গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
অমরনাথ যাত্রা শেষ হলেই জম্মু ও কাশ্মীরে বিধানসভা ভোটের আয়োজন করতে পারে নির্বাচন কমিশন। শুক্রবার কেন্দ্রের একটি সূত্রে এ খবর জানানো হয়েছে। ঘটনাচক্রে, শুক্রবারই ওই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের বিজেপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। যা কার্যত বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতি বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ।
সুপ্রিম কোর্ট আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জম্মু ও কাশ্মীরে বিধানসভা ভোট করানোর নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র এবং কমিশনকে। জল্পনা ছিল, জম্মু ও কাশ্মীরের পাঁচ এবং লাদাখের একটি লোকসভা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের সঙ্গেই জম্মু ও কাশ্মীরে বিধানসভা ভোট হবে। কিন্তু তা হয়নি। তবে লোকসভা ভোটের ফলপ্রকাশের পরেই সেখানে বিধানসভা নির্বাচন আয়োজনের প্রক্রিয়া শুরু করা কথা জানায় কমিশন। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার বলেন, ‘‘শীঘ্রই জম্মু ও কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচনের আয়োজন করা হবে।’’
গত ৮ জুন কমিশনের তরফে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বলা হয়, ‘‘জম্মু ও কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচনের জন্য ‘নির্বাচনী প্রতীক (সংরক্ষণ এবং বরাদ্দ) আদেশ, ১৯৬৪’-এর ১০বি অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রতীক চিহ্ন বরাদ্দের আবেদন গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দ্রুত এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে।’’ প্রসঙ্গত, নরেন্দ্র মোদী সরকার ২০১৯ সালের ৫ অগস্ট কেন্দ্র সংবিধানের ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদে বর্ণিত জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা লোপ করেছিল। সাবেক জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যকে দুই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখে ভাগ করা হয়েছিল।
২০১৪ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে শেষ বার বিধানসভা ভোট হয়েছিল অবিভক্ত জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যে। ২০১৯ সালের অগস্টে ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদটি বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ অধিকার এবং রাজ্যের মর্যাদা বিলোপ করেছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। তার প্রায় দেড় বছর আগেই অবশ্য রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে ভেঙে দেওয়া হয়েছিল বিধানসভা। আগামী ১৯ জুন অমরনাথ যাত্রা শেষ হচ্ছে। তার পরেই বিধানসভা ভোটের দিন ঘোষণা হতে পারে বলে শাসকদলের একটি সূত্র জানিয়েছে।
১১ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিলের বিষয়ে মোদী সরকারের সিদ্ধান্তে অনুমোদন দেওয়ার পরেই সেখানে বিধানসভা নির্বাচন করানোর ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দফায় দফায় সেখানে গিয়ে রাজ্য প্রশাসন, সেনা-আধাসেনা আধিকারিক এবং গোয়েন্দা অফিসারদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। গত ১১ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছিল ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেখানে বিধানসভা নির্বাচন করাতে হবে।
জম্মু ও কাশ্মীরের আসন পুনর্বিন্যাসের দায়িত্বে থাকা ‘ডিলিমিটেশন কমিশন’-এর রিপোর্টের ভিত্তিতে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের বিধানসভা আসনসংখ্যা ৮৩ থেকে বাড়িয়ে ৯০ করা হয়েছিল গত বছর। সাতটি আসনের মধ্যে ছ’টি বেড়েছে জম্মুতে (৩৭ থেকে ৪৩) এবং একটি কাশ্মীরে (৪৬ থেকে ৪৭)। কমিশন জানিয়েছে, ২০১১ সালের জনসংখ্যার ভিত্তিতেই আসন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
যদিও অভিযোগ উঠেছে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে হিন্দুপ্রধান জম্মুতে মুসলিম-প্রধান কাশ্মীর উপত্যকার তুলনায় বেশি আসন বাড়ানো হয়েছে। নতুন ব্যবস্থায় জম্মু-কাশ্মীরে যে পাঁচটি লোকসভা কেন্দ্র রয়েছে, তার প্রত্যেকটিতে এখন থেকে ১৮টি করে বিধানসভা কেন্দ্র থাকবে। অন্য দিকে, পূর্বতম রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীর ভেঙে তৈরি হওয়া আর এক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাদাখে থাকবে একটি লোকসভা কেন্দ্র। অবিভক্ত জম্মু ও কাশ্মীরের অংশ লাদাখে থাকা ৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের অস্তিত্ব ইতিমধ্যেই বিলোপ হয়েছে।