সাধারণ পরিবারের ছেলে হয়েও নাম, যশ ও খ্যাতির স্বপ্ন দেখেছিলেন। তার জন্যই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া ছেড়ে পাড়ি দিয়েছিলেন মায়ানগরীতে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সেই স্বপ্নকে ছুঁয়ে দেখতে পেরেছিলেন তিনি। নাম, যশ, খ্যাতি— এ সবই হাতের মুঠোয় চলে এসেছিল। তা সত্ত্বেও নিজেকে শেষ করে দিতে দ্বিধা করলেন না সুশান্ত সিংহ রাজপুত। অসম্পূর্ণই থেকে গেল তাঁর বেশ কিছু চাওয়া-পাওয়া।
রাতের আকাশ দেখতে বরাবরই ভালবাসতেন সুশান্ত। তার জন্য মস্ত বড় টেলিস্কোপও বসিয়েছিলেন বাড়িতে। কিন্তু এর পাশাপাশি আরও কিছু ইচ্ছে ছিল তাঁর, যেগুলিকে নিয়ে ‘বাকেট লিস্ট’ বানিয়েছিলেন তিনি। তাতে কৈলাসে গিয়ে ধ্যান করা থেকে ট্রেনে চেপে ইউরোপ ঘোরা, ছিল অনেক কিছুই।
নিজে হাতে মোট ৫০টি ইচ্ছের তালিকা বানিয়েছিলেন সুশান্ত। গত বছর তা সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলেও ধরেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর পর এখন সেগুলিই ঘুরছে নেট দুনিয়ায়। ঠিক কী কী করতে চেয়েছিলেন সুশান্ত, দেখে নিন একঝলকে—
ডানা মেলে উড়তে চেয়েছিলেন সুশান্ত। তাই তালিকায় প্রথমেই ছিল বিমান ওড়ানো। তার পর ছিল আয়রন ম্যান ট্রায়াথলনের জন্য প্রশিক্ষণ নেওয়া। আয়রন ম্যান ট্রায়াথলন বিশ্বের কঠিনতম দৌড় হিসেবে পরিচিত। এতে যাঁরা অংশ নেন, এক দিনে ৩.৮ কিলোমিটার সাঁতার, ১৮০ কিলোমিটার সাইক্লিং এবং ৪২ কিলোমিটার দৌড়তে হয় তাঁদের।
এর মধ্যে বিমান ওড়ানো, আয়রন ম্যান ট্রায়াথলনের জন্য প্রশিক্ষণ নেওয়ার ইচ্ছে পূরণ হয়েছিল সুশান্তের। টুইটারে ভিডিয়ো পোস্ট করে নিজেই তা জানিয়েছিলেন তিনি। বাঁ হাতে ক্রিকেটের একটি ম্যাচ খেলার স্বপ্নও পূরণ করতে পেরেছিলেন সুশান্ত।
মহাকাশের প্রতি সুশান্তের ভালোবাসার কথা কারও অজানা নয়। ছোটদের মহাকাশ সম্পর্কে শিখতে সাহায্য করতে চেয়েছিলেন তিনি। নিজে মর্স কোড শিখতে চেয়েছিলেন। কোনও টেনিস তারকার সঙ্গে একটি ম্যাচ খেলার ইচ্ছে ছিল তাঁর। চারটি তালি দিয়ে পুশ আপও করতে চেয়েছিলেন।
এক সপ্তাহ ধরে চাঁদ, মঙ্গল, বৃহস্পতি এবং শনির গতিপথ অনুধাবন করতেও চেয়েছিলেন সুশান্ত। সমুদ্রগর্ভস্থ গহ্বরে ডুব সাঁতার দেওয়া, ১ হাজার গাছ লাগানো, ইসরো এবং নাসায় ১০০ ছেলেমেয়েকে প্রশিক্ষণ নিতে পাঠানো এবং কৈলাসে ধ্যান করার ইচ্ছেও ছিল তাঁর।
এর মধ্যে সমুদ্রগর্ভস্থ গহ্বরে ডুব সাঁতার দেওয়ার ইচ্ছে পূরণ হয়েছিল সুশান্তর। সেন্ট্রাল আমেরিকার বেলিজে তা করে দেখিয়েছিলেন তিনি। টুইটারে তার ছবিও পোস্ট করেন সুশান্ত।
অভিনয়ে পা রাখার আগে দিল্লি টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছিলেন সুশান্ত। তারকা হয়ে যাওয়ার পরও সেখানে একটি সন্ধ্যা কাটানোর ইচ্ছে ছিল তাঁর। গত বছর ২৯ সেপ্টেম্বর তা পূরণ করেন তিনি।
বিখ্যাত খেলোয়াড়ের সঙ্গে পোকার খেলা, বই লেখা, নাসা-র ওয়ার্কশপে অংশ নেওয়া, ছ’মাসে সিক্স প্যাক অ্যাবস বানানো, জলের নীচ দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট নদীতে সাঁতার কাটা, এক সপ্তাহ জঙ্গলে কাটানো, বৈদিক যুগের জ্যোতিষশাস্ত্র শেখা এবং ডিজনিল্যান্ডে বেড়াতে যাওয়ারও ইচ্ছে ছিল সুশান্তের।
গত বছর অক্টোবরেই ডিজনিল্যান্ড যাওয়ার স্বপ্ন পূরণ করেন সুশান্ত। তার আগে সেপ্টেম্বরের শেষে জলের নীচ দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট নদীতে সাঁতারও কাটেন।
এর পাশাপাশি একটি ঘোড়া পোষার ইচ্ছে ছিল সুশান্তের। সকলে যাতে বিনামূল্যে শিক্ষার সুযোগ পান, তার ব্যবস্থা করতে আগ্রহী ছিলেন তিনি। ১০ রকম ঘরানার নাচ শিখতে চেয়েছিলেন। শক্তিশালী টেলিস্কোপ দিয়ে ছায়াপথে চোখ রাখা, মহিলাদের আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ দেওয়া, আন্টার্কটিকা বেড়াতে যাওয়া এবং সক্রিয় আগ্নেয়গিরির ছবি তোলারও স্বপ্ন ছিল তাঁর।
এর মধ্যে বাড়িতেই টেলিস্কোপ বসিয়েছিলেন সুশান্ত। সেনাশিবিরে মহিলাদের প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছিলেন।
বাচ্চাদের নাচ শেখানো, পলিনেশিয়ান জ্যোতির্বিদ্যা শেখা, নিজের প্রিয় ৫০টি গান গিটারে তোলা, ল্যাম্বরগিনি গাড়ি কেনা এবং চাষবাসও শিখতে চেয়েছিলেন সুশান্ত।
দু’হাতে সমান বল প্রয়োগ করে তিরন্দাজি শেখারও ইচ্ছা ছিল তাঁর। তা করেও দেখান তিনি।
এ ছাড়াও, ভিয়েনার সেন্ট স্টিফেনস ক্যাথিড্রালে যাওয়া, সেনাবাহিনীর জন্য পড়ুয়াদের প্রস্তুত করা, ট্রেনে চেপে ইউরোপ ভ্রমণ, সার্ফিং-সহ আরও অনেক কিছু করতে চেয়েছিলেন সুশান্ত, যার মধ্যে বেশির ভাগই অসম্পূর্ণ থেকে গেল।