কটানা দাঁড়িয়ে কাজ করতে হলে, কী ভাবে বিপদ এড়াবেন? প্রতীকী ছবি।
পেশাগত কারণে অনেককেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে কাজ করতে হয়। এর থেকে পায়ে ব্যথা তো হয়ই, চাপ পড়ে পায়ের স্নায়ু ও কোমরের পেশিতেও। দীর্ঘ ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে বা দাঁড়িয়ে কোনও ভারী কাজ করলে তা থেকে অনেক জটিল রোগের জন্ম হতে পারে। ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ এপিডেমিয়োলজি’-তে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রের তথ্য বলছে, ১০ ঘণ্টার বেশি বসে থাকলে যেমন হার্টের ক্ষতি হতে পারে, তেমনই দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলেও হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে, কিছু নিয়ম মানলে সমস্যা জটিলতর হওয়া থেকে রুখে দেওয়া সম্ভব।
চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মী, দোকান বা শপিং মলের কর্মীরা, নির্মাণস্থলের কর্মী থেকে বাসের কন্ডাকটর— প্রতি দিন সাত-আট ঘণ্টা যাঁরা টানা দাঁড়িয়ে থাকেন, তাঁদের পায়ে ব্যথা-সহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। সিউড়ি সদর হাসপাতালের অস্থি চিকিৎসক সুব্রত গড়াই বলছেন, “ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকলে মেরুদণ্ডের উপর খুব চাপ পড়ে। আর যদি ভাল জুতো না পরা থাকে, তা হলে পায়ের পাতার স্নায়ুতে ভয়ানক চাপ পড়তে থাকে। খালি পায়ে দাঁড়িয়ে কাজ করা আরও ক্ষতিকর। পায়ের স্নায়ুতে চাপ পড়তে পড়তে ভেরিকোজ় ভেনের সমস্যা দেখা দেয়। পায়ের শিরা ফুলে গিয়ে গাঢ় নীলচে রঙের রেখা চামড়ার উপরে ফুটে ওঠে। ফলে পায়ের পেশিতে টান ধরে যাওয়া, তা ছাড়া পায়ে অসহ্য যন্ত্রণা, পা ফুলে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়।”
চিকিৎসক জানাচ্ছেন, হাঁটার সময়ে পায়ের রক্ত চলাচল বেড়ে যায়। সেই রক্ত ধমনীর মাধ্যমে পৌঁছয় হার্টে, আবার পায়ে ফিরে আসে। পায়ের পেশির সঙ্কোচন ও প্রসারণ রক্ত সঞ্চালনকে সঠিক রাখে। কিন্তু এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকলে বা দাঁড়িয়ে কাজ করলে, এই রক্ত সঞ্চালনের প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। ফলে এক দিকে যেমন হার্টের উপরে চাপ পড়ে, তেমনই রক্ত পায়ের শিরায় জমা হতে থাকে। ফলে শিরা-উপশিরা ফুলে যায়। একে বলে ভেরিকোজ় ভেন। এই সমস্যা দেখা দিলে পা ফুলতে থাকে, তখন হাঁটাচলা করাই দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে। অস্ত্রোপচার ছাড়া সারানোর উপায় থাকে না।
সমাধান কীসে?
১) ভাল জুতো পরতেই হবে। নরম সোলের স্নিকার্স ধরনের জুতো পরা ভাল। সিলিকন সোল জুতোর ভিতরে লাগিয়ে নেওয়া যেতে পারে।
২) পায়ের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া ঠিক রাখার জন্য নিয়মিত স্ট্রেচিং, হাঁটাহাঁটি, সাইক্লিংয়ের মতো ব্যায়াম করা জরুরি। সাঁতার কাটতে পারলেও ভাল। পায়ের তলায় বল নিয়েও ব্যায়াম করতে পারেন। অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকের পরামর্শ নিয়ে নিয়মিত যোগাসন অভ্যাস করতে পারলে খুবই ভাল হয়।
৩) কাজের মাঝেই কিছু ক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে নিন। চিকিৎসকের পরামর্শ, এক ঘণ্টার বেশি দাঁড়িয়ে থাকবেন না। যদি বসার সুযোগ না থাকে, তা হলে দাঁড়িয়েই পায়ের স্ট্রেচিং করে নিন। একটি চেয়ারের উপরে পা তুলে শরীর সামনের দিকে ঝোঁকালেও স্ট্রেচ হবে।
৪) বাড়ি ফিরে ঈষদুষ্ণ জলে দুই পা ডুবিয়ে রাখুন কিছু ক্ষণ। এতেও পায়ের ক্লান্তি কেটে যাবে। পেশির আরাম হবে।