শ্রীজাত। ফাইল চিত্র।
কলম আর ক্যামেরার অনায়াস সহবাস কেউ দেখেছেন? সব ঠিক থাকলে আগামী দিনে এটাই ঘটতে চলেছে বাংলা ছবির দুনিয়ায়। কবি শ্রীজাত খুব শিগগিরি পা রাখছেন পরিচালনার দুনিয়ায়। আনন্দবাজার অনলাইনকে এই খবর সবার প্রথম জানিয়েছেন প্রযোজক রানা সরকার। তিনিই শ্রীজাত-র প্রথম ছবির প্রযোজক। ছবির প্রাথমিক নাম ‘মানবজমিন’। শ্রীজাত জানিয়েছেন, নামে মিললেও শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের লেখা উপন্যাসের সঙ্গে কোনও মিল নেই তাঁর গল্পের। ছবির সুর করবেন জয় সরকার। গল্পের সঙ্গে ছবির গান বাঁধার দায়িত্বও শ্রীজাত-র।
কোন ভাবনা থেকে ক্যামেরায় চোখ রাখতে চলেছেন কবি? আনন্দবাজার অনলাইনকে শ্রীজাত জানিয়েছেন, অনেক দিন ধরেই ইচ্ছে ছিল ছবি বানানোর। কারণ, তাঁর চোখে কবিতা আর ছবির মধ্যে কোথাও যেন অলিখিত বন্ধুত্ব আছে। তাঁর কথায়, ‘‘ছবি দেখা, ছবির জন্য গান বা গল্প লেখা আর ছবি বানানো তো এক নয়। ফলে, কথা হলেও ভরসা করতে পারেননি অনেক প্রযোজক। রানাকে ধন্যবাদ। তিনি আমাকে সেই সুযোগ করে দিচ্ছেন।’’ নব্য পরিচালকের বক্তব্য, তাঁর কিছু বলার আছে। যা কবিতা বা সাহিত্য নয়, ছবি বেশি ভাল বলতে পারবে। তাই তিনি পরিচালনায় আসছেন।
এই মুহূর্তে গোয়েন্দা, বিভিন্ন স্তরের রহস্য-রোমাঞ্চ এবং সম্পর্কের গল্প জনপ্রিয়। পরিচালক শ্রীজাত তাঁর প্রথম ছবি কোন ধরনের গল্প নিয়ে বানাবেন? এখানেও কবিসত্ত্বা জয়ী। শ্রীজাত-র দাবি, রোমান্স আর রসিকতা বাংলা ছবির অমূল্য সম্পদ। একটা সময় এই নিয়ে বহু ছবি হয়েছে। তার অনুকরণে হিন্দিতেও ছবি বানানো হয়েছে। বাঙালি অনেক দিন ধরেই যেন সেই স্বাদ থেকে দূরে। প্রথম ছবিতে তিনি ভালবাসাকে সাক্ষী রেখে মানুষের গল্প বলবেন। যদিও অভিনেতা-অভিনেত্রীর নাম এখনও চূড়ান্ত হয়নি। পরিচালকের মতে, ‘‘শনিবার আমি আর রানা এই নিয়ে আলোচনায় বসব। তার পর নামঘোষণা হবে।’’
পুরনো বাংলা ছবির আমেজ ফিরিয়ে আনতে শ্রীজাত তপন সিংহের ঘরানাকেই আপন করতে চান। তাঁর মতে, ‘‘বাংলায় আমার পছন্দের পরিচালক তিনিই। যদিও আমি কোনও দিক থেকেই তপনবাবুর সমতুল্য নই। তবু চেষ্টা তো করে দেখতেই পারি। সেই জায়গা থেকেই আমার ইচ্ছে, ছবিতে যেন সবাই তপন সিংহের ‘গন্ধ’ পান।’’ প্রচারের আলো মাখবেন না বলেই বরাবর পিছনের সারিতে থেকেছেন তিনি। সেই কবি আজ সামলাবেন, নির্দেশ দেবেন তারকাদের! পারবেন? শ্রীজাত-র স্বীকারোক্তি, দীর্ঘ দিন ইন্ডাস্ট্রিতে থাকার সুবাদে সবাই তাঁর খুব ভাল বন্ধু। সেই বন্ধুত্বকে আঁকড়ে কাজ করবেন সবাই মিলে। তা হলেই আর কাউকে নির্দেশ দিতে হবে না তাঁকে।
পরিচালনায় সফল হলে, আগামী দিনে কবি শ্রীজাত-কে কি ছাপিয়ে যাবে পরিচালক শ্রীজাত? ‘‘প্রশ্নই ওঠে না’’, দাবি তাঁর। স্পষ্ট জবাব, ‘‘পুরস্কার পাওয়ার তাগিদ নেই। প্রতিযোগিতায় নাম লেখানোরও ইচ্ছে নেই। একটাই ইচ্ছে, জমে থাকা কিছু কথা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেব। সেই জায়গা থেকেই এই পরিচালনার ঝোঁক।’’ শ্রীজাত-র দাবি, সফল হলে ভাল। না হলে, পরের দিন ঠিক আগের মতোই কালি-কলম-মন নিয়ে কবিতা, উপন্যাস, গান লিখতে বসে যাবেন।