National News

‘বেআইনি’ রামলালা জমির মালিক হতে পারেন না, অযোধ্যা রায়ের বিরুদ্ধে মামলার পথে ল’বোর্ড

গত ৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট ঐতিহাসিক অযোধ্যা মামলার রায়ে বলেছিল, অযোধ্যার মূল বিতর্কিত জমিতে রাম মন্দির তৈরিতে কোনও বাধা নেই।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৯ ১৯:০১
Share:

গ্রাফিক: তিয়াসা দাস

জোর করে রামের মূর্তি বসানো হয়েছিল বাবরি মসজিদের অভ্যন্তরে। সেই মূর্তি কী ভাবে দেবতা হতে পারেন? কোন যুক্তিতেই বা সেই মূর্তি জমির অধিকার দাবি করতে পারে? অযোধ্যা রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলায় এই ভাবেই যুক্তি সাজাচ্ছে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড(এআইএমপিএলবি)। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই অযোধ্যা রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করছে এআইএমপিএলবি। মামলায় তাঁরা মূলত এই যুক্তিতেই সওয়াল করবেন বলে জানালেন সংগঠনের আহ্বায়ক জাফরিয়াব জিলানি।

Advertisement

গত ৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট ঐতিহাসিক অযোধ্যা মামলার রায়ে বলেছিল, অযোধ্যার মূল বিতর্কিত জমিতে রাম মন্দির তৈরিতে কোনও বাধা নেই। মসজিদ তৈরির জন্য অযোধ্যাতেই পাঁচ একর জমি দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছিল আদালত। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ-এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বেঞ্চের এই রায় সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড বা বাবরি মসজিদ অ্যাকশন কমিটি মেনে নিলেও রায় চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টেই ফের মামলা দায়ের করতে চলেছে এআইএমপিএলবি। ফলে ফের আদালতেই গড়াচ্ছে অযোধ্যায় রাম মন্দির-বাবরি মসজিদ ইস্যু।

জাফরিয়াব জিলানি শুধু এআইএমপিএলবি নয়, বাবরি মসজিদ অ্যাকশন কমিটিরও আহ্বায়ক। তিনি মূল মামলায় সুপ্রিম কোর্টে মুসলিম পার্সোনাল ল’বোর্ডের হয়ে সওয়াল করেছিলেন। সেই জিলানি বলেন, ‘‘১৮৮৫ থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত হিন্দু রীতি-নীতি মেনে রামলালার মূর্তি পুজো হত বাবরি মসজিদ সংলগ্ন ‘রাম চবুতরা’তে। আমরা কখনও তার বিরোধিতা করিনি। কিন্তু ওই মূর্তি বেআইনি ভাবে বাবরি মসজিদের মূল গম্বুজের নীচে বসানো হয়েছিল এবং তাতে মূর্তির পবিত্রতা নষ্ট হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টও সেটা মেনে নিয়েছে। অন্যের জমিতে জোর করে বসে কোনও মূর্তি দেবতা হতে পারে না।’’

Advertisement

১৯৪৯ সালের ২২-২৩ ডিসেম্বর রাতের মধ্যে কোনও একটা সময় রাম লালার মূর্তি বাবরি মসজিদে বসানো হয়েছিল। ৯ নভেম্বরের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট সেই ঘটনাকে ‘বেআইনি’ আখ্যা দিয়েছে। কোনও দেবতা তাঁর নিজের জন্য আদালতে নিজেই পক্ষ হয়ে মামলা করতে পারে। কিন্তু জিলানির যুক্তি, ১৮৮৫ থেকে ১৯৪৯ পর্যন্ত যখন রাম চবুতরাতে ছিল রামের মূর্তি, তখন তার আইনি অধিকার ছিল।’’

আরও পড়ুন: পতন অব্যাহত, দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার আরও কমে দাঁড়াল ৪.৫ শতাংশে, ছ’বছরে সর্বনিম্ন

রাতের অন্ধকারে বাবরি মসজিদে রামের মূর্তি বসানো নিয়ে এফআইআর দায়ের হয়েছিল ১৯৪৯ সালে। সেই এফআইআরেও মুর্তি যে বেআইনি ভাবে বসানো হয়েছিল, তার প্রমাণ রয়েছে, দাবি জিলানির। তিনি বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট সাম্প্রতিক রায়ে মেনে নিয়েছে, মসজিদটি পরিত্যক্ত ছিল না। ১৮৫৭ সাল থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত সেখানে নমাজ পড়া হত। শীর্ষ আদালত এও মেনে নিয়েছে, মূর্তিটি জোর করে এবং বেআইনি ভাবে বসানো হয়েছিল।’’ তাহলে মূর্তি বসানোই যেখানে ‘বেআইনি’, সেই মূর্তি কি দেবতার মর্যাদা পেতে পারে— প্রশ্ন তুলেছেন জিলানি।

‘রামলালা’ দেবতা নয়, প্রতিষ্ঠা বেআইনি এবং তার জমির মালিকানা দাবি করার আইনি অধিকার নেই— এই দাবির স্বপক্ষে হিন্দু শাস্ত্রের ‘দেবত্ব’-এর রীতিনীতিও আদালতে টেনে আনতে চাইছে মুসলিম পার্সোনাল ল’বোর্ড। জিলানি বলেন, ‘‘হিন্দু রীতি অনুযায়ী, কোনও মন্দিরে প্রাণপ্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত এবং মন্দিরের অভ্যন্তরে প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত কোনও মূর্তি শুধুই ‘মূর্তি’। কোনও দেবতা অন্যের জমি জবরদখল করতে পারবেন না। কেউ কারও জমি দখল করলে, তিনি জমির মালিকানা দাবি করতে পারেন না।’’

আরও পড়ুন: চাষি বেচছেন ৮ টাকায়, আমরা ১২০ টাকায় কিনছি, পেঁয়াজের এত লাভ কার পকেটে যাচ্ছে?

তা ছাড়া হিন্দু শাস্ত্র মতে কোনও মূর্তি বেআইনি ভাবে কোথাও বসানো হলে সেই মূর্তির পবিত্রতা থাকে না— এই সব দাবিই তাঁরা তুলে ধরবেন বলে জানিয়েছেন জিলানি। অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্টের ৯ নভেম্বরের ঐতিহাসিক রায়কে চ্যালেঞ্জ করে মামলা করতে তাঁরা যে এখন থেকেই কোমর বাঁধতে শুরু করেছেন, তা স্পষ্ট জিলানির কথায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement