গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
কাজই পারে সব সমালোচনার জবাব দিতে— কতকটা এই বার্তা দিয়েই রবিবার দেশের ৫০৮টি স্টেশনের আধুনিকীকরণের সূচনা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু শেষমেশ দেখা গেল, মোদী শুধু উন্নয়নের ‘জবাব’ দিয়েই থামলেন না। রেলের অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে বিরোধীদের বিঁধলেনও। মঙ্গলবার তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে সংসদে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে চলেছে বিরোধীরা। মঙ্গল থেকে বৃহস্পতি বাদল অধিবেশনের শেষ তিন দিন এই নিয়েই বিতর্ক হতে পারে লোকসভায়। তার আগে রবিবার বিরোধীদের এই কর্মসূচিকে কর্মনাশা বলে কটাক্ষ করলেন প্রধানমন্ত্রী। আর তা করলেন রেলের অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকেই। ঘটনাচক্রে সেই মঞ্চে দাঁড়িয়ে নেতিবাচক রাজনীতির জবাব দিতে উন্নয়নকে অস্ত্র বানানোর কথা বলেছেন তিনি।
রবিবার মোদী যা বললেন
মনিপুর নিয়ে বিরোধীদের সংসদ অচল করে দেওয়া এবং তাঁর বিরুদ্ধে বিরোধী জোটের অনাস্থা প্রস্তাব আনা— এই দু’টি বিষয়কেই কটাক্ষ করে মোদী রবিবার বলেছেন, ‘‘ওঁরা নিজেরা কাজ করতে চান না, কাউকে কাজ করতে দিতেও চান না।’’ শুধু তাই নয়, কেন্দ্রের শাসকদলের বিরূদ্ধে ঐক্যবদ্ধ বিরোধীদের জোট ‘ইন্ডিয়া’ কে অবিলম্বে ভারত ছাড়ার কথাও বলেছেন তিনি। মোদী বলেছেন, ‘‘দুর্নীতিগ্রস্ত, তোষণকারীরা ভারত ছাড়ো।’’
রেলের অনুষ্ঠানের মঞ্চেই বিরোধীদের আক্রমণ
রবিবার বাংলার ৩৭টি স্টেশন-সহ দেশের ৫০৮টি রেলস্টেশনকে ‘অমৃত ভারত’ স্টেশন করার প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানেই তিনি উন্নয়ন এবং ইতিবাচক রাজনীতির কথা বলেন। মোদীর বক্তব্য ছিল, ‘‘ভারত ক্রমশ উন্নয়নের পথে এগোচ্ছে। আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় ভারতের সম্মান এখন অনেক বেড়েছে। তিন দশক পর দেশের মানুষ পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়ে একটি দলকে বেছে নিয়ে দায়িত্ব দিয়েছে। এখন আমরা আর নেতিবাচক রাজনীতি করছি না। আমরা এখন ইতিবাচক রাজনীতির দিকে এগিয়ে চলেছি।’’ এমনকি, মোদী এ-ও বলেন যে, উন্নয়নমুখী ভারতে এখন অমৃতকালের সূচনা হয়েছে। যদিও এর পরেই বিরোধীদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক রাজনীতি করার প্রসঙ্গ টেনে আনেন মোদী। তিনি বলেন, ‘‘এঁদের লক্ষ্য একটাই— নিজেরাও কাজ করব না, কাউকে কাজ করতেও দেব না। এঁরা এখনও সেই পুরনো সংস্কৃতি ছাড়তে পারেননি।’’
রবিবার ছিল ‘ঐতিহাসিক’ অনুষ্ঠান
সকালেই ছিল রেলের অনুষ্ঠান। প্রধানমন্ত্রীর হাতে শুভ সূচনার জন্য রেলের তরফে সাজিয়ে তোলা হয়েছিল বাংলার ৩৭টি স্টেশন-সহ গোটা দেশের ৫০৮টি রেলস্টেশনকে। প্রধানমন্ত্রী মোদী ওই ৫০৮টি স্টেশনকে ‘অমৃত ভারত’ স্টেশন করে তোলার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে। এমন ঘটনা ভারতীয় রেলের ইতিহাসে এর আগে কখনও হয়নি বলে দাবি করে ভারতীয় রেল। তবে রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, মণিপুরের ঘটনা নিয়ে যে ভাবে মোদীর উপর চাপ তৈরি করতে চাইছেন বিরোধীরা তাতে মুখে ইতিবাচক রাজনীতির কথা বললেও, শুধু উন্নয়নে ভরসা করতে পারেননি মোদী। তাই রেলের মঞ্চ থেকেই আক্রমণ করেছেন বিরোধীদের।
কী কী থাকছে নতুন প্রকল্পে?
মোট ৫০৮টি স্টেশনের আধুনিকীকরণের জন্য ২৪ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা খরচ করতে চলেছে কেন্দ্র। এর মধ্যে ১৫০৩ কোটি টাকা খরচ হবে শুধু বাংলার ৩৭টি স্টেশনের উন্নয়ন কল্পে। এ ছাড়া, রেলের তরফে প্রকাশিত তালিকা অনুসারে, দেশে সবচেয়ে বেশি ‘অমৃত ভারত’ স্টেশন পেতে চলেছে ভোটমুখী রাজস্থান। এ ছাড়া যোগী আদিত্যনাথের রাজ্য উত্তরপ্রদেশও ওই একই সংখ্যক স্টেশন পাবে। দু’টি রাজ্যেই ৫৫টি করে রেলস্টেশনকে এই প্রকল্পের আওতায় অত্যাধুনিক করে তোলা হবে। এর পরেই রয়েছে বিহার এবং মহারাষ্ট্র। বিহারের ৪৯টি এবং মহারাষ্ট্রে ৪৪টি স্টেশনকে নতুন রূপে সাজিয়ে তোলা হবে। ‘অমৃত ভারত’ স্টেশনের সংখ্যার নিরিখে পঞ্চম স্থানে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। এই প্রকল্পে মোট ৩৭টি স্টেশন পেতে চলেছে রাজ্য। রাজ্যের ১২টি জেলার কোনও না কোনও স্টেশন এই প্রকল্পের আওতায় থাকছে। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলি মোট ১৭টি ‘অমৃত ভারত’ স্টেশন পাচ্ছে। রেলের তরফে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের ‘অমৃত ভারত’ প্রকল্পের কল্যাণে অমৃতের ছোঁয়া পাবে এই স্টেশনগুলি। স্টেশনের প্রবেশপথ, প্ল্যাটফর্ম থেকে শৌচাগার কিংবা বিশ্রামকক্ষ সব কিছুতেই বদলের ছোঁয়া লাগবে।
মোদী কেন আক্রমণ করলেন বিরোধীদের?
মঙ্গলবারই লোকসভায় প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার পরিকল্পনা রয়েছে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র শরিকদের। বিরোধীরা যেখানে তাঁকে প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়তে বলে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে চলেছে। মণিপুরে মহিলাদের উপর অত্যাচার-সহ একাধিক বিষয়ে মোদী সরকারকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করবে বিরোধীরা। যার জবাব মোদীর দেওয়ার কথা আগামী ১০ অগস্ট, বাদল অধিবেশনের শেষ দিনে। তবে তার আগে গোটা দেশের সামনে প্রধানমন্ত্রীর নিজের কথা বলার সুযোগ ছিল রবিবার। তিনি সেই সুযোগ নষ্ট করতে চাননি বলেই মত রাজনীতির বিশেষজ্ঞদের।