যক্ষ্মা ধরা পড়বে গোড়াতেই, নতুন এক্স-রে যন্ত্র আবিষ্কার। ছবি: সংগৃহীত।
যক্ষ্মামুক্ত ভারত দেখা যাবে ২০২৫ সালে, এমনই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রচলিত ওষুধ-প্রতিরোধী (মাল্টি-ড্রাগ রেজ়িস্ট্যান্ট) যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা ভারতে অগণিত। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চের (আইসিএমআর) সমীক্ষা বলছে, ২০২৩ সালে দেশে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা ছিল ২৩ লাখের বেশি। প্রতি বছর তা উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে। প্রতি তিন মিনিটে দু’জন প্রাণ হারান এই রোগে। রোগের এমন বাড়াবাড়ির কারণ হল, যক্ষ্মা যে তলে তলে বাসা বেঁধেছে, তা ধরা পড়ে না অনেক সময়েই। আর্থিক সামর্থ্যের অভাবে রোগ শনাক্ত হতে দেরি হয়, চিকিৎসা শুরু হতে এবং রোগ নিরাময় পর্যন্ত চিকিৎসার খরচ জোগাতে দেরি হয়। ফলে রোগী মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকে। এই সমস্যা সমাধানের জন্যই যক্ষ্মা রোগ নির্ণয়ে নতুন যন্ত্র আবিষ্কার করেছে কানপুরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি।
কানপুর আইআইটি ও আইসিএমআরের যৌথ উদ্যোগে এমন এক্স-রে ডিভাইস তৈরি হয়েছে, যা বহনযোগ্য। বাড়িতেই রাখা যাবে এমন যন্ত্র। ওয়াইফাই দিয়ে সংযুক্ত করা যাবে এটি। হার্ট, ফুসফুস, রক্তনালি ও শ্বাসনালির নিখুঁত ছবি তুলবে। রোগ বাসা বেঁধেছে কি না, তা বোঝা যাবে আগেই।
আইসিএমআরের ডিরেক্টর রাজীব বহাল জানিয়েছেন, এমন বহনযোগ্য এক্স-রে মেশিনের দাম বিদেশে আকাশছোঁয়া। আইআইটি কানপুরের গবেষকেরা এমন ভাবে যন্ত্রটি বানিয়েছেন, যা সহজে ব্যবহার করা যাবে এবং দামও হবে সাধ্যের মধ্যেই। যন্ত্রটির পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। এতে থাকবে ডিজিটাল রিডার, এক্স-রে জেনারেটর। বিশেষ রকম সফট্অয়্যার থাকবে এই যন্ত্রে যা বুকের হাড়ের নিখুঁত ছবি তৈরি করবে। রাজীব বলছেন, এই যন্ত্র নিখুঁত ‘চেস্ট রেডিয়োগ্রাফি’-র কাজ করবে। এটি নিয়ন্ত্রিত হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে। ফলে এই যন্ত্রের ভুলত্রুটি হওয়ার সম্ভাবনা কম।
দেশের প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে এখনও অপুষ্টি ও রক্তাল্পতার হার বেশি। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস, অপুষ্টি, এবং তামাক সেবন ভারতে যক্ষ্মারোগীর সংখ্যাবৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ। বেশির ভাগ রোগীরই চিকিৎসা হয় না, কারণ রোগ ধরাই পড়ে না সঠিক সময়ে। যক্ষ্মা নির্ণয়ের জন্য অত্যন্ত উপযোগী পরীক্ষা হল ‘সিবি-ন্যাট’ (কার্ট্রিজ বেস্ড নিউক্লিক অ্যাসিড অ্যামপ্লিফিকেশন টেস্ট)। এই জিনগত পরীক্ষাটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) কর্তৃক অনুমোদিত। পাশাপাশি, দেশীয় পদ্ধতির ‘ট্রু-ন্যাট’ পরীক্ষাও চালু রয়েছে। তবে এই সব পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় কিট বা কার্ট্রিজ পাওয়া যায় না অনেক সময়েই। তাই রোগ নির্ণয়ের পরিকাঠামো ধাক্কা খায় বারে বারেই। দেশের গবেষকদের তৈরি এই এক্স-রে যন্ত্র যদি কার্যকরী হয়, তা হলে যক্ষ্মা দূরীকরণের কর্মসূচি আরও অনেকটা এগিয়ে যাবে বলেই মনে করা হচ্ছে।