টলিউডে এক ঝলকা টাটকা বাতাস এসেছিল ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ ছবির হাত ধরে। ২০০২ সালে বাসু ভট্টাচার্যের পরিচালনায় এই ছবির নায়িকা ছিলেন প্রিয়ঙ্কা ত্রিবেদী।
বক্স অফিসে সুপারহিট না হলেও এই ছবির অনুসরণে পরে বলিউডে তৈরি হয়েছিল ‘সির্ফ তুম’। ভারত-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ফিরদৌস-প্রিয়ঙ্কা জুটির ‘হঠাৎ বৃষ্টি’-ও তামিল ছবি ‘কডহাল কোট্টাই’-এর অনুসরণে তৈরি।
এটাই ছিল প্রিয়ঙ্কার প্রথম ছবি। তার ছ’ বছর আগে তিনি ‘মিস ক্যালকাটা’ শিরোপা পেয়েছিলেন। প্রিয়ঙ্কার জন্ম কলকাতাতেই। ১৯৭৭ সালের ১২ নভেম্বর।
প্রিয়ঙ্কার দ্বিতীয় ছবি অঞ্জন দত্তের পরিচালনায় ‘বড়া দিন’। এরপর তিনি অভিনয় করেন ‘সৌতেলা’-য়। একটি বাংলা এবং দু’টি হিন্দি ছবির পরেই প্রিয়ঙ্কা পাড়ি দেন দক্ষিণে। ২০০২ সালে মুক্তি পায় তাঁর প্রথম তেলুগু ছবি ‘রা’।
ক্রমে দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম মুখ হয়ে ওঠেন তিনি। পাশাপাশি চলতে থাকে হিন্দি ও বাংলা ছবিতে অভিনয়ও। ২০০২ সালে মুক্তি পায় হরনাথ চক্রবর্তী পরিচালিত ‘সাথী’। জিৎ-প্রিয়ঙ্কা জুটির এই ছবি ছিল টলিউডের ব্লকবাস্টার।
সুপারহিট হয়েছিল ছবির গানও। রেডিয়ো থেকে পুজো প্যান্ডেল—‘ও বন্ধু তুমি শুনতে কি চাও’-এর কাছে হার মেনেছিল সমসাময়িক বাকি সব সুর। সেই সময়ের বাংলা ছবির প্লে ব্যাক গানের মরা গাঙে স্রোত এনেছিল জনপ্রিয় এই গানটি।
মূল গানের পাশাপাশি ‘সাথী’ ছবির বাকি গানও দর্শক-শ্রোতার পছন্দের শীর্ষে ছিল। তবে এই তুমুল জনপ্রিয়তার পরেও টালিগঞ্জের এক নম্বর নায়িকার দৌড়ে দেখা যায়নি প্রিয়ঙ্কাকে।
তাঁর পাখির চোখ ছিল দক্ষিণী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি-ই। তামিল ছবির জনপ্রিয় নায়িকা প্রিয়ঙ্কা আবার বাংলা ছবিতে অভিনয় করেন ২০০২ সালে। বাসু ভট্টাচার্যের পরিচালনায় আবার তিনি জুটি বাঁধেন ফেরদৌসের সঙ্গে। মুক্তি পায় ‘টক ঝাল মিষ্টি’।
২০০৩-এ হরনাথ চক্রবর্তীর পরিচালনায় ‘সঙ্গী’ ছবিতে দর্শকরা আবার পেয়েছিলেন জিৎ-প্রিয়ঙ্কা জুটিকে। তবে তাঁদের প্রথম ছবির ম্যাজিক বক্সঅফিসে আর ফিরে আসেনি।
প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের বিপরীতে প্রিয়ঙ্কা প্রথম অভিনয় করেন ‘অগ্নিপরীক্ষা’ ছবিতে। রবি কিনাগি পরিচালিত এই ছবি মুক্তি পেয়েছিল ২০০৬-এ।
প্রসেনজিৎ-প্রিয়ঙ্কা জুটিকে আবার পাওয়া যায় ‘গোলমাল’ ছবিতে। স্বপন সাহা পরিচালিত ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ২০০৮-এ। ছবির বাকি শিল্পীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন টোটা রায়চৌধুরী ও যিশু সেনগুপ্ত। প্রিয়ঙ্কা অভিনীত আরও দু’টি ছবি হল ‘অমর প্রতিজ্ঞা’ এবং ‘অপরাধী’।
‘গোলমাল’-এর পরে বাংলা ছবির ইন্ডাস্ট্রি থেকে কার্যত হারিয়েই যান প্রিয়ঙ্কা। আবার তিনি ফিরে আসেন ২০১১-এ। নন্দিতা রায়-শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় অভিনয় করেন ‘হ্যালো মেমসাহেব’-এ। এই ছবিতেও তাঁর নায়ক জিৎ।
এরপর বাংলা ছবিতে প্রিয়ঙ্কাকে আর দেখা যায়নি। এখানকার দর্শকদের মনে হয়েছিল তিনি হয়তো অভিনয় ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু আদপেই তা নয়। বরং, প্রিয়ঙ্কা দাপটের সঙ্গে কাজ করছিলেন তামিল ও কন্নড় ছবিতে।
প্রিয়ঙ্কার ফিল্মোগ্রাফিতে তামিল ও কন্নড় ছবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘এইচ টু ও’, ‘আইস’, ‘রাজা’, ‘শ্রীমতী’ এবং ‘দেবকী’।
তবে এখন আর তিনি প্রিয়ঙ্কা ত্রিবেদী নন। ২০০৩ সালে কন্নড় ছবির অভিনেতা-পরিচালক-প্রযোজক উপেন্দ্র রাও-কে বিয়ের পর থেকে তিনি প্রিয়ঙ্কা উপেন্দ্র। প্রিয়ঙ্কার সুপারহিট ছবি ‘রা’ এবং ‘এইচ টু ও’-তে উপেন্দ্রই ছিলেন নায়ক।
বিনোদন জগতের বাইরে উপেন্দ্রর অন্য পরিচয়ও আছে। তিনি একজন রাজনীতিক। ২০১৭-এ তিনি যোগ দেন ‘কর্নাটক প্রাজ্ঞবন্ত জনতা পক্ষ’ দলে। পরের বছরই মনোমালিন্যের জেরে দল ছেড়ে দেন। তৈরি করেন নতুন দল ‘উত্তম প্রজাকীয় পার্টি’।
উপেন্দ্র-প্রিয়ঙ্কার দুই সন্তান। ছেলে আয়ুষ এবং মেয়ে ঐশ্বর্যা। অভিনয় এবং ঘরকন্না সামলানোর পাশাপাশি প্রিয়ঙ্কা এখনও নিয়মিত অংশ নেন বিভিন্ন ফ্যাশন শো-এ।
জিতের কেরিয়ারে পঞ্চাশতম ছবিতে অভিনয় উপলক্ষে দু’ বছর আগে তাঁকে অভিনন্দন জানান প্রিয়ঙ্কা। জিতের সঙ্গে নিজের একটি সাম্প্রতিক ছবিও পোস্ট করেছিলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেই ছবি ঘিরে অনুরাগীদের উচ্ছ্বাস ফিরিয়ে এনেছিল এই জুটির প্রথম ছবির স্মৃতি।