— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
গৃহস্থের রান্নার এলপিজি গ্যাস বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছিল দীর্ঘ দিন ধরে। সেই অভিযোগের সুরাহা করতে গ্রাহকদের আধার কার্ড নম্বর ও বায়োমেট্রিক যুক্ত করার কাজ শুরু করেছে পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক। এই ধরনের অভিযোগ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রবণতার কারণ হিসাবে নজরদারির অভাবকেই দায়ী করছেন এলপিজি ডিস্ট্রিবিউটরেরা। তাঁদের বক্তব্য, পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক ডিজেল, পেট্রল বা এলপিজি বরাদ্দ করে ঠিকই। কিন্তু সেই বরাদ্দ কোন রাজ্যে কী ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, তার উপরে কোনও নজরদারি নেই। তাই গৃহস্থালির জন্য বরাদ্দ এলপিজি বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে যত্রতত্র ব্যবহার করা হচ্ছে।
ওই অভিযোগের কারণেই গ্রাহকদের আধার কার্ড নম্বর-সহ বায়োমেট্রিক যুক্ত করার কাজ হচ্ছে। সব তথ্য হাতে পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ করবে পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক। যদিও ভর্তুকি পাওয়া উপভোক্তাদের এমনিতেই এলপিজি সংযোগের সঙ্গে আধার সংযুক্ত রয়েছে। তবে এলপিজির ব্যবহার কোথায় কী ভাবে হচ্ছে, তা কৌশলে জানতেই তার সঙ্গে বায়োমেট্রিক যুক্ত করা হচ্ছে। যাবতীয় তথ্য হাতে এলে প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে তা জানা অনেক সহজ হবে। তবে কোনও গ্রাহক যদি সিলিন্ডার-পিছু ১৯ টাকা ভর্তুকি ছেড়ে দেন (ডিস্ট্রিবিউটরদের তা জানাতে হবে ‘গিভ আপ’ ফর্ম ভর্তি করে), তা হলে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের বায়োমেট্রিক করানো বাধ্যতামূলক নয় বলেই অনেকে জানাচ্ছেন। কিন্তু পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের ইঙ্গিত বোঝার পরেই ডিস্ট্রিবিউটরেরা নিজ উদ্যোগে গ্রাহকদের এলপিজি গ্যাস সংযোগের সঙ্গে বায়োমেট্রিক যুক্ত করার জন্য ডেকে পাঠাচ্ছেন। তাঁদের একাংশের বক্তব্য, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, এলপিজি সংযোগ রয়েছে। কিন্তু যাঁর নামে সংযোগ, তিনি হয়তো বেঁচে নেই। সেই তথ্য বা নথি তাঁদের কাছে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পরিবারের লোকেরা জমা দেননি। তার মধ্যে বেশ কিছু সিলিন্ডার বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। সে সব খতিয়ে দেখতেই গ্রাহকদের ডেকে বায়োমেট্রিক করানো হচ্ছে।
গত ৯ জুলাই নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরী বলেছেন, ‘‘তেল বিপণন সংস্থাগুলি এলপিজি গ্রাহকদের জন্য ই-কেওয়াইসি আধার যাচাইকরণের উদ্যোগ নিচ্ছে। যাতে ভুয়ো গ্রাহকদের ছাঁটাই করা যায়। এমন এলপিজি সিলিন্ডার সংযোগ সাধারণ গ্রাহকদের নামে নেওয়া আছে, যে সিলিন্ডারগুলি ব্যবহার করা হচ্ছে কোনও বাণিজ্যিক কাজে।’’ গত আট মাস ধরে এই কাজ চলছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। ব্যক্তিগত এলপিজি গ্যাস বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ব্যবহার করে ধরা পড়লে সংশ্লিষ্ট ডিস্ট্রিবিউটরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক। তবে ওই পোস্টেই পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী জানিয়েছিলেন, রান্নার গ্যাসের আধার কার্ড নম্বর সংযুক্তির কোনও সময়সীমা নেই। যে কেউ এলপিজি ডিস্ট্রিবিউটরের অফিসে গিয়ে তা করতেই পারেন। কিংবা তেল সংস্থাগুলির অ্যাপের মাধ্যমেও আধার সংযোগ করাতে পারেন। বাড়িতে সিলিন্ডার দিতে-আসা কর্মীদের থেকেও করাতে পারেন। তবে আধারের সঙ্গে বায়োমেট্রিক যুক্ত করার ক্ষেত্রে এলপিজি ডিস্ট্রিবিউটরের কাছে যেতেই হবে।
‘অল ইন্ডিয়া এলপিজি ডিস্ট্রিবিউটর্স ফেডারেশন’-এর সহ-সভাপতি বিজন বিশ্বাস অবশ্য ঘরোয়া এলপিজি রান্নার গ্যাসের বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ব্যবহার রুখতে পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের এই উদ্যোগ ‘যথেষ্ট নয়’ বলেই মনে করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে আমরা বলতে পারি যে, ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে গত আট মাসে এলপিজি সংযোগের সঙ্গে আধার ও বায়োমেট্রিক যুক্ত করার কাজ সেরে ফেলেছি। তবে এ ভাবে গ্যাসের কালোবাজারি আটকানো সম্ভব নয়। তার আগে সুষ্ঠু নীতি তৈরি করা উচিত।’’ বিজন আরও বলেন, ‘‘উজ্জ্বলা যোজনায় ৩০০ টাকা ভর্তুকি দিয়ে বছরে ১২টি সিলিন্ডার দেওয়া হচ্ছে। যাঁদের এই সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, তাঁদের এলপিজি সিলিন্ডার কেনার ক্ষমতা নেই। তাই তাঁরা সরকারি ভর্তুকির সুবিধাটুকু নিচ্ছেন। তার পরে নিজেদের ব্যক্তিগত সিলিন্ডার বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে কাজে লাগানোর জন্য বিক্রি করে দিচ্ছেন। আবার বহু ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির নামে বছরের পর বছর এলপিজি গ্যাস বুক করে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে চালানো হচ্ছে। পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের আগে এই বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত।’’