বাবা এবং দাদা দু’জনেই বলিউডের আকাশে স্বমহিমায় উজ্জ্বল। তাঁদের পরিচালনা এবং প্রযোজনা একের পর এক তারকা জন্ম নিয়েছেন। কিন্তু তিনি নিজে খ্যাতির নিরিখে তাঁদের তুলনায় পিছিয়ে আছেন কয়েক আলোকবর্ষ। এই বিভাজন বার বার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে যশ চোপড়ার পুত্র উদয়ের চলার পথে।
চোপড়া পরিবার বার বার চেষ্টা করেছে উদয়কে ইন্ডাস্ট্রিতে পরিচিতি দেওয়ার। কিন্তু দীর্ঘ কয়েক দশক ইন্ডাস্ট্রিতে কাটানোর পরেও উদয়ের পরিচয় আটকে রয়েছে ‘মহাব্বতেঁ’ এবং ‘ধুম’-এর গণ্ডিতেই।
উদয় অবশ্য বলিউডে পা রেখেছিলেন ক্যামেরার পিছনে নেপথ্য কারিগর হয়ে। যশরাজ ফিল্মসের সহকারী পরিচালক ছিলেন তিনি। ১৯৯১ সালে প্রথম বার সহকারী পরিচলাক হিসেবে কাজ করেন ‘লমহে’ ছবিতে।
এর পর ‘পরম্পরা’, ‘ডর’, ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে জায়েঙ্গে’, ‘দিল তো পাগল হ্যায়’ ছবিতে তিনি ছিলেন সহকারী পরিচালক। ১৯৯৪ সালে ‘ইয়ে দিল্লগী’ ছবিতে তিনি কাজ করেন প্রযোজক হিসেবে।
অভিনেতা হিসেবে তাঁর প্রথম ছবি ‘মহাব্বতেঁ’ মুক্তি পায় ২০০০ সালে। আরও বেশ কয়েক জন নায়ক নায়িকার সঙ্গে এই ছবি দিয়ে বলিউড অভিযান শুরু করেন উদয়। কিন্তু তাঁর যাত্রা দীর্ঘ হয়নি।
এর পর ‘মেরে ইয়ার কি শাদি’, ‘মুঝসে দোস্তি করোগে’, ‘সুপারি’, ‘কল হো না হো’, ‘হম তুম’, ‘ধুম’, ‘ধুম টু’, ‘ধুম থ্রি’, ‘নীল অ্যান্ড নিকি’, ‘দিল বোলে হড়িপ্পা’, ‘প্যায়ার ইম্পসিবল’, ‘লেডিস ভার্সাস রিকি বেহল’-সহ বহু ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। বাবা-দাদা তাঁকে বলিউডে ‘লঞ্চ’ করেছেন অন্তত তিন বার। কিন্তু প্রতিবারই তিনি ঢাকা থেকেছেন বাকি তারকাদের আড়ালে।
২০১৯ সালে একবার উদয়ের ট্যুইট ঘিরে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছিল। তিনি লিখেছিলেন, ‘‘আমি কয়েক ঘণ্টার জন্য ট্যুইটার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছিলাম। আমার মনে হচ্ছিল যেন আমি মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে পড়েছি। আমার মনে হয় এটা আত্মহত্যা করার ভাল অপশন। আমি হয়তো বরাবরের জন্য সেটা করতেও পারি।’’
তার পর আরও একটি ট্যুইটে তিনি লেখেন, ‘‘স্বীকারোক্তি: আমি ভাল নেই। আমি চেষ্টা করছি ভাল থাকার। কিন্তু পারছি না।’’ এর পরই সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর ভক্ত ও অনুরাগীরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। উদয়ের জন্য ভেসে আসে মানসিক শক্তি বাড়িয়ে তোলার সুপরামর্শ। সকলে তাঁর পাশে আছেন, একথাও জানান ভক্তরা।
পরে উদয় তাঁর ট্যুইটবার্তা মুছে ফেলেন। কিন্তু পোস্টগুলির স্ত্রিনশট ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল। যদিও উদয় পরে দাবি করেন, ওই ট্যুইট আদৌ সিরিয়াস ছিল না। বরং ওটা তাঁর ‘ডার্ক হিউমার’। একইসঙ্গে অনুরাগীদের ধন্যবাদও জানান উদয়। তাঁর পাশে থাকার জন্য। কিন্তু অনুরাগীরা অত সহজে তাঁর ‘রসিকতা’ সংক্রান্ত দাবি মেনে নিতে পারেননি।
রসিকতার জন্য ক্ষমা চাইলেও ঘনিষ্ঠ মহলের খবর, উদয় চোপড়া মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত। কেরিয়ারে ভাল কাজের সুযোগ নেই। পাশে নেই বান্ধবীও। এক সময়ে অভিনেত্রী নার্গিস ফকরির সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। কিন্তু পরে সেই সম্পর্ক ভেঙে যায়।
তার আগে এক সাক্ষাৎকারে নার্গিস বলেছিলেন, ‘‘আমি জানি না কাকে আমি বিয়ে করব! কিন্তু এটা জানি যে জীবনের শেষ পর্যন্ত উদয় আমার জীবনের একটা অংশ হয়ে থাকবে।’’
‘আজহার’ মুক্তির আগেই নার্গিসের যে বিস্ফোরক সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয় মুম্বইয়ের একটা নামী ওয়েবসাইটে। তার জেরে বলিউড জুড়ে তোলপাড় হয়। শোনা যায়, এর পরই উদয় চোপড়া নাকি নায়িকাকে জানিয়ে দেন, তাঁর পক্ষে আর নার্গিসকে বিয়ে করা সম্ভব নয়।
বলিউডি অন্দরমহলের দাবি, উদয়ের মুখে এই কথা শোনার পরেই একেবারে ভেঙে পড়েন নার্গিস এবং প্রায় রাতারাতি চলে যান নিউ ইয়র্কে। নার্গিসের তরফ থেকে অবশ্য জানানো হয়, শারীরিক অসুস্থতার কারণে এক মাস ছুটি নিয়েছিলেন তিনি।
উদয়ের সঙ্গে নার্গিসের নাম জড়িয়ে বহু গুঞ্জন ছড়িয়েছে বলি মহলে। দু’জনকে এক সঙ্গে অনেক জায়গায় দেখাও গিয়েছে। কিন্তু কাজের প্রতি ফোকাসড নার্গিস কখনও কোনও কিছুতেই আপস করেননি।
যদিও উদয় ট্যুইট করে বলেছিলেন, ‘আমি আর নার্গিস ভাল বন্ধু। আমাদের নিয়ে যে সব কথা রটছে তার কোনও ভিত্তি নেই’। শোনা যায়, ক্রমাগত গসিপ শুনতে শুনতে কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছিলেন নায়িকা। আর সে কারণেই ভারত ছেড়ে চলে যান আমেরিকায়।
২০১৬ সালে উদয়ের সঙ্গে বিচ্ছেদের পরেও নার্গিস কাজ করেছেন বলিউডে। তবে আগের তুলনায় অনেক কম। গত ৪ বছরে তাঁর মাত্র ৪টি ছবি মুক্তি পেয়েছে। বলিউডে কেরিয়ার জমে ওঠার পর তিনি স্বেচ্ছায় সব ছেড়ে চলে যান। এরকমই গুঞ্জন অন্দরমহলে।
২০১৮ সালে নার্গিস ইনস্টাগ্রামে আমেরিকার পরিচালক ম্যাট আলোঞ্জোর সঙ্গে নিজের সম্পর্কের কথা জানান। অন্যদিকে ৪৮ বসন্ত পেরিয়ে উদয় ব্যক্তিগত জীবনে এখনও একা। কেরিয়ারের পথেও তিনি কার্যত বিস্মৃত। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নিজের দূরত্ব বাড়িয়ে ফেলেছেন অনেকটাই। কেরিয়ার এবং সম্পর্ক, দু’দিকেই ধাক্কা খেয়ে ‘মহাব্বতেঁ’-এর নায়ক চলে গিয়েছেন প্রচারের অন্তরালে।