Devara Part 1 review

মনে রাখার মতো ছবি হয়ে উঠতে পারল না, সম্ভাবনা সত্ত্বেও দানা বাঁধল না ‘দেভারা’র গল্প

নামকরা অভিনেতা, প্রযুক্তির ব্যবহার— সবই ছিল। ছিল না কেবল গল্প বলার সৎসাহস। জুনিয়র এনটি আরকে অতিমানব বানাতে গিয়ে এত অর্থনাশের আদৌ প্রয়োজনই ছিল বলে মনে হয় না।

Advertisement

অতীন্দ্র দাণিয়াড়ি

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৫:৪৯
Share:

‘দেভারা’ ছবিতে জুনিয়র এনটি আর। ছবি: সংগৃহীত।

একটি সুঠাম গল্প যে কোনও ছবির মজবুত ভিত তৈরি করে। ছবির গল্পকে সুন্দর ভাবে বলতে পারলেই দর্শক পর্দায় ঘটতে থাকা ঘটনা গোগ্রাসে গিলতে থাকেন।

Advertisement

কোরতালা সিবা পরিচালিত তেলুগু ছবি ‘দেভারা’র নিসর্গ দৃশ্য চোখে পড়ার মতো। তারই সঙ্গে কম্পিউটার গ্রাফিক্সের সূক্ষ্মাতি সূক্ষ্ম ব্যবহারের প্রশংসা করতেই হয়। কাহিনিও আকর্ষণীয়। কিন্তু, গল্পটাই ঠিক ভাবে উপস্থাপন করা হল না। মনে হয় যেন, নায়কের (জুনিয়র রামা রাও) উপযোগী চিত্রনাট্যের সংকলন হয়ে উঠেছে। নায়ক সেখানে অতিমানব বা অবতার হয়ে উঠলেও গল্পের চরিত্র হয়ে উঠতে পারলেন না।

গল্প শুরু হয়, পুলিশি অভিযানকে কেন্দ্র করে। কুখ্যাত অপরাধী দয়া এবং ইয়েথিকে ধরতে পুলিশ আধিকারিক ইরাসমুদ্রের তীরে সিঙ্গাপা (প্রকাশ রাজ) নামে একজন ব্যক্তির কাছে পৌঁছয়। সিঙ্গাপা তাদের দেভারার গল্প বলে। প্রাচীনকাল থেকেই সমুদ্রের তীরে পাহাড়ের উপর চারটি জনগোষ্ঠী বাস। কালের নিয়মে সামাজিক ভাবে তাদের জীবন এগিয়ে চললেও সেই জীবনযাত্রায় কোনও বৈচিত্র্য নেই। দলনেতা কে হবে সেটা ঠিক করার জন্য সেখানে প্রতি বছর একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। অস্ত্রে সাজান এক সিংহাসনকে তারা সবাই ঈশ্বর হিসাবে ভক্তি করে। আদিম মানুষদের মতো ভয়ঙ্কর সেই লড়াইয়ে যে বিজয়ী হয় তার মাথায় ওঠে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট। অস্ত্র সজ্জিত সিংহাসনের দখল নেয় সে-ই। দেভারা এখানে অপ্রতিরোধ্য এক যোদ্ধা, যাকে পরাজিত করা যায় না। তার রয়েছে এক জলদস্যুর দল। তারা মাঝ সমুদ্রে পণ্যবাহী জাহাজ লুঠ করে। মুরুগা(মুরলি শর্মা) নামে এক মাফিয়া তাদের পণ্যবাহী জাহাজের সন্ধান এনে দেয়।

Advertisement

ছবির একটি দৃশ্যে জাহ্নবী এবং জুনিয়র এনটি আর। ছবি: সংগৃহীত।

অথচ, মনে প্রাণে ধার্মিক দেভারা এক সময় এই কাজ ছেড়ে দিতে চায়। মানুষের প্রাণের বিনিময়ে সম্পদ তৈরিতে তার মন সায় দেয় না। দলের আর এক বীর সদস্য ভৈরো (সইফ আলি খান) এবং কুঞ্জরা দেভারার সিদ্ধান্ত মানে না। তারা দেভারার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে থাকে। তাকে মেরে ফেলতে চায়। সত্যিই কি দেভারা মারা যাবে? কী হবে তাদের দলের ভবিষ্যৎ? এই সব প্রশ্নের উত্তরের জন্যই দর্শককে হলে যেতে হবে। কিন্তু, হলে বসে কোনও প্রশ্ন করা বা যুক্তি খোঁজার চেষ্টা বৃথা। শুধু বিনোদনের জন্য ঘণ্টা তিনেক সময় কাটানোর জন্য ‘দেভারা’ আদর্শ হতে পারে।

গল্পের মধ্যে সম্ভাবনা থাকলেও চিত্রনাট্যের অসংগতি এবং দুর্বল সংলাপ ছবিটিকে খাপছাড়া করে দেয়। একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি, একই রকম নাট্যমুহূর্ত, ছবিটিকে ক্রমশ একঘেয়ে করে দিতে থাকে। বিরতি পর্যন্ত ছবিটি একটি নির্দিষ্ট গতিতে এগিয়ে চললেও বিরতির পর ছবির চলন আরও ছন্নছাড়া মনে হয়। তার উপর রয়েছে আবহসঙ্গীতের ব্যবহার। উচ্চগ্রামে বাঁধা আবহ ছবির সুন্দর মুহূর্তগুলিকে অনেকাংশে দুর্বল করে দেয়।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

ছবিতে বেশ কিছু দৃশ্য যেমন, দেভারার দলের পণ্যবাহী জাহাজ লুঠ, সমুদ্রের পাড়ে পাথরের ওপর দেভারা ও তার ছেলের কথোপকথন, নেশাগ্রস্ত দেভারার সঙ্গে ভৈরোর দলের সংঘর্ষ, মশালের আলোয় দেভারাকে খোঁজা ইত্যাদি বেশ ভালো লাগে। এ ছবিতে কম্পিউটার গ্রাফিক্স, চিত্রগ্রহণ ও আলোর কাজ মনে রাখার মতো। অনেকদিন পর জুনিয়র রামা রাও আবার রুপোলি পর্দায় ফিরে এলেন। কিন্তু এক অতি মানবিক নায়ক হয়ে উঠলেও, দেভারা ছবির গল্পের চরিত্র হয়ে উঠতে পারলেন কি? ভৈরো চরিত্রে সইফ আলি খানকে ভালো লাগে কিন্তু তাঁর অভিনয়ে আরও একটু বৈচিত্র্য আশা করা যায়।

‘দেভারা’ ছবিতে সব থেকে বেশি প্রশ্ন উঠতে পারে জাহ্নবী কাপুরের ভূমিকা নিয়ে। উল্লেখযোগ্য একটি নাচের দৃশ্য ছাড়া গল্পে তাঁর অবদান প্রায় নেই বললেই চলে? অন্য চরিত্রে শ্রুতি মরাঠি, অভিমন্যু সিংহ, শ্রীকান্ত বা প্রকাশ রাজের অভিনয় বেশ ভালো লাগে।

অতি বাণিজ্যিক চমক না এনে গল্প কথনে জোর দেওয়া হলে, হয়তো এ ছবি ইতিহাস তৈরি করতে পারত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement