শ্রীলেখা মিত্র এবং দেবশ্রী রায়।
প্রিয় চুমকিদি,
আনন্দবাজার অনলাইনে তোমার কলম পড়লাম। বেশ কিছু দিন ধরে দেখছি, তোমায় নিয়ে নোংরামি হচ্ছে। ইচ্ছে করেই মুখ খুলিনি। নোংরামিকে পাত্তা দেব না বলে। তোমার কলমে তোমার ছোট্ট অভিমান, ‘এক জন অভিনেত্রীও এখনও পর্যন্ত টুঁ শব্দ করলেন না!’ আমি তাই মুখ খুললাম। তুমি আমাদের সবার ভীষণ আদরের, সম্মানের। অনেক কিছু দিয়েছ টলিউডকে। আমরা তোমায় দেখে অনেক কিছু শিখেছি। তার পরেও বলছি, এখনও আশা কর তুমি? এখন অভিনেত্রীরাই অভিনেত্রীদের শারীরিক গঠন, খামতি নিয়ে কথা বলে মজা পান! ওঁদের এ সবে কিচ্ছু যায়-আসে না।
সময়টা বড্ড খারাপ, চুমকিদি। মানুষ তার থেকেও। তুমি কাউকে ক্ষমা করো না। দরকারে মুখের উপর সপাটে জবাব দাও। মন্তব্য আপনা থেকেই বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু পাত্তা দিও না। ভুলেও মনখারাপ করো না। তোমার প্রসঙ্গে বলি, বেশ কিছু দিন ধরেই মানবিকতার, নৈতিকতার এই অবনতি দেখছি। জান তো, রাজনীতি আর সংস্কৃতি পরস্পরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত? তুমি প্রথমটি থেকে সরে এসেছ। কিন্তু দ্বিতীয়টিকে এড়াবে কী করে? এখন এটাই বাংলার সংস্কৃতি। পারিবারিক শিক্ষাটাও সে রকমই। সবাই ঝটপট হাতে মুঠোফোন পেয়ে যাচ্ছে। টিকটক, রিল ভিডিয়ো কত কী বানিয়ে ফেলছে! সে সব নেটমাধ্যমে ভাগ করে নিচ্ছে। এ সবের মধ্যে দিয়েই যেন তারস্বরে একটা কথাই বলছে, 'আমাকে দেখুন...!’
এদের কাছে তুমি সহানুভূতি আশা করো?
এরা আমাদের, অভিনেত্রীদের ভিন গ্রহের জীব ভাবে। ভাবে, আমরা যেন জন্মেই নাম-যশ-অর্থ-খ্যাতি সব পেয়ে গিয়েছি। বোঝেই না, কত ব্যথা, অপমান লুকিয়ে তুমি দেবশ্রী রায় হয়েছ। কত চোখের জল মুছে আমরা যে যার মতো করে পরিচিতি পেয়েছি। আসলে ওরা আমাদের হিংসা করে। ঈর্ষাও করে। ভয় পায়। রেগে যায়। ওদের প্রশ্ন, আমরা কেন এত পাব? সেই জ্বালা, সেই নিরাপত্তাহীনতা, হীনমন্যতা থেকে ওরা আমাদের অপমান করে। আমাদের মই বানিয়ে এরা আসলে জনপ্রিয়তার সিঁড়িতে চড়তে চায়। সেই জায়গা থেকে বয়স নিয়ে, রূপ নিয়ে, শরীর নিয়ে কটাক্ষ ছোড়ে। মূল্যবোধ, মানুষকে সম্মান দেওয়ার অনুভূতিটাই আস্তে আস্তে মরে যাচ্ছে। এরা বোঝে না, এক দিন এদেরও বয়স হবে।
তোমার ‘কলকাতার রসগোল্লা’ একটা সময় সবার মুখে মুখে ফিরত। আজ সেই গান দিয়ে তোমায় অপমান! সত্যিই কিচ্ছু বলার নেই।