ChatGPT

চ্যাটজিপিটিতে সব উজাড় করে বলে দেন? কোন কোন বিষয়ে কথা বললে বা প্রশ্ন করলেই বিপদে পড়বেন?

সাম্প্রতিক সময়েই চ্যাটজিপির কিছু উদ্ভট ‘আচরণ’ নিয়ে হইচই হয়েছিল। তার পর থেকেই সতর্কতা বেড়েছে। কোন কোন কথা বা প্রশ্ন চ্যাটজিপিটে করা যাবে না, তা জেনে রাখাই ভাল।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২৫ ১৫:৪৫
Share:

চ্যাটজিপিটি কী ভাবে বিপদের কারণ হয়ে উঠতে পারে? ফাইল চিত্র।

দৈনন্দিন যাপনে দিব্যি নাক গলাচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। উন্নততর যন্ত্র-নির্ভর প্রযুক্তি ক্রমেই সম্পৃক্ত হয়ে চলেছে চারপাশের পরিমণ্ডলে। রোজের খাওয়া-পরা, ছোটখাটো সমস্যা থেকে বড়সড় জটিলতা— সবেরই সমাধান করতে এগিয়ে এসেছে যান্ত্রিক বুদ্ধি। আর সেখান থেকেই জনপ্রিয়তা বাড়ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরিচালিত চ্যাটজিপিটির। কিন্তু তারও সীমাবদ্ধতা আছে। সামান্য ভুলে বিপদ ঘটে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।

Advertisement

ইলন মাস্কের গবেষণা সংস্থা ‘ওপেনএআই’-এর তৈরি চ্যাটজিপিটি উত্তর দিতে পারে নানাবিধ প্রশ্নের। অবলীলায় লিখে দিতে পারে নাটক, কবিতা, প্রবন্ধ। যে সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গুগ্‌ল সার্চ ইঞ্জিনের সাহায্য নিতে হয়, সে সবেরই আরও দ্রুত উত্তর দিতে পারে চ্যাটজিপিটি। এখানেই শেষ নয়। সে ভুল স্বীকার করতে পারে, ভুলকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে, প্রত্যাখ্যান করতে পারে অনুপযুক্ত অনুরোধও। সে কারণেই চ্যাটজিপিটিতে বেশি মজে কমবয়সিরা। হাতের মুঠোয় জটিল প্রশ্নের সহজ উত্তর পেয়ে যাওয়ার নেশায় ব্যক্তিগত জীবন ও গোপন তথ্যও উজাড় করে দেওয়া হচ্ছে চ্যাটজিপিটিতে। আর সেখানেই ঘনাচ্ছে বিপদ। সাম্প্রতিক সময়েই চ্যাটজিপির কিছু ‘আচরণ’ নিয়ে হইচই হয়েছিল। তার পর থেকেই সতর্কতা বেড়েছে। কোন কোন কথা বা প্রশ্ন চ্যাটজিপিটিকে করা যাবে না, তা জেনে রাখা ভাল।

ব্যক্তিগত তথ্য

Advertisement

এআই চ্যাটবটে কখনওই নিজের নাম, পরিচয়, বাড়ির ঠিকানা, ফোন নম্বর বা ইমেল আইডি লিখবেন না। খেয়াল রাখবেন, আপনার করা প্রতিটি প্রশ্নের উপরেই কিন্তু নজর রাখা হচ্ছে। ব্যক্তিগত তথ্য চ্যাটবটকে জানালে, তা নিমেষেই তৃতীয় পক্ষের কাছে চলে যাবে। আর এই সুযোগে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে তার অপপ্রয়োগও হতে পারে।

আর্থিক অবস্থা

চ্যাটবটকে কখনওই নিজের আর্থিক অবস্থার ব্যাপারে জানাবেন না। ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের তথ্য, ব্যাঙ্কের তথ্য, অ্যাকাউন্ট নম্বর বা অ্যাকাউন্টে কত টাকা আছে, কোথায় কোথায় লগ্নি করছেন, এই সব তথ্য ভুলেও দেবেন না।

পাসওয়ার্ড

ভুলেও কোনও পাসওয়ার্ড শেয়ার করবেন না চ্যাটজিপিটিতে। পাসওয়ার্ড খুব সহজেই হ্যাক করে নেওয়া যেতে পারে।

গোপন খবর

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরিচালিত রোবট মনে করে চ্যাটবটকে কখনওই নিজের গোপন খবর জানাবেন না। ব্যক্তিগত জীবনের সমস্ত সমস্যার কথা চ্যাটজিপিটিকে জানাতে শুরু করলে, তার ফল ভাল না-ও হতে পারে।

স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রশ্ন

নিজের শারীরিক অবস্থা অথবা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোনও প্রশ্ন করবেন না। স্বাস্থ্যবিমা থাকলে তার বিস্তারিত বিবরণ কখনওই জানাবেন না।

চ্যাটজিপিটি কী ভাবে বিপদের কারণ হয়ে উঠতে পারে?

চ্যাটজিপিটিতে কেন ব্যক্তিগত কথা বলতে বারণ করা হচ্ছে, তার কতগুলি কারণ আছে।

প্রথমত, কৃত্রিম বু্দ্ধিমত্তার প্রয়োগ হচ্ছে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে। আর সেই পদ্ধতি নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে মানববুদ্ধিতেই। চ্যাটজিপিটি কী ভাবে কাজ করবে, কতটা বলবে আর কতটা নয়, তা আগে থেকেই প্রোগ্রামিং করা থাকে। অর্থাৎ, গোটা পদ্ধতিতেই তৃতীয় পক্ষের নজরদারি বজায় থাকে। কাজেই আপনি মন উজাড় করে ব্যক্তিগত কথা বলে দিলে বা নিজের গোপন তথ্য জানালে, তা বেহাত হতে সময় লাগবে না।

দ্বিতীয়ত, ডিজিটাল দুনিয়ার আনাচকানাচে হানা দিচ্ছে সাইবার অপরাধীরা। চ্যাটজিপিটিও তাদের অন্যতম বড় অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে। সেখানেও ওত পেতে থাকতে পারে হ্যাকাররা। কাজেই আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য বা নিজের নাম-পরিচয় শেয়ার করতে শুরু করলে, তা যে সাইবার অপরাধীদের হাত ঘুরে ‘ডার্ক ওয়েব’-এ চলে যাবে না, তা কে বলতে পারে!

তৃতীয়ত, সবচেয়ে বড় চিন্তার কারণ হল, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অনিয়ন্ত্রিত প্রয়োগ। সাম্প্রতিক অতীতে চ্যাটজিপিটির বল্গাহীন আচরণ নিয়ে অভিযোগ উঠেছিল। কাজেই, দুষ্টু লোকের হাতে পড়ে এই প্রযুক্তি অন্যকে ধ্বংস করার কাজেও ব্যবহৃত হতে পারে। ১৯৭৮ সালে সত্যজিত রায়ের শঙ্কুকাহিনির সেই প্রাক্‌-আন্তর্জালের দুনিয়ায়, গুগ্‌‌লহীন পৃথিবীতে, ‘কম্পু’ ছিল জ্ঞানের আধার। কিংবা আরও কিছু বেশি। সে পঞ্চাশ কোটি প্রশ্নের জবাব দিতে পারত, তার ছিল বিবেচনার ক্ষমতা, খেলতে পারত ব্রিজ কিংবা দাবা, বিচার করতে পারত সঙ্গীতের সুরের।

তবে কম্পু ছিল সুপারকম্পিউটার, আর এআই-এর চ্যাটজিপিটি হতে পারে তারই ক্ষুদ্র সংস্করণ। আগামী পৃথিবীর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ধারণা তখনই দিয়েছিলেন সত্যজিৎ। সেখানে সাবধানবাণীও প্রচ্ছন্ন ছিল। ‘শঙ্কুর শনির দশা’ গল্পটিই তার প্রমাণ। সেখানেও বিজ্ঞানের প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে শঙ্কুরই আরও একজন প্রতিলিপি বা ‘ক্লোন’ তৈরি করে ফেলা গিয়েছিল। সেই ক্লোন শঙ্কুর হাঁটাচলা, কথা বলার ধরন, এমনকি ব্যক্তিগত জীবনের খুঁটিনাটিও জানত। ভয়টা সেখানেই। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জিম্মায় এই যে অনবরত ব্যক্তিগত কথাবার্তা চালান করা হচ্ছে, তা থেকে ভবিষ্যতে আপনারই ‘এআই ক্লোন’ তৈরি হয়ে যাবে না, তা-ই বা কে বলতে পারে! সেখানে আপনারই নাম, পরিচয়, ব্যক্তিগত সমস্ত খুঁটিনাটি ব্যবহার করে আপনারই নামে অপরাধমূলক কাজকর্মও হতে পারে। সে জন্যই চ্যাটবট হোক বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরিচালিত যে কোনও প্রযুক্তি, তা কেবল প্রয়োজনে ব্যবহার করাই ভাল। এবং সেখানে আপনার ব্যক্তিগত অস্তিত্ব উহ্য থাকাই বাঞ্ছনীয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement