ধূমপান ছাড়ার জন্য অর্থপ্রাপ্তি হলে কি সিগারেট বাদ দেবেন? কী বলছে সমীক্ষা? ছবি: সংগৃহীত।
ধূমপান স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর, জানে আট থেকে আশি। তবু কি তামাক সেবনের সুখ ত্যাগ করা এতই সহজ?
ক্রমাগত সিগারেট খেয়ে কারও হাঁপ ধরছে, কেউ আবার সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে ভাবছেন, এবার ঠিক ছাড়বেনই। কিন্তু ভাবনা বাস্তবায়িত হয় কই? আজ মনে হয় কাল ছাড়বেন, কাল মনে হয় পরশু। এই ভাবে দিন গড়ায়, ছাড়া আর হয় না।
নেশা ছাড়া কঠিন কেন?
আসলে সিগারেটের নেশা ছেড়ে বেরিয়ে আসা সব সময়ই কঠিন। সিগারেটে থাকা নিকোটিনের প্রভাব পড়ে মস্তিষ্কে। এতে শরীরের পক্ষে আনন্দদায়ক রাসায়নিকের নিঃসরণ ঘটে। যার প্রভাবে মনোজগতে ভাললাগা তৈরি হয়। কাজকর্মে বাড়তি উদ্দীপনা মেলে। নিয়মিত সেই নিকোটিন শরীরে গেলে, শরীরও তাতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে।
অর্থযোগে নেশা ছাড়ে?
তবে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত একটি ব্রিটিশ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সমীক্ষা বলছে, ধূমপায়ীদের যদি নেশা ছাড়ার জন্য আর্থিক পুরস্কার দেওয়া হয়, তাতে ফল মিলতে পারে। ইংল্যান্ডের নরউইচ ইউনিভার্সিটিতে এ নিয়ে একটি সমীক্ষা হয়। তাতেই দেখা গিয়েছে, আর্থিক পুরস্কার প্রাপ্তি গোটা বিষয়টিতে অনুঘটকের কাজ করেছে। দেখা গিয়েছে, অনেকেই অর্থপ্রাপ্তির পরে চিরতরে ধূমপান বর্জন করেছেন।
কী বলছে সমীক্ষা?
বিভিন্ন সামাজিক স্তরের ও বয়সের ধূমপায়ী নারী-পুরুষের মধ্যে সমীক্ষাটি চালানো হয়। শর্ত ছিল, ধূমপান ছাড়লেই নগদে বা চেকে অর্থ প্রদান করা হবে অথবা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়বে। দেখা গিয়েছে, আর্থিক পুরস্কারের লোভেই অনেকে ধূমপান ছেড়েছেন। কেউ কেউ আর নতুন করে সিগারেট ছুঁয়ে দেখেননি। তবে, এই উপায় সবচেয়ে বেশি কার্যকর হয়েছে অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের মধ্যে।
ধূমপান শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। তবে তা আরও বিপজ্জনক হয়ে ওঠে অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের জন্য। তাঁদের গর্ভস্থ শিশুর উপরেও ধূমপানের খারাপ প্রভাব পড়ে। দেখা গিয়েছে, যে সমস্ত হবু মায়েরা চেষ্টা করেও ধূমপান ছাড়তে পারছিলেন না, তাঁরাই অর্থপ্রাপ্তির কথা শুনে দ্বিগুণ উৎসাহে ধূমপান ছাড়তে উদ্যোগী হন, সক্ষমও হন।
অর্থ অনুঘটক?
গবেষক তথা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর জ্যামি হার্টম্যান-বয়েস বলছেন, একাধিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে এই প্রক্রিয়া কার্যকর। আর্থিক প্রাপ্তিযোগ মনোজগতে আনন্দের অনুভূতি তৈরি করছে। নিকোটিন মানুষকে সুখের অনুভূতি দেয়। আবার ধূমপান বন্ধ হলে শুরু হয় ‘উইথড্রয়াল সিম্পটম্পস’ অর্থাৎ নানা রকম সমস্যাজনক লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে। নেশার জন্য যে আনন্দ মিলছিল, তা বন্ধ হয়ে যায়। খিটখিটে হয়ে যাওয়া, মেজাজ হারানো-সহ নানা সমস্যা ঘটতে থাকে। কিন্তু অর্থপ্রাপ্তি মস্তিষ্কে সুখানুভূতি এনে দেয়। এক কথায়, টাকা পাওয়ার আনন্দ ধূমপান ছাড়তে উৎসাহ জোগায়।
জ্যামির কথায়, অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের জন্য এই পদ্ধতি ফলপ্রসূ হওয়ার কারণ হল, তাঁরা জানেন, নেশা হবু সন্তানের জন্য ক্ষতিকর। তবুও তাঁদের অনেকে ধূমপান ছাড়তে চেয়ে পারেন না। এ ক্ষেত্রে টাকা পাওয়ার আনন্দ তাঁদের চেষ্টার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।