Delhi hit and run

বাড়িতে অসুস্থ মা, তিন নাবালক ভাইবোন, একমাত্র রোজগেরে অঞ্জলির মৃত্যুতে অন্ধকারে পরিবার

অঞ্জলিরা ছয় ভাইবোন। দুই বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বাড়িতে দুই বোন, এক ভাই এবং মা থাকেন। ভাই চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। এক বোন সপ্তম এবং আর এক জন নবম শ্রেণিতে পড়ে। কিডনির অসুখে ভুগছেন মা।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২৩ ১২:৩১
Share:

অঞ্জলির প্রিয় রং ছিল বেগুনি। শখ করে সেই রঙেরই একটি স্কুটি কিনেছিলেন মাস কয়েক আগে। ছবি: সংগৃহীত।

ও সাজতে খুব ভালবাসত। পঞ্জাবি গান ওর খুব প্রিয় ছিল। ভালবাসত ইনস্টাগ্রাম রিল করতে। মেয়ে অঞ্জলি সম্পর্কে বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন রেখা সিংহ। সদ্য মেয়েকে হারিয়েছেন তিনি। দিল্লির বুকে মত্ত যুবকদের গাড়ির ধাক্কায় বছরের প্রথম দিনেই মৃত্যু হয়েছে বছর কুড়ির অঞ্জলির।

Advertisement

অঞ্জলিরা ছয় ভাইবোন। দুই বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বাড়িতে দুই বোন, এক ভাই এবং মা থাকেন। ভাই চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। এক বোন সপ্তম এবং আর এক জন নবম শ্রেণিতে পড়ে। কিডনির অসুখে ভুগছেন মা। আট বছর আগে অঞ্জলির বাবা মারা যান। সেই বয়স থেকেই পুরো সংসারের দায়িত্ব এসে পড়েছিল তাঁর ঘাড়ে। ভাইবোনদের মানুষ করতে নিজে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছিলেন। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর কাজে ঢুকে পড়েন। একটি সেলুনে কাজ করতেন। কিন্তু কোভিডের কারণে সেই কাজটাও চলে গিয়েছিল।

পরিবারের মুখে অন্ন জোটাতে, ভাইবোনদের পড়াশোনার খরচ জোগাতে অঞ্জলি অন্য কাজ জুটিয়ে নিয়েছিলেন। বিয়েবাড়ি বা কোনও অনুষ্ঠানবাড়িতে সাজানোর কাজ, কনে সাজানোর কাজ শুরু করেন। মাসে ১০-১৫ হাজার টাকা আয় হত। অতিরিক্ত উপার্জনের জন্য একটি সেলুনে আংশিক সময়ের কাজ করা শুরু করেছিলেন তিনি।

Advertisement

অঞ্জলির বোন আংশিকা এক সংবাদমাধ্যমকে বলে, “দিদি খুব খুশি ছিল। নতুন বছর উদ্‌যাপন করবে বলে নতুন জ্যাকেট, জুতো কিনেছিল। আমাদের জন্যও জামাকাপড় কিনে এনেছিল। বাড়িতে বলে গিয়েছিল, রাতে খাবার নিয়ে আসবে। নতুন বছর সকলে মিলে উদ্‌যাপন করবে। কিন্তু তার আগেই সব শেষ।”

অঞ্জলির প্রিয় রং ছিল বেগুনি। শখ করে সেই রঙেরই একটি স্কুটি কিনেছিলেন মাস কয়েক আগে। অঞ্জলির আর এক বোন প্রীতি বলে, “মাসিক কিস্তিতে একটি স্কুটি কিনেছিল দিদি। নিজের উপার্জনে গাড়ি কিনে খুব খুশি ছিল। কী করে এমনটা হল ভাবতে পারছি না।” বেগুনিরঙা সেই স্কুটিতে করে ফেরার সময় গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে অ়ঞ্জলির।

প্রীতি আরও বলে, “দিদি খুব প্রাণবন্ত ছিল। সকলকে নিয়ে আনন্দ করতে ভালবাসত। আমার সমস্ত লেহঙ্গাই দিদির পছন্দ করা। ও আমাদের বাড়ির সকলের মধ্যমণি ছিল। বিউটিশিয়ান কোর্স করবে বলে টাকাও জমাচ্ছিল।” মানসিক ভাবে খুব শক্ত মনের মেয়ে ছিল অঞ্জলি। কোনও অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ করতে পিছপা হত না। এমনটাই জানিয়েছে অঞ্জলির বোন আংশিকা।

রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বাড়ি থেকে কাজে বেরিয়েছিলেন অঞ্জলি। মাকে বলে গিয়েছিলেন ফিরতে রাত হবে। রেখা এক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ ফোন করে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কখন ফিরবি। ও বলেছিল ভোর ৪টে হবে। রাত ১০টা নাগাদ আবার ফোন করি। কিন্তু তখন ফোন বন্ধ ছিল। বাড়ি না ফেরায় সকাল ৬টায় ফোন করি। কিন্তু তখনও ফোন বন্ধ থাকায় মনে একটা আশঙ্কা ঘিরে ধরেছিল। তার পরই পুলিশ ৭টা নাগাদ ফোন করে থানায় যেতে বলে। জানায়, আমাদের মেয়ের দুর্ঘটনা হয়েছে। তখনও জানতাম না এর এ ভাবে মৃত্যু হয়েছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement