শ্বেতিকে ঢেকে রাখতে চান না বিজয়। ছবি: সংগৃহীত।
বলিপাড়ায় এখন অন্যতম চর্চিত অভিনেতা তিনি। পরিচালক জ়োয়া আখতারের ‘গলি বয়’ ছবির মাধ্যমে পথচলা শুরু অভিনেতা বিজয় বর্মার। প্রতিভার গুণে এখন বলিউডে নিজের জায়গা তৈরি করেছেন অভিনেতা বিজয় বর্মা। কাজ করেছেন ‘ডার্লিংস’, ‘দহাড়’ ‘মির্জাপুর’ –এর মতো ছবিতে। সদ্য মুক্তি পেয়েছে বিজয়ের ‘আইসি ৮১৪’ ওয়েব সিরিজ়। সেখানেও তাঁর কাজ প্রশংসিত হচ্ছে সমালোচক মহলে। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বিজয় জানিয়েছেন শ্বেতি নিয়ে তাঁর আতঙ্কের কথা।
শ্বেতির কারণে অভিনয় জগতে আদৌ তিনি তেমন কাজ পাবেন কি না, সেই নিয়ে প্রায়ই হতাশায় ভুগতেন বিজয়, কিন্তু এখন আর সেই নিয়ে খুব বেশি ভাবেন না তিনি। তিনি বলেন, ‘‘শ্বেতিকে বড় করে দেখার কিছু নেই, এটি ত্বকের একটি সমস্যা ছাড়া আর কিছুই নয়। শ্বেতির কারণে তোমার জীবন বদলে যাবে এমনটা নয়। অভিনয় জগতে আসার আগে আমি ভাবতাম, শ্বেতির কারণে হয়তো আমার কাজ পেতে অসুবিধা হবে। তবে এক বার কাজ শুরু হওয়ার পর, একের পর এক সাফল্য দেখেছি, শ্বেতি কিন্তু কখনওই পথের কাঁটা হয়নি এ ক্ষেত্রে।’’
শ্বেতি নিয়েও কী ভাবে পর্দায় আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে অভিনয় করেন বিজয়? প্রশ্নের উত্তরে অভিনেতা বলেন, ‘‘অভিনয়ের সময় আমি শ্বেতির দাগগুলি ঢেকে রাখি। আমি চাই না দর্শক এমন কিছু দেখুন, যা আমি তাঁদের দেখাতে চাই না। তবে অভিনয় ছাড়া সংবাদমাধ্যমের সামনে আসার জন্য কিংবা ছবির প্রচারে শ্বেতির দাগ কখনওই লুকিয়ে রাখি না।’’
শ্বেতির সমস্যা থাকলে খুব বেশি ক্ষণ সূর্যের আলো গায়ে না লাগানোই ভাল। ছবি: সংগৃহীত।
কেন শ্বেতি হয়?
আমাদের ত্বকের রং তৈরি করতে সাহায্য করে মেলানোসাইট কোষে থাকা মেলানিন নামক এক রঞ্জক পদার্থ। শারীরিক সমস্যার কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বা অ্যান্টিবডি ত্বকের রং তৈরি করা এই কোষগুলিকে শত্রু মনে করে ধ্বংস করতে থাকে। এবং ত্বক তার স্বাভাবিক রং হারাতে থাকে। এরই ফলেই শ্বেতি ছড়িয়ে পড়ে সারা শরীরে। এতে শুধু ত্বকই নয়, অনেক সময়ে চুল এবং রোমও সাদা হয়ে যায়। শ্বেতির প্রভাব পড়ে চোখের মণির উপরেও।
চিকিৎসকদের মতে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ইদানীং শ্বেতি হয় অতিরিক্ত রাসায়নিক ব্যবহার থেকে। রোজকার জীবনে এই সব রাসায়নিক সকলের ত্বক সহ্য করতে পারে না। তখনই শুরু হয় সমস্যা। হেয়ার ডাই ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাবধান হওয়া জরুরি। এতে থাকা পি-ফেনিলেনেডিয়ামাইন বা ‘পিপিডি’ শ্বেতি ডেকে আনতে পারে। এ ছাড়া সাবধানতা অবলম্বন করুন ডিও, পারফিউম স্প্রে, ফর্সা হওয়ার বিভিন্ন ক্রিম, ক্ষতিকর রাসায়নিক মেশানো সানস্ক্রিন, অ্যাডহেসিভ রয়েছে এমন কোনও আঠালো দ্রব্য, ডিটারজেন্ট, কড়া অ্যান্টিসেপটিক থেকেও। এগুলি ব্যবহার করলেই যে শ্বেতি হবে এমনটা নয়, তবে যাঁদের ত্বক এই সব রাসায়নিকের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে না, বিপদে পড়বেন তাঁরাও।
শ্বেতির সমস্যা থাকলে খুব বেশি ক্ষণ সূর্যের আলো গায়ে না লাগানোই ভাল। বেশি করে সানস্ক্রিন ব্যবহার করে তবেই রোদে বেরোতে হবে। রোদে বেরোনোর সময় জামাকাপড় পরার বিষয় সতর্ক থাকতে হবে। রোদ যাতে খুব বেশি গায়ে না লাগে, সে বিষয়টি মাথায় রেখে জামাকাপড় নির্বাচন করতে হবে। মানসিক চাপ বেড়ে গেলে কিন্তু শ্বেতির সমস্যা বাড়তে শুরু করে। কর্টিসল হরমোন শ্বেতি ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ হতে পারে। তাই শ্বেতি হলে নিয়মিত যোগাসন, ধ্যানের মধ্যে থাকা ভাল। শ্বেতির সঙ্গে কারও যদি থাইরয়েড, ডায়াবিটিস, অ্যাজ়মা, এগজ়িমা বা অন্য অটোইমিউন ডিজ়িজ় থাকে, যা শ্বেতির চিকিৎসাকে প্রভাবিত করতে পারে, তা হলে রোগটি সারানো সহজ নয়। তবে প্রথম থেকে ঠিক মতো চিকিৎসা না করালে এক বার যদি তা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে, তা হলে কিন্তু মুশকিল।