কিশোর কুমারের ছোটবেলার চরিত্রে অভিনয় করে আত্মপ্রকাশ বড় পর্দায়। পরবর্তীকালে তিনি বলিউডের হার্টথ্রব। চিরকালীন রোম্যান্টিক নায়কের ইমেজ। কিন্তু অভিনেতা বিনোদ মেহরার ব্যক্তিগত জীবনে সম্পর্কের টানাপড়েন ছিল অব্যাহত।
সুদর্শন বিনোদের জন্ম ১৯৪৫ সালে। পঞ্জাবের অমৃতসরে। তাঁর বাবার নাম পরমেশ্বরীদাস মেহরা এবং মায়ের নাম কমলা মেহরা। পরে মেহরা পরিবার চলে আসে বম্বে, আজকের মুম্বইয়ে।
বিনোদের পড়াশোনা প্রথমে সান্টাক্রুজের স্যাক্রেড হার্ট স্কুল, পরে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে। তাঁর দিদি সারদা সাতের দশকের কিছু ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। তারপরে বিনোদের পা রাখা ইন্ডাস্ট্রিতে।
১৯৫৮ সালে শিশুশিল্পী বিনোদের প্রথম অভিনয় ‘রাগিনী’ ছবিতে। কিশোরকুমারের শৈশবের ভূমিকায়। দু’ বছর পরে ‘বেওকুফ’ ছবিতেও তিনি ছিলেন কিশোরকুমারের ছোটবেলার চরিত্রে অভিনয়কারী শিশুশিল্পী।
নায়ক হিসেবে বিনোদের প্রথম ছবি ‘এক থি রীতা’ মুক্তি পায় ১৯৭১ সালে। ছবির নায়িকা ছিলেন তনুজা। এর পর ‘পর্দে কে পিছে’, ‘এলান’, ‘অমর প্রেম’, ‘অনুরাগ’, ‘লাল পাত্থর’, ‘জানি দুশমন’, ‘নাগিন’, ছবিতে নজরকাড়া পারফরম্যান্স বিনোদের।
দু’ দশকের কেরিয়ারে বিনোদ অভিনয় করেছেন একশোটিরও বেশি ছবিতে। নায়ক ছাড়াও তাঁকে দেখা গিয়েছে উল্লেখযোগ্য পার্শ্বচরিত্রেও। অমিতাভ বচ্চন, সঞ্জীব কুমার, রাজেশ খন্না, সুনীল দত্ত, ধর্মেন্দ্রর মতো তারকাদের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করেছেন তিনি। নায়ক বিনোদ খন্নার জুটি হিট করেছিল রেখা, মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়, যোগিতা বালি, শাবানা আজমি এবং বিন্দিয়া গোস্বামীর সঙ্গে।
তারকা হওয়ার আগেই বিনোদ মেহরা বিবাহিত। পরিবারের পছন্দ করা পাত্রী মীনা ব্রোকাকে বিয়ে করেছিলেন বিনোদ। বিয়ের কয়েক বছর পরেই প্রথমবার হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। এরপর থেকেই মীনার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক তিক্ত হতে শুরু করে।
মীনাকে ডিভোর্স করে বিনোদ বিয়ে করেন বিন্দিয়া গোস্বামীকে। কিন্তু তাঁর দ্বিতীয় বিয়েও দীর্ঘস্থায়ী হল না। বিনোদকে ছেড়ে চলে যান বিন্দিয়া। তিনি বিয়ে করেন পরিচালক জে পি দত্তকে।
সাতের দশকের মাঝামাঝি বিনোদ মেহরার সঙ্গে রেখার সম্পর্ক নিয়ে গুঞ্জরিত হয় নানা কথা। এরকমও শোনা গিয়েছিল, তাঁরা গোপনে বিয়ে করেছেন। কিন্তু দু’জনের কেউই এই সম্পর্ক স্বীকার করেননি। পরে সিমি গারেওয়ালের টক শো-য়ে এসে রেখা বলেছিলেন, বিনোদ তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষী ছিলেন মাত্র।
আটের দশক থেকে বিনোদ মেহরার ব্যক্তিগত জীবন এবং কেরিয়ার, দু’দিকই ব্যাহত হতে শুরু করে। নায়কের ভূমিকা থেকে পার্শ্বচরিত্রে আগেই সরে গিয়েছিলেন। এ বার সেই সুযোগও বন্ধ হতে শুরু করল। পাশাপাশি আবার মাথাচাড়া দেয় হৃদরোগ।
১৯৮৮ সালে তৃতীয়বার বিয়ে করেন বিনোদ। কেনিয়ার এক ব্যবসায়ীর মেয়ে কিরণকে। সে বছরেই জন্ম তাঁদের মেয়ে সোনিয়ার। ছেলে রোহনের জন্ম ১৯৯০ সালে। কিন্তু পুত্রসন্তানকে দেখে যেতে পারেননি বিনোদ। ১৯৯০ সালে হৃদরোগে আত্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয় মাত্র ৪৫ বছর বয়সে। তাঁর মৃত্যুর পর জন্ম হয় পুত্র রোহনের।
১৯৯০ সালে যে সময়ে বিনোদের মৃত্যু হয়, সে সময় ‘ইনসানিয়ৎ’ ছবির শুটিং চলছিল । আশ্চর্যজনকভাবে, ছবির অভিনেতা এবং অভিনেত্রী নূতন, দু’জনের কেউই এই ছবির মুক্তি দেখে যেতে পারেননি। ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৯৪ সালে। বিনোদ মেহরা অভিনীত আরও কিছু ছবি মুক্তি পেয়েছিল তাঁর মৃত্যুর পরে।
বিনোদের অকালপ্রয়াণে কিরণ বাধ্য হন তাঁর দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে কেনিয়া ফিরে যেতে। মোম্বাসা শহরে কিরণের বাবা মা এবং বোনের কাছে বড় হয় সোনিয়া-রোহন। ইংল্যান্ড থেকে উচ্চশিক্ষার পরে দু’জনেই পা রেখেছেন ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে।
২০০৭ সালে মুক্তি পাওয়া ছবি ‘ভিক্টোরিয়া ২০৩’-এ অভিনয় করেছেন সোনিয়া। বিনোদ মেহরার ছেলে রোহন আত্মপ্রকাশ করেছেন ২০১৮ সালে নিখিল আডবাণীর ছবি ‘বাজার’-এ।