যেমন বানানের অবস্থা, তেমনই ব্যাকরণের হাল। অথচ মনে গিজগিজ করছে গল্প। শেষে কবি স্বামী দাঁড়ালেন পাশে। স্বামীর উৎসাহে স্কুলছুট স্ত্রী-ও লিখতে শুরু করলেন। কিন্তু সেই স্বামী একদিন ‘প্রাক্তন’ হয়ে গেলেন। সিঙ্গল মাদার হিসেবে স্ত্রী বড় করলেন দুই সন্তানকে। তাঁর নিজের লেখা চিত্রনাট্যের থেকে কোনও অংশ কম বর্ণময় নয় হানি ইরানির নিজের জীবনও। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
জ্ঞান হওয়ার আগে থেকেই হানি ইরানি অভিনয় করছেন হিন্দি ছবিতে। ১৯৫৪ সালে, মাত্র আড়াই বছর বয়সে হানির ইন্ডাস্ট্রিতে পথ চলা শুরু। পাঁচের দশকে বেশ কিছু ছবিতে শিশুশিল্পী ছিলেন ইরানি। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘চিরাগ কঁহা রোশনি কঁহা’ এবং ‘বম্বে কা চোর’। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
গুজরাতের এক পার্সি জরথ্রুস্টিয়ান পরিবারে জন্ম হানির। আরও দুই বোন ডেইজি এবং মেনকার সঙ্গে বড় হন হানি। ডেইজি-ও ছিলেন শিশুশিল্পী। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
পরে এক সাক্ষাৎকারে হানি জানান, ছোটবেলায় তাঁর শুটিং করতে যেতে ভাল লাগত না। মাঝে মাঝে এমনও হত, আইসক্রিমের লোভ দেখিয়ে তাঁকে স্টুডিয়োয় নিয়ে যাওয়া হত। কিন্তু তখনকার তারকাদের কাছ থেকে যা ভালবাসা পেয়েছেন, ভুলতে পারেন না বলে জানান হানি। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
সিনেমায় অভিনয়ের জেরে ব্যাহত হয় হানির পড়াশোনাও। শুটিংয়ের জন্য অনুপস্থিত থাকতেন স্কুলে। ফলে তাঁকে আর বোন ডেইজিকে বারবার স্কুল পাল্টাতে হয়েছে। শেষে বাড়িতে প্রাইভেটে পড়াশোনার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু সে ব্যবস্থাও ছিল মাত্র দশ বছর বয়স অবধি। পড়াশোনা শেষ করতে না পারার আক্ষেপ হানিকে ছেড়ে যায়নি কোনওদিন। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
কৈশোরেও হানি অভিনয় করেছিলেন বেশ কিছু ছবিতে। ছয় ও সাতের দশকের সেই বক্সঅফিস সফল ছবিগুলি হল ‘মাসুম’, ‘সীতা অউর গীতা’, ‘অমর প্রেম’ এবং ‘কাটি পতঙ্গ’। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
১৯৭২ সালে মুক্তি পায় সুপারহিট ছবি ‘সীতা অউর গীতা’। ছবির সেটে জাভেদ আখতারের সঙ্গে আলাপ হয় হানির। দু’জনে বিয়ে করেন ১৯৭২ সালের ২১ মার্চ। তখন হানির বয়স মাত্র উনিশ বছর। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
সে সময় হানির কেরিয়ার এক অদ্ভুত জায়গায় দাঁড়িয়ে। ইন্ডাস্ট্রিতে শিশুশিল্পী হিসেবে তাঁর ভূমিকা ফুরিয়েছে। আবার প্রাপ্তবয়স্ক অভিনেত্রী হয়েও জায়গা করে নিতে পারেননি। চিত্রনাট্যকার হানি তখন পায়ের তলায় শক্ত জমি খুঁজতে শুরু করেছেন। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
নায়িকা হওয়ার ইচ্ছে হানির ছিল না। চেয়েছিলেন, ক্যামেরার পিছনে কাজ করতে। কিন্তু সে পথেও এগোতে পারলেন না। ১৯৭২ সালে বিয়ের পরে মাথাগোঁজার ঠাঁই অবধি ছিল না। কিছুদিন থাকতে হয়েছিল দিদি মেনকার বাড়ির একটি ঘরে। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
১৯৭২ সালে জন্ম জাভেদ-হানির কন্যা জোয়া-র। তার দু’বছর পরে জন্ম পুত্র ফারহানের। এরপর হানিকে বাধ্য হয়ে সব কাজ ছেড়ে পুরোপুরি গৃহবধূর ভূমিকা পালন করতে হয়। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
সাতের দশকের মাঝামাঝি থেকে জাভেদ-হানির সম্পর্কে ভাঙন। ১৯৭৮ সালে স্বামীর থেকে আলাদা হয়ে যান হানি। ছ’বছরের মেয়ে এবং চার বছরের ছেলেকে নিয়ে একা থাকতে শুরু করেন হানি। ১৯৮৫ সালে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ। তার আগেই ১৯৮৪ সালে শাবানা আজমিকে বিয়ে করেন জাভেদ। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
জাভেদের সঙ্গে বিচ্ছেদ, একা হাতে দুই সন্তানকে বড় করে তোলা— এত সব প্রতিকূলতা পেরিয়ে আবার শুরু করলেন লেখালেখি। ছোটগল্প লিখতেন তিনি। এমনকি শাড়িতে এম্ব্রয়ডারিও করতেন। এ সময় তাঁর পাশে দাড়িয়েছিলেন যশ চোপড়া ও তাঁর স্ত্রী পামেলা চোপড়া। কয়েক বছরের মধ্যেই চিত্রনাট্যকার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন হানি। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
১৯৯৩ সালে দূরদর্শনের জন্য একটি গল্পের খসড়া পামেলা চোপড়াকে শোনান হানি। কিন্তু তার থেকে ‘আয়না’ ছবি তৈরি করেন প্রযোজক পামেলা। তার আগেই অবশ্য চিত্রনাট্যকার হিসেবে হানির হাতেখড়ি হয়ে গিয়েছে। ১৯৯১ সালে, ‘লমহে’ ছবিতে। চিত্রনাট্যকার হিসেবে এই ছবির জন্য পুরস্কৃত হন হানি। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
এরপর হানির গল্প বা চিত্রনাট্য বক্সঅফিসে সফল হয়েছে বারবার। তাঁর কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘ডর’, ‘সুহাগ’, ‘অউর প্যায়ার হো গ্যয়া’, ‘যব প্যায়ার কিসি সে হোতা হ্যায়’, ‘কহো না প্যায়ার হ্যায়’, ‘কেয়া কহেনা’, ‘কোই মিল গ্যয়া’, ‘কৃষ’ এবং ‘কৃষ থ্রি’। এ সব ছবির কোনওটায় হানি চিত্রনাট্যকার, কোনওটায় গল্পকার। কোনওটায় আবার তিনি দু’টি ভূমিকাতেই। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
হানির দাবি, ‘দিলওয়ালে দুলহনে লে জায়েঙ্গে’ ছবির আইডিয়াও তাঁরই। কিন্তু ছবির টাইটেল কার্ডে সেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ২০০৩ সালে মুক্তি পায় হানির পরিচালিত একটিমাত্র ছবি ‘আরমান’। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
হানির দুই সন্তান জোয়া এবং ফারহান দু’জনেই বলিউডের উজ্জ্বল নক্ষত্র। পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার হওয়ার পাশাপাশি ফারহান একজন প্লেব্যাক সিঙ্গার, প্রযোজক, অভিনেতা এবং সঞ্চালক। জোয়া-ও একজন সফল পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার। দু’জনের সঙ্গেই তাঁদের বাবা জাভেদ আখতারের সম্পর্ক ভাল। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)