West Bengal Assembly Election 2021

Bengal Polls: ‘সেক্সি বৌদি’ থেকে ‘কাজের মাসি’, মহিলা প্রার্থীদের নিয়ে মিমে তোলপাড় নেটমাধ্যম

আগেও শ্রাবন্তীকে ‘বহু বিবাহ প্রবর্তক মহিলা’ বলা হয়েছিল। নুসরত ও মিমির ক্ষেত্রে বলা হয়েছিল তাঁদের যৌন আবেদনই মানুষকে ভোট দিতে বাধ্য করেছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২১ ২০:২৫
Share:

ভাইরাল মিমের প্রতিবাদে নেটাগরিকরা

রাজনীতিতে মহিলাদের অংশগ্রহণ কি মিমস্রষ্টাদের অন্যতম প্রধান রসদ হয়ে দাঁড়াল? মানুষকে চমকে দিতে এ বার ভোট যুদ্ধে খুব চেনা অস্ত্র প্রয়োগ করল নেটমাধ্যমের মিম বিশেষজ্ঞরা।

Advertisement

শেষে পুরুষতন্ত্রকেই বেছে নিলেন সেই শিল্পীরা? অন্তত সাম্প্রতিকতম ভাইরাল মিম দেখার পরে নেটমাধ্যমে তো এমন প্রশ্নই তুলছেন নেটাগরিকরা। মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন ফেসবুকে লিখেছেন ‘এমন ভাবনার জনসাধারণ সংখ্যাগুরু হতে থাকলে জনপ্রতিনিধিরাও নারী বিদ্বেষী মন্তব্য করে জনপ্রিয় হবেন।’

কী আছে এই মিমে?

Advertisement

৩ ভাগে ভাগ করা হয়েছে মহিলাদের। ‘সেক্সি ননদ-বৌদি’, ‘স্টাইলিশ দিদি-বোন’ এবং ‘কাজের মাসি’। চেহারা দিয়ে মহিলাদের সামাজিক অবস্থান কী অনায়াসে ভাগ হয়ে গেল! বেহালার পূর্ব ও পশ্চিমে ‘বিজেপির বাজি’ টলিউডের দুই তারকা পায়েল সরকার এবং শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়। দুই অভিনেত্রী-সতীর্থের প্রতিপক্ষই অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ। এই মিমে শ্রাবন্তী এবং পায়েলকে রাখা হয়েছে প্রথম দলে। তৃণমূল সাংসদ এবং অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী ও নুসরত জাহান দ্বিতীয় শ্রেণীতে। যদিও এই দুই তারকা এ বারের নির্বাচনের প্রার্থী নন। সব শেষে ‘কাজের মাসি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী দীপ্সিতা ধর ও মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়কে।

মহিলাদের বাহ্যিক অবয়ব, ব্যবহার, আচরণ, পোশাক দেখে তাঁদের বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করার প্রবণতা অবশ্য নতুন নয়। তবে ২০২১-এর নির্বাচনে রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত মহিলাদের মুখ ব্যবহার করে মিমের মাধ্যমে হাসির উদ্রেক ঘটানোর চেষ্টা করেছেন এই মিম স্রষ্টারা।

এর আগেও যেমন শ্রাবন্তীকে ‘বহু বিবাহ প্রবর্তক মহিলা’ বলা হয়েছিল। অন্য দিকে নুসরত ও মিমির ক্ষেত্রে বলা হয়েছিল তাঁদের যৌন আবেদনই মানুষকে ভোট দিতে বাধ্য করেছিল। সুন্দর মুখের সর্বত্র জয়। প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পরে পায়েলের যৌন আবেদন বোঝাতে একটি ওয়েব সিরিজের অংশ কেটে নিয়ে তা নিয়ে নেটমাধ্যমে হাসি ঠাট্টা করা হয়।

তবে সম্প্রতি নেটমাধ্যমে হাসির উদ্রেকের চাইতে বিতর্কের উদ্রেক ঘটেছে বেশি। একের পর এক প্রশ্ন তুলেছেন নারীবাদী, যুক্তিবাদী মানুষেরা। কেউ লাল শিবিরের সমর্থনে বলছেন, ‘মানুষের জন্য কাজ করতে হলে কাজের মানুষই দরকার’, অথবা ‘সেক্সি ননদ বা স্টাইলিশ বোনের থেকে কাজের মাসির অনেক বেশি সম্মানপ্রাপ্য’। বিষয়টা রাজনীতি পেরিয়ে পৌঁছে গিয়েছে লিঙ্গ বৈষম্যে। মানুষ তাঁদের ‘কাজের মাসি’ ধরে নিয়েই ‘সেক্সি বৌদি আর ননদ’ নিয়ে বিতর্ক জুড়েছেন।

এই বিষয়ে নেটমাধ্যমে মুখ খুলেছেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি যদিও বেশ কিছু প্রতিবাদের ধরন দেখে হতাশ। পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার পাশাপাশি পুরুষতন্ত্রের প্রতিবাদের প্রবণতাকেও আক্রমণ করেছেন তিনি। সংশোধন করার চেষ্টা করেছেন সেই মনোভাবকেও।

তিনি লিখেছেন, ‘একজন সেক্সি বা স্টাইলিশ হয়েও পরিচারিকা হতে পারেন। অন্যজন সাদামাঠা সাজগোজ করে বিনা প্রসাধনে ‘বৌদি’ হতে পারেন। আবার কিছু নাও হতে পারেন। কিন্তু তাঁরা প্রত্যেকে সমান সম্মানের দাবি রাখেন বলে আমার বিশ্বাস। নারীকে এই স্টিরিওটাইপের খোপে ফেলে দেখছি কেন? কেউ কী কাজ করবেন, কী ভাবে সাজবেন, নিজের যৌন আবেদন কী ভাবে উদযাপন করবেন বা করবেন না সে সিদ্ধান্ত তাঁর। তাঁদের। তাঁদের সম্মান দেওয়ার ক্ষেত্রে এত বৈষম্য থাকবেই বা কেন’?

বাংলার বিধানসভা নির্বাচনে টলিউডের একাধিক নায়িকা যোগদান করেছেন। এ বারেও এক জোটে শিল্পীরা কেউ ঘাসফুলে, কেউ বা পদ্মফুলে যোগ দিয়েছেন। কেউ আবার বাম দলের হয়ে প্রচারে নেমেছেন। মিম ছবি বা ভিডিয়োতে একটি প্রবণতা দেখতে পাওয়া যাচ্ছে এ বারে। খ্যাতনামী মহিলা প্রার্থী বা জননেত্রী হলে তাঁকে নিয়ে কটূক্তি বা মশকরা চলছেই। তৈরি হচ্ছে নারীবিদ্বেষী মিম। নামের বদলে তাঁদের সম্বোধন করা হচ্ছে অদ্ভুত কিছু ডাকে। কোথাও ‘দিদি’, ‘পিসি’, কোথাও বা ‘সেক্সি বৌদি’, ‘স্টাইলিশ দিদি’।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement