UK Election 2024

‘৪০০ পার’ করতে পারে লেবার পার্টি! বৃহস্পতির ভোটে ব্রিটেনে টোরিদের শতাব্দীর শোচনীয়তম ফল?

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ‘হাউস অফ কমন্স’-এ মোট আসন ৬৫০। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ‘জাদু সংখ্যা’ ৩২৬। বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় প্রথম ফল প্রকাশিত হওয়ার কথা।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৪ ১০:৩১
Share:

(বাঁ দিক থেকে) কিয়ের স্টার্মার এবং ঋষি সুনক। ছবি: রয়টার্স।

১৪ বছর পরে ক্ষমতার পালাবদলের বার্তা নিয়ে বৃহস্পতিবার ভোটপর্ব শুরু হল ব্রিটেনে। জনমত সমীক্ষার ফল সত্যি হলে, প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনকের নেতৃত্বাধীন কনজ়ারভেটিভ পার্টির (টোরি) দ্বিগুণ ভোট এবং তিন গুণ আসন নিয়ে ক্ষমতা দখল করতে চলেছে কিয়ের স্টার্মারের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টি।

Advertisement

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ‘হাউস অফ কমন্স’-এ মোট আসন ৬৫০। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ‘জাদু সংখ্যা’ ৩২৬। ‘দ্য গার্ডিয়ান’-সহ বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম এবং জনমত সমীক্ষার পূর্বাভাস, লেবার পার্টি এ বার ৪০০-র বেশি আসন পেয়ে ১৪ বছরের কনজ়ারভেটিভ শাসনের ইতি টানতে চলেছে।

বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় (ভারতে দুপুর সাড়ে ১২টা) শুরু হবে ভোটগ্রহণ। চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত। তার পরেই শুরু হবে গণনা। রাত ১২টায় প্রকাশিত হবে প্রথম ফল। তার পরের ফল প্রকাশিত হবে যথাক্রমে রাত ৩টে, ভোর ৪টে, ভোর ৫টা এবং সকাল ৭টায়। শুক্রবার সকালেই স্পষ্ট হয়ে যাবে আগামী ৫ বছরের জন্য ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের বাসিন্দা কে হতে চলেছেন।

Advertisement

৪৪ বছর বয়সি ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে কনজ়ারভেটিভরা ১০০-র নীচে নেমে শতাব্দীর সবচেয়ে খারাপ ফল করতে পারে বলেও পূর্বাভাস মিলেছে বিভিন্ন জনমত সমীক্ষায়। ঠিক যেমনটা হয়েছিল এক দশক আগে ভারতে, ২০১৪-র লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের ক্ষেত্রে। এমনকি, সুনক নর্থ ইয়র্কশায়ারের রিচমন্ডে তাঁর ‘শক্ত ঘাঁটিতে’ হারতে পারেন বলেও কয়েকটি সমীক্ষার ইঙ্গিত!

জনমত সমীক্ষা বলছে, লেবার পার্টি ৪০ শতাংশ ভোট পাবে, টোরিরা পাবে ২০ শতাংশ ও নাইজেল ফারাজের নেতৃত্বাধীন কট্টরপন্থী দল রিফর্ম ইউকে পাবে ১৬ শতাংশ ভোট। অর্থাৎ, ভোট কেটে টোরিদের বড় ক্ষতি করতে চলেছে রিফর্মিস্টরা। ইঙ্গিত মিলেছে, গত বার টোরিদের ভোট দেওয়া এক-তৃতীয়াংশ ব্রিটিশ নাগরিকের ভোট এ বার কট্টর অভিবাসন বিরোধী রিফর্ম ইউকে পেতে চলেছে। প্রসঙ্গত, ব্রিটেনে এ বারের নির্বাচনে মোট ৪৫১৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির আসনও এ বার অন্তত তিন গুণ বেড়ে ৪০ ছুঁতে পারে বলে ইঙ্গিত রয়েছে বিভিন্ন সমীক্ষায়। লড়াইয়ে রয়েছে গ্রিন পার্টি, রিফর্ম পার্টি, স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি-সহ ছোট–বড় প্রায় ৯৮টি রাজনৈতিক দল এবং নির্দলেরাও। ইতিহাস বলছে, ভারতের মতোই ব্রিটেনেও বিভিন্ন জনমত সমীক্ষার ফল অতীতে ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ভারতের মতোই বহুদলীয় গণতন্ত্র, জটিল এবং মিশ্র জনবিন্যাস, প্রধান শত্রুকে হারাতে ‘ট্যাকটিক্যাল ভোট’— এ সবই নানা ভাবে কঠিন করে তোলে নির্বাচনী ফলাফলের অনুমান।

সঙ্কটের এই সময়ে শেষবেলার প্রচারে সুনক পাশে পেয়েছেন কনজ়ারভেটিভ পার্টির অন্দরে তাঁর ‘কট্টর সমালোচক’ হিসাবে পরিচিত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে। বুধবার লন্ডনে দলীয় প্রচারসভায় জনসন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, লেবাররা ‘বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা’ পেয়ে গেলে বিপন্ন হয়ে পড়বে ব্রিটেনের গণতন্ত্র। যদিও ভোটের আগেই কার্যত হার স্বীকার করে নিয়েছেন প্রাক্তন ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা ভারতীয় বংশোদ্ভূত নেত্রী সুরেলা ব্রেভারম্যান। সংবাদপত্রে লেখা নিবন্ধে তাঁর মন্তব্য— ‘‘আমাদের এখন বিরোধী আসনে বসার সময় হয়ে গিয়েছে।’’ একই সুর সুনকের দল টোরি পার্টির প্রবীণ নেতা, ওয়ার্ক অ্যান্ড পেনশনস দফতরের সচিব মেল স্ট্রাইডের গলাতেও।

ব্রেক্সিট–পরবর্তী সময় থেকে ভঙ্গুর অর্থনীতি, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, অভিবাসন সমস্যা-সহ সাম্প্রতিক সময়ে অপরাধের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ব্রিটেনের জনগণ বিরক্ত বলে জনমত সমীক্ষাগুলির ইঙ্গিত। তা ছাড়া টানা ১৪ বছর ক্ষমতায় থাকা কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্বের প্রতিও রয়েছে ‘প্রতিষ্ঠানবিরোধী ক্ষোভ’। পাশাপাশি, গত পাঁচ বছর ধরে টোরিদের অন্তর্দ্বন্দ্ব, তিন বার প্রধানমন্ত্রী বদলের প্রভাবও পড়তে পারে ভোটে। অন্য দিকে, লেবারদের ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে তাঁদের অ-শেতাঙ্গ ভোটব্যাঙ্কে ভাঙন। স্টার্মার গাজ়া হামলায় ইজ়রায়েলকে সমর্থন এবং অভিবাসন বিরোধী কড়া অবস্থান প্রকাশ করে সেই পথ প্রশস্ত করেছেন ইতিমধ্যেই। যার জেরে গত এক বছরে লেবার পার্টির সদস্যসংখ্যা কমেছে দু’লক্ষের বেশি! যা প্রায় ৪০ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে অভিবাসী ভোটের একটি অংশ ওয়ার্কার্স পার্টির দিকে যেতে পারে বলে কয়েকটি সমীক্ষার ইঙ্গিত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement