নতুন এমআরআই মেশিন কী ভাবে কাজ করবে? কী কী সুবিধা পাওয়া যাবে? প্রতীকী ছবি।
সিটি স্ক্যানে ধরা পড়ে না তেমন ভাবে। এমআরআই বা ‘ম্যাগনেটিক রেজ়োন্যান্স ইমেজিং’-এর পুরনো পদ্ধতিতে হার্টে কোনও ব্লক আছে কি না তা ধরা পড়লেও, হৃদ্যন্ত্রের চারপাশের চর্বির আস্তরণ জমছে কি না, তা ধরার উপায় নেই। এমআরআই-এর নতুন পদ্ধতি সেই কাজ করতে পারবে বলেই দাবি বিজ্ঞানীদের। ভার্জিনিয়া ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীদের দাবি, তাঁরা এমন এমআরআই মেশিন তৈরি করেছেন, যা চিহ্নিত করতে পারবে হার্টে চারপাশে কতটা মেদ জমছে। এই মেদ ঠিক কী প্রকার এবং তা ভবিষ্যতে হৃদ্রোগের আশঙ্কা বাড়াবে কি না, তা-ও ধরা যাবে।
হার্টে যে অস্বাস্থ্যকর মেদ জমে, তাকে চিকিৎসার পরিভাষায় বল হয় ‘পেরিকার্ডিয়াল ফ্যাট’। হার্টের চারপাশে পরতে পরতে এই মেদ জমা হতে পারে। আবার ধমনীর দেওয়ালেও মেদের স্তর জমতে পারে। এমন অবস্থা হলে তখন তাকে বলা হয় ‘ফ্যাটি হার্ট’। স্থূলত্ব, ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপ থাকলে ফ্যাটি হার্টের আশঙ্কা বেড়ে যায়। গায়ক কেকে-র মৃত্যুর কারণও কিন্তু ছিল এই ফ্যাটি হার্টই। ময়নাতদন্তের পরে দেখা যায়, কেকে-র হৃদ্যন্ত্র প্রায় সাদা হয়ে গিয়েছিল। চারপাশে পুরু চর্বির স্তর জমা হয়েছিল। হার্টের সমস্ত ভাল্ভ শক্ত হয়ে গিয়েছিল, ফলে হৃৎস্পন্দন অনিয়মিত হয়ে পড়েছিল। হার্টে ঠিকমতো অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পৌঁছতেই পারছিল না। ফলে আচমকাই হার্ট অ্যাটাক হয়ে যায়।
হার্টে মেদ রাতারাতি জমে না। দীর্ঘ সময় ধরে চর্বির আস্তরণ তৈরি হয়। অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, শরীরচর্চার অভাব, বেশি পরিমাণে প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়ার অভ্যাস ঝুঁকি বাড়ায়। ফ্যাটি হার্ট সহজে ধরা পড়ে না। তাই বিপদ ঘনাচ্ছে কি না, তা আগাম বোঝার উপায় থাকে না। নতুন মেশিন সেই অসম্ভব কাজই করতে পারবে বলেই দাবি বিজ্ঞানীদের।
ভার্জিনিয়া ইউনিভার্সিটির বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ মেশিনটি তৈরি করেছে। মুখ্য গবেষক ফ্রেডরিক এপস্টেইন জানিয়েছেন, হার্টের চারপাশে কতটা মেদ জমেছে, তার প্রকৃতি কী রকম, হার্ট ব্লক হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না, তা ধরা যাবে নতুন এমআরআই মেশিনে। কেবল তা-ই নয়, চর্বির স্তরের মধ্যে কতটা স্যাচুরেটেড, আনস্যাচুরেটেড বা কতটা পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে তা-ও আলাদা করে চিহ্নিত করা যাবে। গবেষক জানাচ্ছেন, হার্ট ও তার চারপাশের এলাকার পরিষ্কার ত্রিমাত্রিক ছবিও তুলতে পারবে ওই এমআরআই মেশিন। এই ছবি দেখে চিকিৎসকেরা বুঝতে পারবেন, হার্টের অবস্থা কেমন। ফ্যাটি হার্টের উপসর্গ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসা শুরু হবে। ফলে হৃদ্রোগের ঝুঁকি থেকে বহু মানুষকে বাঁচানোও সম্ভব হবে।