সুদীপ্তা চক্রবর্তী , প্রমিতা ভৌমিক এবং কণীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়।
একজন মানুষ কি নিয়ে বাঁচে গোটা জীবন? ঠিক কোন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সে পারিপার্শ্বিক ও নিজের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার খেলা চালিয়ে যায় আজীবন? প্রমিতা ভৌমিক পরিচালিত ‘পরিচয়’ ছোট ছবি চিরাচরিত এই প্রশ্নগুলোকেই নতুন করে মনের মধ্যে জাগিয়ে তোলে।
দু’জন নারী। কলেজ জীবনের বন্ধু। দুটো আলাদা সামাজিক প্রেক্ষাপট ও জীবনবোধে বাঁচা দুজন মানুষ। দীর্ঘ পনেরো বছর পর তাদের দেখা। সংলাপধর্মী এই ছোটছবির মূল উন্মোচন এর পরেই।
‘পরিচয়’-এর নিজের পরিচিতি এবং স্বতন্ত্রতার প্রকাশ দুই বন্ধুর ঘরোয়া আলাপচারিতাতেই। ঠিক যে মনস্তত্ত্বে মানুষ নিজের বিশ্বাস, জীবনবোধকে আঁকড়ে থাকে প্রবল অধিকারবোধে, সেরককমই কিছু ভাবনার কথোপকথন।
কাজ হোক বা সম্পর্ক এর ভাল-খারাপের কি সত্যিই কোনও নির্দিষ্ট মানদন্ড থাকে? সেটা ঠিক করার দায়িত্বই বা কার? আত্মীয় পড়শি, স্বজন বা সমাজের? আত্মসম্মান, আত্মমর্যাদা, স্বাধিকার, এই সব গালভরা শব্দেরও কি লিঙ্গ বৈষম্য হয়? “পরিচয়”-এর ভেতরে ভাঙা কাঁচের টুকরোর মতো বিঁধে আছে এই প্রশ্নগুলি।
আসলে ঠিক প্রশ্ন নয়, অপ্রিয় প্রসঙ্গও বটে। যা নিয়ে ঠিক আড্ডা হতে পারে না। পনেরো বছর পর দেখা হলে তো নয়ই! কিছু কথা বিতর্ক বা তিক্ততার জন্ম দেয়। তেমন কিছুকে নিজের কাছে সম্পূর্ণ আড়াল করে রাখা এক জিনিস আর সেই একই বিষয় অন্য কেউ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলে সেটা আলাদা হয়ে যায়।দুই বন্ধুর কাজের ধারা নিয়ে ছবিতে সংশয় তৈরি হয়। সেখানেও প্রশ্ন ওঠে। কাজেই মানুষের পরিচয়? নাকি জন্মগত পরিচয় সব কিছুকে ছাপিয়ে যায়? প্রশ্ন তুলেছে ছবি।
পরিচালক প্রমিতা ভৌমিক নিজে মূলত একজন কবি ও গল্পকার। ‘পরিচয়’ শর্ট ফিল্মে তার চিত্রনাট্য জুড়ে দৃশ্যের ঘনঘটা তেমন না থাকলেও, তার বোধ মনন জুড়ে রয়েছে বাংলা সংলাপের স্মার্টনেস ও মাধুর্য। এর সঙ্গে সুদীপ্তা আর কণীনিকার দুর্দান্ত অভিনয়ের যুগলবন্দি এতোটাই বাস্তব ঘেঁষা যে একজন দর্শক হিসেবে সারাক্ষণই মনে হবে ছবির অনুরাধা আর শ্রেয়া খুব পরিচিত দুজন নারী। যারা জীবনের যাত্রাপথে একান্ত নিজের মতো করে অবিরাম ছাপ রেখে যাচ্ছে নিজস্ব পরিচয়ে।
গত বছর ১৬ ফেব্রুয়ারি 'পরিচয়'-এর শ্যুটিং শেষ হয়েছিল।
আজ ‘পরিচয়’ সারা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে প্রদর্শিত হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে ছবির ডিজিটাল রিলিজ হবে, তখন বহু মানুষ প্রমিতার এই ছোট ছবিটি দেখার সুযোগ পাবেন।
দুই নারীর গল্প ‘পরিচয়’। যা সংসারে, সমাজ্ সম্পর্কে আরও বহু নারীকে অনুপ্রাণিত করবে নিজের নিজের চাওয়ার অধিকার পেতে।