সুশান্ত সিংহ রাজপুতের রহস্যমৃত্যুতে বার বার ভেসে উঠছে তাঁর বেশ কয়েক জন বন্ধুর নাম। তাঁদের মধ্যে এক জন সিদ্ধার্থ পিঠানি। গত ১৪ জুন দুপুরে সুশান্তের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় মুম্বইয়ে তাঁর নিজের বাড়িতে। সে সময় তাঁর এক জন বন্ধুও ওই বাড়িতে ছিলেন। তিনি সিদ্ধার্থ পিঠানি।
গত কয়েক মাস ধরে সুশান্তের বাড়িতেই থাকছিলেন তাঁর বন্ধু তথা ক্রিয়েটিভ ম্যানেজার সিদ্ধার্থ। সুশান্তের মৃত্যুরহস্যে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছে পুলিশ। তদন্তে জানা গিয়েছে, সিদ্ধার্থের সঙ্গে সুশান্তর বান্ধবী রিয়ার সম্পর্ক ভাল ছিল না।
পুলিশ সূত্রে খবর, সুশান্তের বাড়িতে যে সিদ্ধার্থ ছিলেন, তা-ও নাকি মেনে নিতে পারতেন না রিয়া। তিনি বার বার সুশান্তের উপর চাপ সৃষ্টি করতেন। যাতে সিদ্ধার্থ তাঁর নিজের বাড়িতে চলে যান। কিন্তু রিয়ার এই প্রস্তাবে রাজি ছিলেন না সুশান্ত।
পুলিশকে রিয়া জানিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে সুশান্তের শেষ বার যে ঝগড়া হয়েছিল, সেই বিবাদেরও কেন্দ্রে ছিলেন সিদ্ধার্থ-ই। সুশান্তের মৃ্ত্যুর পরে সিদ্ধার্থ-রিয়াকে একসঙ্গে দেখাও যায়নি বিশেষ।
কিন্তু সত্যিই কি সিদ্ধার্থ-রিয়া সম্পর্ক তিক্ত ছিল? রিয়ার ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল কিন্তু সে কথা বলছে না। সেখানে রিয়া ছবি দিয়েছেন। নীচে লেখা, সে ছবি তুলেছেন সিদ্ধার্থ পিঠানি। সেখানে তিনি সিদ্ধার্থকে নিজের প্রিয় আলোকচিত্রী বলেও উল্লেখ করেছেন!
শুধু স্টিল ছবি-ই নয়। ইনস্টাগ্রামে একটি ভিডিয়োও শেয়ার করেছিলেন রিয়া। লকডাউনে বাড়িতে কী করে চুলের যত্ন নেওয়া যায়, তার ভিডিয়ো। সেটাও নাকি ক্যামেরাবন্দি করেন সিদ্ধার্থ-ই।
ইনস্টাগ্রামে রিয়ার শেয়ার করা ছবি ও ভিডিয়োর বেশির ভাগই লেন্সবন্দি করেছেন সিদ্ধার্থ। প্রতি বার আপলোড করার সময় নিজেই সিদ্ধার্থের নাম উল্লেখ করেছেন রিয়া। যে ভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় বন্ধুরা ছবি তুললে তাদের নাম উল্লেখ করেন সবাই, ঠিক সে ভাবে।
সব মিলিয়ে রিয়ার ইনস্টাগ্রাম দেখে আপাত ভাবে এ কথাই মনে হয়, তাঁর এবং সিদ্ধার্থের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কোনটা সত্যি? সম্পর্কে তিক্ততা থাকলে একের পর এক রিয়ার ছবি কেন তুললেন সিদ্ধার্থ?
সেই ছবি এবং ভিডিয়ো যে রিয়া পছন্দ করতেন, সে কথা বলছে তাঁর সোশ্যাল মিডিয়ার প্রোফাইল-ই। যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে, ইমোজি বসিয়ে তিনি শেয়ার করেছেন সিদ্ধার্থের তোলা ছবি ও ভিডিয়ো।
পাশাপাশি, সুশান্তের মৃত্যুতে কাঠগড়ায় বলিউডের স্বজনপোষণও। এই মর্মে উঠে আসছে বেশ কিছু নাম। পুলিশ এ বার কথা বলবে আদিত্য চোপড়ার সঙ্গে। যশরাজ ফিল্মসের ‘পানি’ ছবিতে অভিনয় করবেন বলে সুশান্তকে বেশ কিছু ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ হারাতে হয়। এই ছবি পরিচালনা করার কথা ছিল শেখর কপূরের।
প্রি প্রোডাকশনের কাজ অনেক দূর এগোলেও শেষ অবধি ‘পানি’ ছবির শুটিং হয়নি। কেন হয়নি, সে নিয়ে আদিত্য চোপড়া ও শেখর কপূরকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে পুলিশ।
যশরাজ ফিল্মসের সঙ্গে সুশান্তের চুক্তি ছিল যে, প্রথম ছবি সফল হলে দ্বিতীয় ছবিতে তাঁর পারিশ্রমিক হবে ৬০ লক্ষ। সেটা হিট হলে তৃতীয় ছবিতে পারিশ্রমিক পাবেন ১ কোটি।
কিন্তু দ্বিতীয় ছবি ‘ব্যোমকেশ বক্সী’-তেই সুশান্ত সিংহ রাজপুতকে ১ কোটি টাকা দেওয়া হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, এর কারণ বা ব্যাখ্যা কোনওটাই দিতে পারেননি প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা।
কেন সে রকম করা হয়েছিল, যশরাজ ফিল্মসের কাছে পুলিশ এ বার জানতে চাইবে। ইন্ডাস্ট্রিতে সুশান্ত কতটা কোণঠাসা হয়েছিলেন, তার হদিশ পেতে চাইছেন তদন্তকারীরা।