বছর ঘুরলেও বিধি ভাঙার ‘রোগ’ যে সারেনি, তার প্রমাণ মিলেছে পর পর দুর্ঘটনায়। —প্রতীকী চিত্র।
কখনও বেপরোয়া গাড়ির দৌরাত্ম্যে প্রাণ যাচ্ছে বাইকচালকের। কখনও বাসের লেন ভাঙার পুরনো ‘রোগ’ প্রাণ কাড়ছে পথচারীর। এ ছাড়া, সিগন্যাল না মানা, বাসে-বাসে রেষারেষির ফলে দুর্ঘটনা তো আছেই। কয়েক সপ্তাহ আগে বাসের চালক, মালিকদের নিয়ে বৈঠকে বাসের এই ‘রোগ’ নিয়ে সতর্ক করেছিলেন কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের কর্তারা। পথের আইন নিয়ে সচেতনতার পাঠও দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে যে কিছুই বদলায়নি, তা-ই প্রমাণ করছে যাদবপুর এবং পর্ণশ্রীর দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি।
মঙ্গলবার সকালে যাদবপুরের ৮বি বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন রাস্তায় একটি সরকারি বাস পিষে দেয়
বাইকচালক এবং আরোহী মহিলাকে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় মহিলার। গুরুতর আহত বাইকচালক, ওই মহিলার স্বামী। তবে রক্ষা পেয়েছে ওই দম্পতির চার বছরের মেয়ে। এই দুর্ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে বাসের লেন ভাঙার প্রবণতাকেই দায়ী করছেন তদন্তকারীদের একাংশ। সোমবার রাতেও একই ধরনের দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় আরও এক মহিলার।
সপ্তাহ কয়েক আগে উল্টোডাঙা স্টেশন সংলগ্ন তেলেঙ্গাবাগানের কাছে বারাসত-হাওড়া রুটের একটি বেসরকারি বাস পিষে দিয়েছিল পথচারী এক মহিলাকে। গুরুতর আহত হন অণিমা দত্ত নামে এক প্রৌঢ়া। প্রাথমিক তদন্তে সিগন্যালে দাঁড়িয়ে থাকা বাসটি লেন ভেঙে আর একটি বাসের সঙ্গে রেষারেষি করতে গিয়ে দুর্ঘটনার মুখে পড়ে। ওই প্রৌঢ়ার পা এবং পেটের উপরে উঠে যায় বাসের চাকা। তাঁকে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে এক সপ্তাহ বাদে তাঁর মৃত্যু হয়। এই দুর্ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে লেন ভাঙার ফলেই বিপত্তি ঘটে বলে মনে করেছিলেন তদন্তকারীরা। ওই বেসরকারি বাসটিকে আটক করে ৩০ দিনের জন্য সেটির রেজিস্ট্রেশনও বাতিল করে পুলিশ। বাসের চালককেও গ্রেফতার করা হয়েছিল। যদিও পরে জামিন পান তিনি।
কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের সর্বশেষ প্রকাশিত ২০২৩-এর বার্ষিক মূল্যায়ন রিপোর্ট বলছে,
ওই বছরে শহরে পথ দুর্ঘটনায় মৃত ও আহতের সংখ্যা ১৯১৩। এর মধ্যে মৃত্যু হয় ১৫৯ জনের। ওই বছরে শুধুমাত্র বেসরকারি বাসের ধাক্কায় মৃত ও আহতের সংখ্যা ছিল ২৬১। সরকারি বাসের ধাক্কায় আহতের সংখ্যা ছিল মোট আহতের এক শতাংশ। ২০২৪ সালের ট্র্যাফিক মূল্যায়ন রিপোর্ট এখনও প্রকাশিত না হলেও দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। গত বছর শহরে মোট ১৯১ জনের মৃত্যু হয়। এর একটি বড় অংশ যে পথ-বিধি না মানা ও বেপরোয়া গতির জেরে দুর্ঘটনায় পড়েন, তা মানছেন কর্তারা। বছর ঘুরলেও বিধি ভাঙার ‘রোগ’ যে সারেনি, তার প্রমাণ মিলেছে পর পর দুর্ঘটনায়।
যদিও ‘রোগ’ সারাতে বাসমালিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ট্র্যাফিক পুলিশের কর্তারা।
সেখানে বাসমালিকদের পথ-আইন মেনে বাস চালাতে জোর দেওয়া হয়। সরকারি বাসের ক্ষেত্রেও সচেতনতা বৃদ্ধির পাঠ চলবে বলে জানানো হলেও বাস্তবে যে কাজ হয়নি, তারই প্রমাণ এ দিনের দুর্ঘটনা ও মৃত্যু। যদিও লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘দুর্ঘটনা কমাতে সারা বছর পুলিশের তরফে কিছু না কিছু করা হয়। চালকদের পাশাপাশি পথচারীদেরও সতর্ক করতে প্রতিটি গার্ড বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়। স্কুলগুলিতেও সচেতনতার পাঠ দেওয়া হচ্ছে। ট্র্যাফিক আইন ভঙ্গে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দুর্ঘটনায় মৃত্যু মানেই পুলিশের প্রচেষ্টায় খামতি রয়েছে, এই অভিযোগ ঠিক নয়।’’