পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক
৫ বছর ধরে ট্যাংরার বাসিন্দাদের সঙ্গে নিজেও আবর্জনা ঘেঁটেছেন ছবির স্বার্থে। র্যাপ অভ্যাস করেছেন। র্যাপারদের আদব-কায়দাও। ‘ট্যাংরা ব্লুজ’ কি ‘গল্লি বয়’-এর বাংলা ভার্সন? কী বলছেন প্রযোজক, মুখ্য অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়?
প্রশ্ন: কলকাতার স্ট্রিট মিউজিক কেমন?
পরমব্রত: কলকাতার স্ট্রিট মিউজিকের ঐতিহ্য খুব পুরনো নয়। বিদেশে তবুও এই ধরনের মিউজিক বা গান শোনা যায়। আমাদের গান যেহেতু মার্গ সঙ্গীত থেকে সৃষ্ট, তাই সেই গান রাস্তায় বসে গাওয়া যায় না। তবে আস্তে আস্তে সেটাও চালু হয়েছে সময়ের দাবি মেনে। যদিও রাস্তার ধারে বসে গান গেয়ে অর্থ উপার্জন এখনও আমাদের দেশে ভিক্ষার সামিল। তবে কলকাতার কিছু অঞ্চলে ইদানিং স্ট্রিট মিউজিক শোনা যাচ্ছে।
প্রশ্ন: আপনারও ব্যান্ড ছিল...
পরমব্রত: সেই ব্যান্ড আর ট্যাংরা ব্লুজ ব্যান্ডের মধ্যে আকাশপাতাল ফারাক।
প্রশ্ন: শ্যুটিং করতে গিয়ে একবারও ব্যান্ডের কথা মনে পড়েনি?
পরমব্রত: এই ছবি করতে গিয়ে ‘কুইনিন’ ব্যান্ডের কথা একেবারেই মনে পড়েনি। কারণ, আমরা যে ধরনের গানবাজনার কথা ভাবি বা জানি, তার থেকে একদম অন্য রকম। এই গান আরও কাঁচা। মাটির কাছাকাছি। অন্য অনেক ছবি করতে গিয়ে আমার ব্যান্ডের কথা মনে পড়েছে। এই ছবির ক্ষেত্রে তার কোনও সুযোগই ছিল না।
প্রশ্ন: র্যাপের পাশাপাশি ছবিতে আপনার গলায় কোনও গান থাকবে?
পরমব্রত: না, এই ছবিতে যে ধরনের গান মানায় সেটাই আছে। আমার গান নেই (হাসি)।
প্রশ্ন: মধুমিতা আর আপনি প্রথম এক ফ্রেমে। নতুন জুটি থেকে বাড়তি কোনও আশা?
পরমব্রত: জুটি কিনা বলতে পারব না। তাই আশাও কিছু করছি না। এই প্রথম এক সঙ্গে অনেকগুলো দৃশ্যে আমরা অভিনয় করেছি। মধুমিতা বয়সে খুবই ছোট। কিন্তু মারাত্মক অভিনেত্রী। আগামী দিনে অনেক দূর পর্যন্ত এগবে।
প্রশ্ন: শোনা যাচ্ছে, ট্যাংরার সঞ্জয় মণ্ডল আর আপনার চরিত্র নাকি এক?
পরমব্রত: আমি পর্দায় সঞ্জীব মণ্ডল। যে অনেকটাই সঞ্জয় মণ্ডলের মতো। মনে হতেই পারে, একই মুদ্রার দুটো পিঠ। আমি বলব, আলাদা দুটো মুদ্রা। সঞ্জয়ের জীবনের ২৫ শতাংশ মিল নিয়ে তৈরি সঞ্জীব মণ্ডল। বাকিটা পুরোটাই আমরা আমাদের মতো করে সাজিয়ে নিয়েছি।
প্রশ্ন: নিজের জঁর থেকে বেরলেন? নাকি নিজের জঁরে থেকেই নতুন আঙ্গিকে অভিনয় করলেন?
পরমব্রত: অভিনেতার জঁর হয় নাকি (হাল্কা হাসি)? অভিনেতা তো অভিনেতাই। যদি না কেউ শুধুই মেনস্ট্রিমে অভিনয় করেন। আর প্রবল ভাবে নিজের ইমেজ সচেতন হন। অনেকেই এমন আছেন, যাঁরা তাঁদের সব ছবিতে ডান দিক দিয়ে নয় শুধুই বাঁ দিক দিয়ে ঘুরে তাকান। আমি তেমন নই। তাই যখন যে চরিত্র পেয়েছি, সেই চরিত্র হয়ে ওঠার চেষ্টা করেছি।
প্রশ্ন: ট্যাংরায় শ্যুটিংয়ের অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই মনে রাখার মতো?
পরমব্রত: গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, আমরা যে সব জায়গায় শ্যুটিং করেছি আপনারা জীবনে কোনও দিন সেখানে পা রাখেননি। যাবেনও না। আমার কিন্তু গত ৫ বছরে ওই সমস্ত জায়গাগুলো মুখস্থ হয়ে গিয়েছে। বারে বারে সঞ্জয়দা আর তাঁর ছেলেপুলেদের কাছে গিয়েছিলাম তো। ওটাই আসল ট্যাংরা। যেখানকার মানুষের রুজি-রোজগার আবর্জনা সরানো। শ্যুটিংয়ের খাতিরে নিজের হাতে আবর্জনাও কুড়িয়েছি। এই ট্যাংরাকে কোনও বাংলা ছবি দেখায়নি। আমরা ভুলেও চায়না টাউনের দিকে পা রাখিনি। এত দিন ট্যাংরা বলতে মানুষ ওটাই জেনেছে।
প্রশ্ন: সবাই বলছেন, ‘ট্যাংরা ব্লুজ’ নাকি একদম নতুন ধারার ছবি? অন্য ধরনের গল্প?
পরমব্রত: নতুন ধারা নয়, বলতে পারেন ছবির বিষয় অদ্বিতীয়। ধারার দিক থেকে বলতে গেলে বলব, এ রকম ছবি দেশ-বিদেশে প্রচুর হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বাংলায় আগে ছবি হয়নি।
প্রশ্ন: ছবি থেকে নিশ্চয়ই দর্শক অভিনব কোনও বার্তা পাবে?
পরমব্রত: বার্তাটা অভিনব কিনা বলতে পারব না। তবে উত্তরণের কথা বলবে এই ছবি। অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতি, অনেক খারাপ সময়েও যে মানুষ ঘুরে দাঁড়াতে পারে, সেটাই বলবে এই ছবি। এই বার্তা অনেক বার বলা হয়েছে নানা ছবিতে। কিন্তু যাঁদের মুখ দিয়ে বলানো হয়েছে, তাঁরা সত্যিই ইউনিক।
প্রশ্ন: অনেকেই বলছেন, হিন্দির ‘গল্লি বয়’ সমানসমান আপনার ‘ট্যাংরা ব্লুজ’?
পরমব্রত: (হেসে ফেলে) তাই যদি হয় তা হলে যাঁরাই চশমা পরেন তাঁরাই স্টিফেন হকিন্স? তুলনা টানতে গেলে ব্যাপারটা সে রকমই প্রায় দাঁড়ায়। আমি বোঝাতে পারলাম?
প্রশ্ন: প্রযোজক পরমব্রত এই ছবির জন্য কী কী চ্যালেঞ্জ নিলেন?
পরমব্রত: এই ছবির জন্য আলাদা করে কিছু প্রবল সমস্যা বা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়ছে, তেমনটা নয়। প্রযোজক হলেই কিছু না কিছু চ্যালেঞ্জ নিতেই হয়। বলার মতো কিছু নয় সেগুলো। জানেনই তো, ইন্ডাস্ট্রির বয়ঃজ্যেষ্ঠরা প্রায়ই বলেন, আমি নাকি এমন অনেক কিছুই বেশি বেশি করি যা না করলেও চলে। আমি যদিও সে সবে কান দিই না।
প্রশ্ন: পয়লা বৈশাখ বাঙালির উৎসব। গান ছাড়া এই ছবি বাঙালি দর্শককে আর কী উপহার দেবে?
পরমব্রত: বাঙালি বলতে আমরা এখনও একটাই চেহারা ভেবে নিই, নিপাট ধুতি-পাঞ্জাবিতে সেজে ওঠা এক দল মানুষ। পিছনে সারাক্ষণ টংটং করে একতারা বাজছে। এর বাইরেও এক দল বাঙালি আছে। কলকাতার আনাচেকানাচে খুঁজলে সেই অন্য ধারার বাঙালিদের চোখে পড়বে। পয়লা বৈশাখ সত্যিই যদি বাঙালির হয়, তা হলে এই বছর আমার ছবি সেই সব ভিন্ন ধারার বাঙালিদের জন্য।