Quit Smoking

আয়ু কমছে ধূমপায়ীদের? একটি আস্ত সিগারেট জীবনের ২০ মিনিট করে সময় ছিনিয়ে নিচ্ছে

ইউনিভার্সিটি কলেজ অফ লন্ডন-এর সমীক্ষা বলছে, সুখটানেই যত বিপদ। একটি আস্ত সিগারেট টেনে শেষে করলে একজন মহিলার জীবন থেকে চলে যাবে কড়কড়ে ২২ মিনিট আর পুরুষদের ক্ষেত্রে ১৭ মিনিট।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:০০
Share:

আয়ু কমছে ধূমপায়ীদের, দাবি গবেষণায়। ফাইল চিত্র।

‘খাইখাই’ কবিতায় সুকুমার রায় লিখেছেন, ‘জ্যাঠা ছেলে বিড়ি খায় কান ধরে টানিও’। জ্যাঠা ছেলে যদি সত্যিই বিড়ি বা সিগারেট খায় কান ধরে তো টানাই উচিত। কারণ প্রতিটি সিগারেট নাকি জীবনের গড় আয়ু কমিয়ে দিচ্ছে ২০ মিনিট করে। মহিলা ও পুরুষের ক্ষেত্রে এই হিসেবটা আবার ভিন্ন। ‘ইউনিভার্সিটি কলেজ অফ লন্ডন’-এর সমীক্ষা বলছে, সুখটানেই যত বিপদ। একটি আস্ত সিগারেট টেনে শেষে করলে একজন মহিলার জীবন থেকে চলে যাবে কড়কড়ে ২২ মিনিট আর পুরুষদের ক্ষেত্রে ১৭ মিনিট। অর্থাৎ, দিনে যদি কেউ কম করেও ১০টি সিগারেটে টান দেন, তা হলে তো সর্বনাশ!

Advertisement

নবম শতকে মেক্সিকো ও মধ্য আমেরিকায় ধূমপানের প্রবণতা বাড়তে থাকে। ক্রমশ তা ছড়িয়ে পড়ে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা হয়ে ইউরোপে। সেই সময় ধূমপান করতে গাছের পাতা ব্যবহার করা হত। স্পেনের বাসিন্দারা ভুট্টার খোসা ব্যবহার করত। সপ্তদশ শতকে প্রথম কাগজের ব্যবহার শুরু হয়। আর এখন তো বিশ্ব জুড়েই সিগারেটের রমরমা। আইনকানুন, নিয়মনীতি চালু করেও ধূমপানের আকর্ষণ কমানো যায়নি। ‘কান টেনেও’ সিগারেটের নেশা কমানো যায়নি বিন্দুমাত্র।

ইউনিভার্সিটি কলেজ অফ লন্ডন (ইউসিএল)-এর গবেষক সারা জ্যাকসন জানিয়েছেন, ২০০৬ সালের সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার একুশ শতাংশ ধূমপায়ী। এখন এই সংখ্যাটা বেড়েছে বই কমেনি। ভারতে ৪২ শতাংশ পুরুষ ও ১৪ শতাংশ মহিলা ধূমপান করেন। এখানেও চমক আছে। সমীক্ষা বলছে, ১৩-১৫ বছর বয়সি অন্তত ৯ শতাংশ ছেলে ও ৭ শতাংশ মেয়ে নিয়মিত ধূমপান করেন।

Advertisement

তামাক সেবন করলে শরীরের যে ক্ষতি হয়, তা আলাদা করে বলার কিছু নেই। সিগারেটে সাত হাজারেরও বেশি রাসায়নিক পদার্থ আছে। তামাক ছাড়াও আছে আর্সেনিক, ফর্ম্যালডিহাইড, সিসা, সায়ানাইড, ইথিলিন অক্সাইড, অ্যাসিট্যালডিহাইড, বুটাডিন, অ্যাক্রোলিন ইত্যাদি। সিগারেট ফুসফুস ক্যানসারের আশঙ্কা যেমন বাড়ায়, তেমনই সিওপিডি-র কারণও হয়ে ওঠে। আবার সিগারেট থেকে মুখ ও গলার ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়ে। আর এখন ক্ষতির তালিকায় জুড়ে গিয়েছে আয়ু কমে যাওয়ার বিষয়টিও।

ভারতে প্রথম ধূমপান বিরোধী আইন আসে ১৯৭৫ সালে। মানুষকে আরও সচেতন করতে সিগারেটের প্যাকেটের ৪০ শতাংশ জুড়ে যাতে ছবি থাকে, সে আইন আনা হয় ২০০৯ সালে। ২০০৪ সালে কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১০০ গজের মধ্যে তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রিও নিষিদ্ধ হয়। কিন্তু এর পরেও ধূমপানে লাগাম পরানো যায়নি।

সিগারেটে টান দিলেন, আর আয়ু কমে গেল, তেমন কিন্তু নয়। আসল কারণটা হল, সিগারেট নানা রোগের কারণ হতে পারে। যেমন, ক্যানসার চিকিৎসক শুভদীপ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ধূমপান হার্টের অসুখের একটা মস্ত বড় কারণ। ধূমপান থেকে হাইপারটেনশন, পেরিফেরাল ভাস্কুলার ডিজ়িজ়ের আশঙ্কা বাড়ে। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ধূমপান করলে ভ্রূণের ক্ষতি হয়। আবার ধূমপান যৌন অক্ষমতারও কারণ হতে পারে। নিকোটিন যখন শরীরে ঢোকে, তখন ধমনীর ভিতরের এন্ডোথেলিয়াম স্তরকে নষ্ট করে। এন্ডোথেলিয়াম হল ধমনীর ভিতরের পাতলা একটি স্তর, যা রক্ত চলাচলে সাহায্য করে। এই স্তরটি নষ্ট হলে ধমনীর ভিতরে রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করে। স্তরটি বেশি শক্ত হয়ে গেলে তখন হার্ট ব্লক হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ে। এই সব কারণেই শরীরের বারোটা বেজে যায় এবং তখন হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক থেকে ক্যানসার— সমস্ত জটিল ও প্রাণঘাতী অসুখই হানা দিতে থাকে। ঘুরিয়ে বললে, আয়ু সত্যিই কমতে শুরু করে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement