সারা আলি খান।
প্র: অতিমারিপীড়িত দু’বছরে পেশা নিয়ে কতটা চিন্তিত ছিলেন আপনি?
উ: ২০২০ সাল আমার একেবারে ভাল কাটেনি। মা (অমৃতা সিংহ) সব সব সময়ে একটা কথা বলতেন যে, প্রয়োজনের সময়ে হাতে কাজ থাকা আশীর্বাদের মতো। এই কথাটার মর্মার্থ বুঝতে পারিনি। কিন্তু ২০২০ সালের শেষে যখন আনন্দ স্যর (এল রাই, পরিচালক) ‘অতরঙ্গি রে’-এর জন্য আমাকে প্রস্তাব দিলেন, মায়ের কথার গূঢ়ার্থ কিছুটা বুঝেছিলাম। আমার মনোবল খানিকটা হলেও বেড়েছিল।
প্র: আপনার শেষ হল রিলিজ় ‘লাভ আজ কাল’ বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়েছিল। ভেঙে পড়েছিলেন তখন?
উ: ছবিটা একেবারেই চলেনি, এটা ঠিক। দর্শক ও সংবাদমাধ্যমের জন্য অভিনয় করি। কিন্তু তাঁদেরই ভাল লাগেনি ছবিটা। আমি অভিনয় করতে পারি না—অনেকের মুখেই এমন কথা শুনেছিলাম। লেখালিখিও হয়েছিল। তখন আমার কাছে দুটো বিকল্প ছিল। বাড়িতে বসে কাঁদতে কাঁদতে আইসক্রিম খাওয়া, নয়তো সব কিছু ভুলে এগিয়ে চলা। দ্বিতীয় বিকল্পটাই বেছে নিয়েছিলাম।
প্র: কেরিয়ারের শুরুতেই সাফল্য দেখেছেন, আবার ব্যর্থতাও। এই অভিজ্ঞতাগুলো কতটা সমৃদ্ধ করে আপনাকে?
উ: আমার প্রথম ছবি ‘কেদারনাথ’ এবং পরে ‘সিম্বা’র জন্য প্রশংসা পেয়েছি। আবার ‘লাভ আজ কাল’-এর পরে কড়া সমালোচনাও শুনতে হয়েছে। তখন মা-বাবা একটা কথাই বলেছেন, মন দিয়ে কাজটা করে যাও। কঠিন সময়ের মোকাবিলা করেছি। পালিয়ে যাইনি।
প্র: অক্ষয়কুমার, ধনুষের মতো সিনিয়র তারকাদের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
উ: এই ইন্ডাস্ট্রির একটা বড় গুণ হল, সেটে আমরা সকলে বড় পরিবারের মতো। ধনুষ যেন থালাইভা (হাসি)! অক্ষয় স্যর দেশের অন্যতম বড় তারকা। আর আনন্দ স্যর নিজেই একটা প্রতিষ্ঠানের মতো। ওঁর ছবির সেটে আমি প্রতিটা দিন দারুণ উপভোগ করেছি। সেটে যাঁরা লাইটের কাজ করেন বা চা দেন, সকলেই যেন এক পরিবারের অংশ। আনন্দ স্যরের দৃষ্টিভঙ্গির উপরে পুরো ভরসা রেখে কাজটা করেছি।
প্র: জাহ্নবী কপূর এখন আপনার প্রিয় বন্ধু। তার মানে দু’জন অভিনেত্রী ভাল বন্ধু হতে পারেন?
উ: আমি কিন্তু রাধিকার (মদন) সঙ্গেও বেড়াতে গিয়েছিলাম। করোনাভাইরাস আমাদের সকলের জীবন থেকে দুটো বছর কেড়ে নিয়েছে। অন্যদের চেয়ে আমরা হয়তো এর যন্ত্রণা একটু বেশি উপলব্ধি করেছি। কারণ সবে কেরিয়ার শুরু করেছিলাম। আমরা কেউ কারও প্রিয় বন্ধু নই। প্রত্যেকের আলাদা ফ্রেন্ড সার্কল আছে। মানুষ হিসেবেও একে অন্যের চেয়ে অনেকটা আলাদা। তবে আমরা একে অপরের সমব্যথী। শুধু সমসাময়িক বলেই কি নিজেদের মধ্যে লড়াই করতে হবে?
প্র: অনেকেই আপনার মধ্যে অমৃতা সিংহের ছায়া দেখতে পান। এটা শুনতে কেমন লাগে?
উ: মা আমার প্রিয় বন্ধু। অভিনেত্রী হিসেবেও দুর্দান্ত। আর মা খুব সুন্দরী। তাই মায়ের সঙ্গে আমার কেউ এতটুকু মিল খুঁজে পেলে, আমার দারুণ লাগে। সত্যি নিজেকে ধন্য বলে মনে করি।
প্র: বলিউডে এখনও পারিশ্রমিক বা অন্য সুযোগ-সুবিধের ক্ষেত্রে অভিনেতা এবং অভিনেত্রীদের মধ্যে ফারাক রয়েছে। কী বলবেন?
উ: এখনও অবধি আমার তেমন কোনও অভিজ্ঞতা হয়নি। রণবীর (সিংহ), বরুণের (ধওয়ন) মতো তারকাদের সঙ্গে যেমন কাজ করেছি, তেমনই ধনুষ এবং অক্ষয় স্যরের মতো সিনিয়র অভিনেতাদের সঙ্গেও কাজ করেছি। সকলের কাছ থেকেই সেটে ভালবাসা এবং সহযোগিতা পেয়েছি। তাই কে আমার চেয়ে বেশি সুবিধে পাচ্ছে, সেই বিশ্লেষণ করার সাহস আমার নেই।
প্র: ব্যক্তিগত জীবনে আপনি কতটা ‘অতরঙ্গি’?
উ: আমি মনেপ্রাণে ‘অতরঙ্গি’। আমার মনে যা আসে, তা আমি সোজাসুজি বলে দিতে পারি। মাথায় তেল মেখে এয়ারপোর্টে চলে যেতে পারি। বিনা মেকআপে সাক্ষাৎকার দিতে যেতে পারি। নিজেই যদি নিজেকে গ্রহণ করতে না পারি, তবে অন্য কেউ কী ভাবেই বা আমাকে মেনে নেবে?