তিরিশের পর বাড়তে থাকে দায়িত্বের চাপ। ছবি: ফ্রিপিক।
তিরিশ বছর বয়স অনেকের জীবনেই এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়। এই সময়ে ব্যক্তিগত, পেশাগত এবং সামাজিক জীবনে বিভিন্ন পরিবর্তন আসে, সঙ্গে আসে নানা শারীরিক পরিবর্তনও। একসঙ্গে ঘটা এতগুলি পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া অনেকের জন্যই সহজ হয় না।
কী ধরনের বদল আসে?
পেশাগত জীবনে পরিবর্তন: তিরিশ বছর বয়সে অনেকেই তাঁদের পেশাগত জীবনের শীর্ষে পৌঁছন। এই সময়ে কর্মক্ষেত্রে নতুন নতুন দায়িত্ব আসতে পারে। পেশাগত জীবনে স্থির হওয়ার চাপও অনেকে অনুভব করেন। কারণ, এই সময়ে জীবনে অন্যান্য দায়িত্ব নেওয়ারও সময় আসে।
পারিবারিক পরিবর্তন: অনেকেই এই সময়ে বিবাহ করে সংসার জীবনে প্রবেশ করার কথা বিবেচনা করেন। ধীরে ধীরে সন্তানাদির জন্ম হয় এবং সন্তানের নানা দায়িত্ব এসে পড়ে। অভিভাবকের ভূমিকা পালন করা অতি গুরুদায়িত্ব। অনেকেই এই দায়িত্ব সামলাতে বেশ সমস্যায় পড়েন। একসঙ্গে এই সময়ে ধীরে ধীরে বাবা-মায়ের বয়স বাড়তে থাকে এবং তাঁদের বয়সজনিত নানা সমস্যা, রোগব্যাধির দায়িত্ব এসে পড়ে।
নিজেকে সময় দিতে ভুলবেন না। ছবি: সংগৃহীত।
সামাজিক জীবনে পরিবর্তন: নানা দায়িত্বের চাপে ব্যক্তিগত জীবন খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নিজের জন্য সময় বার করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। সমবয়সি বন্ধুবান্ধবও একই ভাবে নানা দায়িত্বে জড়িয়ে পড়েন, তাই বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানোরও খুব একটা সুযোগ পাওয়া যায় না। এতে জীবনে শূন্যতা এবং একাকিত্বের বোধ বাড়তে পারে।
শারীরিক পরিবর্তন: তিরিশের পর শরীরেও নানা বয়সজনিত লক্ষণ দেখা দিতে থাকে। বিপাকের ক্ষমতা কমে যেতে শুরু করে। এর ফলে ওজনবৃদ্ধি, চুল পড়া, এবং ত্বকে বয়সের ছাপ পড়া জাতীয় সমস্যা শুরু হয়। আজকাল ত্রিশের কোঠায় বহু মানুষ সুগার, প্রেশার, কোলেস্টরলের সমস্যায় ভোগেন। কোনও কোনও ক্ষেত্রে বাতের সমস্যা বা ব্যথাজনিত সমস্যাও অসম্ভব নয়।
মানসিক পরিবর্তন: জীবনের বেশ কিছু সময় অতিবাহিত করার পর, ত্রিশের কোঠায় মানুষ নিজের সাফল্য–ব্যর্থতার হিসাব করতে বসেন। অনেকেই জীবনের অর্থ এবং উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন করতে শুরু করেন। এই সময়ে মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ বৃদ্ধি পেতে পারে।
মানিয়ে নেওয়ার উপায়:
১) পরিবর্তন মেনে নেওয়া প্রয়োজন: জীবনে পরিবর্তন আসা স্বাভাবিক। তাই ত্রিশের পর আসা পরিবর্তনগুলিকে ইতিবাচক ভাবে গ্রহণ করার চেষ্টা করতে হবে। এটি সময়ের সঙ্গে স্বাভাবিক এবং সকলের জীবনের জন্যই সত্য, এ কথা বিশ্বাস করতে হবে।
২) নিজের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন: শারীরিক এবং মানসিক ভাবে সুস্থ থাকার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করা, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং পর্যাপ্ত ঘুম একান্ত ভাবে প্রয়োজন। সারা দিনের নানা দায়িত্ব থেকে সময় বার করে একটু সময় নিজের সঙ্গে কাটানোর চেষ্টা করলে উপকার হতে পারে। বই পড়া, ধ্যান, যোগাসন উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করতে পারে।
৩) লক্ষ্য নির্ধারণ করুন: সকলের কাছে জীবনের অর্থ ভিন্ন, নিজের কাছে জীবনে কী গুরুত্বপূর্ণ, সেটাও বোঝা খুব প্রয়োজন। সেই বুঝে ভবিষ্যতের পদক্ষেপগুলি করা প্রয়োজন।
8) কাছের বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো: সমবয়সি বন্ধুরা, যাঁরা প্রায় একই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের সঙ্গে সময় কাটানোর চেষ্টা করুন। সমস্যা ভাগ করে নিলে হয়তো উপকার হবে, মনের ভার লাঘব হবে, পাওয়া যেতে পারে সমস্যার জুতসই সমাধান বা গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ।
৫) সাহায্য চাইতে দ্বিধা করা কখনওই উচিত না: পরিবার, বন্ধু, অথবা দরকারে পেশাদার থেরাপিস্টের কাছ থেকে সাহায্য চাইতে দ্বিধা করা উচিত না।
৬) শারীরিক পরীক্ষা: প্রয়োজনীয় শারীরিক পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। সুগার, প্রেশার ইত্যাদি পরীক্ষা করিয়ে সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করা গুরুত্বপূর্ণ।
৭) ইতিবাচক থাকা প্রয়োজন: জীবনের ইতিবাচক দিকগুলিতে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। সমস্ত পরিবর্তনগুলি গ্রহণ করে, ধীরে ধীরে মানিয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
ত্রিশের পর জীবনে অনেক পরিবর্তন আসে। তবে ইতিবাচক মনোভাব এবং সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এই পরিবর্তনগুলির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া সম্ভব। মনে রাখতে হবে, ত্রিশ বছর জীবনের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা এবং এই অধ্যায়টি অনেক আনন্দ ও সুযোগে ভরা হতে পারে।