয়ার হামিদের মতো স্থানীয়েরাই। বছর পঁয়তাল্লিশের বশির আহমেদের ছররায় আহত চোখ তুলো দিয়ে মোছাতে মোছাতে হামিদ বললেন, ‘‘ছররায় আহতদের চিকিৎসার কোনও প্রশিক্ষণই নেই আমার।’’ আজ শ্রীনগরের লাল চকের আশপাশ থেকে ব্যারিকেড সরিয়েছে বাহিনী। তবে এ দিনও রাজ্যে ঢুকতে দেওয়া হয়নি কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদকে। কংগ্রেস মুখপাত্র রবীন্দ্র শর্মা বলেন, ‘‘দুপুর পৌনে তিনটে নাগাদ জম্মু বিমানবন্দরে পৌঁছন আজাদ। তাঁকে বিমানবন্দরের বাইরে যেতে দেয়নি বাহিনী। বিকেল চারটে নাগাদ তাঁকে দিল্লিতে পাঠানো হয়।’’ চলতি মাসে এ নিয়ে দু’বার আজাদকে রাজ্যে ঢুকতে দিল না প্রশাসন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement