‘প্ল্যাঙ্ক’ কী ভাবে ও কতক্ষণ করবেন। —ফাইল চিত্র।
‘প্ল্যাঙ্ক’-এর নাম শুনলেই ভয় পান অনেকে। একটু কঠিন ব্যায়াম। হাত, পায়ের ডগার আঙুল ও কনুইয়ের উপর ভর দিয়ে গোটা শরীরের ভারসাম্য ধরে রাখতে হয়। সেটা করতে গিয়েই সমস্যা হয়। কারণ পুরো শরীরের ভার শুধু হাত এবং পায়ের কয়েকটি আঙুলের উপর ধরে রাখা খুব একটা সহজ নয়। ‘প্ল্যাঙ্ক’ করার কিছু নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে। সেগুলি না জানলে এই ব্যায়ামকে কঠিন বলেই মনে হবে।
প্রশিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, ‘প্ল্যাঙ্ক’ করলে পেট ও কোমরের বাড়তি মেদ খুবদ্রুত কমে যায়। পেশির শক্তি বাড়ে। পায়ের পেশিও টানটান হয়। এই ব্যায়ামের বিভিন্ন ধরন আছে। প্রতিটির আলাদা আলাদা উপকারিতা আছে। তা হলে চলুন জেনে নেওয়া যাক, ‘প্ল্যাঙ্ক’ কী ভাবে ও কতক্ষণ ধরে করবেন।
কত ক্ষণ করবেন ‘প্ল্যাঙ্ক’?
প্রথমে ৩০ সেকেন্ড ধরে অভ্যাস করুন। শুরুতেই পারবেন না। ধীরে ধীরে করতে হবে। বেশি সময় ধরে ‘প্ল্যাঙ্ক’ করলেই যে তা খুব কাজে লাগবে, এমনও নয়। যখন দেখবেন, হাত, কনুই ও পায়ের আঙুলের উপর ভর করে শরীর ধরে রাখতে পারছেন, তখন সময় বাড়াবেন। অভ্যস্ত হয়ে গেলে ৬০ সেকেন্ড পর্যন্ত ‘প্ল্যাঙ্ক পোজ়’ ধরে রাখতে পারবেন। প্রথম প্রথম গা, হাত-পায়ে খুব ব্যথা হবে। তার মধ্যেও অভ্যাস করে যেতে হবে, বন্ধ করে দিলে হবে না। সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন এইব্যায়াম অভ্যাস করতে হবে।
কী কী ধরনের ‘প্ল্যাঙ্ক’ রয়েছে?
১) সাধারণ ‘প্ল্যাঙ্ক’- ম্যাট বা কার্পেটের উপর উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। এবার হাত ও কনুইয়ে ভর দিয়ে শরীরকে ধীরে ধীরে উপরে তুলুন। পায়ের ভর থাকবে বুড়ো আঙুলের উপর। হাঁটু আর পেটও মাটি থেকে যতটা পারবেন উপরে তুলুন। পেট ভিতর দিকে টেনে রাখতে হবে। কোমর, নিতম্বের সঙ্গে সমান্তরাল ভাবে রাখতেহবে কাঁধ, পিঠ এবং হাত বা কনুই। দু’পায়ের মধ্যে দূরত্ব কম করে নেবেন। ভঙ্গিতে যেন কোনও ভাবেই ভুল না হয়।
২) সাইড ‘প্ল্যাঙ্ক’- ‘প্ল্যাঙ্ক’-এর সাধারণ পদ্ধতি অভ্যাস হয়ে গেলে তার পর এটি করতে হবে। ম্যাটের উপর একপাশ ফিরে শুয়ে একটি হাতের উপর ভর দিয়েঅন্য হাত মাটি থেকে তুলতে হবে। ধরুন যদি ডান পাশ ফিরে শুয়ে থাকেন, তাহলে মেঝেতে ডান হাত রেখে তার উপর ভর দিয়ে বাঁ হাত উপরে ঘরের ছাদের দিকে সোজা করে তুলে ধরুন। পা দুটো জোড় করে রাখুন। এ বার ডান হাতের উপর ভর দিয়ে শরীরটাকে ওঠান। ৩০-৬০ সেকেন্ড রেখে নামিয়ে উল্টো পাশ ফিরেও একই জিনিস করুন।
সাইড ‘প্ল্যাঙ্ক’। ছবি: ফ্রিপিক।
৩) ওয়ান লেগড ‘প্ল্যাঙ্ক’- উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। এ বার দুই হাতের কনুই মাটিতে রেখে তার উপর ভর দিয়ে শরীর তুলুন। সেই অবস্থাতেই প্রথমে ডান দিকের পা তুলুন। সেই সময় বাঁ দিকের পায়ের ভর থাকবে বুড়ো আঙুলের উপর। ডান দিকের পা ৩০ সেকেন্ড তুলেই নামিয়ে নিন। একই ভাবে ডান পায়ের বুড়ো আঙুলে ভর দিয়ে বাঁ পা তুলে ধরে ৩০ সেকেন্ড রেখে নামিয়ে দিন। প্রতি পায়ে ৮-১০ বার করে ব্যায়ামটি করুন।
ওয়ান লেগ 'প্ল্যাঙ্ক'। ছবি: ফ্রিপিক।
নি ‘প্ল্যাঙ্ক’- যদি মনে হয় কোনওটাই করতে পারছেন না, তাহলে ম্যাটের উপরদুই হাঁটুর ভর দিয়ে শরীর তুলুন। দুই কনুই ও দুই হাঁটু মাটিতে ভর দিয়েশরীর যতটা পারেন তুলতে হবে। পেট টানটান থাকবে। এটি তুলনামূলক ভাবে সহজপদ্ধতি। 'নি প্ল্যাঙ্ক' অভ্যাস হয়ে গেলে তার পর সাধারণ ‘প্ল্যাঙ্ক’ থেকে আবার শুরু করুন।
নি ‘প্ল্যাঙ্ক'। ছবি: ফ্রিপিক।
‘প্ল্যাঙ্ক’ জ্যাক- সাধারণ ‘প্ল্যাঙ্ক’-এর ভঙ্গিতে শুরু করুন৷ তার পর দুইপায়ের বুড়ো আঙুল ও দুই হাতের তালুতে ভর দিয়ে শরীর টানটান করে তুলে ধরুন।এ ক্ষেত্রে কনুই ভাঙতে হবে না। প্রথমে পা দু’টো কাছাকাছি রাখতে হবে। তারপর জাম্পিং জ্যাকের মতো পা দু’টো চওড়া ফাঁক করুন। আবার আগের অবস্থানে ফিরে আসুন। এই ভাবে দুই পা একবার জোড়া আর একবার ফাঁক করে এই ব্যায়াম করতে হবে।
‘প্ল্যাঙ্ক’ জ্যাক। ছবি: ফ্রিপিক।
‘প্ল্যাঙ্ক’ করলে গোটা শরীরের ব্যায়াম হয়। রক্ত সঞ্চালন ভাল হয়, হরমোনের সমস্যাও দূর হয়। শরীরের ভারসাম্য বজায় থাকে।
এই প্রতিবেদন সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। কঠিন শরীরচর্চার ধকল সকলে নিতে পারেন না। তা ছাড়া অনেকেরই বিভিন্ন রকম শারীরিক সমস্যা থাকে। তাই‘প্ল্যাঙ্ক’ করবেন কি না বা করলেও ‘প্ল্যাঙ্ক’-এর কোন পদ্ধতি আপনার জন্য উপযোগী হবে ,তা জানতে প্রশিক্ষকের পরামর্শ নিতে হবে।