আফসান নুর আজাদ। ৩২ বছরের এক ব্রিটিশ অভিনেত্রী এবং মডেল। ‘হ্যারি পটার’-এর পদ্ম পাটিল। ‘হ্যারি পটার’-এর প্রতিটি সিরিজেই আফসানকে দেখা গিয়েছিল। সম্প্রতি তিনি একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দিলেন। ইন্সটাগ্রামে নিজেই সে কথা জানালেন মঙ্গলবার।
‘হ্যারি পটার’-এর মতো সফল ছবিতে অভিনয় করে যত না পরিচিতি পেয়েছিলেন তিনি, তার চেয়ে অনেক বেশি চর্চা হয়েছিল তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে।
আসলে পর্দায় যতটা প্রাণবন্ত লেগেছিল আফসানকে, তাঁর বাস্তব জীবন কিন্তু তেমনটি ছিল না। ব্যক্তিগত জীবনে আফসান কট্টরপন্থী ভাবধারার শিকার হয়েছিলেন। হিন্দু ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলায় পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে তাঁকে তাঁর বাবা-ভাই খুন পর্যন্ত করতে গিয়েছিলেন!
আফসানের জন্ম ম্যাঞ্চেস্টারে হলেও তাঁর পূর্বপুরুষ বাংলাদেশের বাসিন্দা। আফসান আসলে এক বাংলাদেশি মুসলিম পরিবারের মেয়ে।
সেটা ২০১১। আফসান তখন ২২। ‘হ্যারি পটার’-এর সৌজন্যে তখন তিনি অত্যন্ত পরিচিত মুখ। ‘হ্যারি পটার’-এর শেষ সিরিজও মুক্তি পেয়ে গিয়েছে।
সে দিন বাড়িতেই ছিলেন আফসান। দোতলায় শৌচাগারে স্নান করতে ঢুকেছিলেন। মোবাইল ফোনে লুকিয়ে প্রেমিকের সঙ্গে কথা বলছিলেন তিনি।
তখনই শুনতে পেয়ে যান তাঁর ভাই আশরফ। শৌচাগারের দরজা ভেঙে তাঁর চুল ধরে চেনে হিঁচড়ে বাইরে বার করে আনেন তাঁকে।
তারপর দেওয়ালে কয়েক বার মাথা ঠুকে টানতে টানতে নীচের তলায় বাবার ঘরে নিয়ে যান। বাবা তখন বিছানায় বসে ছিলেন। সেই খাটে মাথা ঠুকে ফেলে দেন আফসানকে।
মেয়ের ‘কীর্তি’ জানার পর ছেলেকে প্রতিহত করার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করেননি বাবা বরং উল্টে ছেলেকে নির্দেশ দেন মেয়েকে খুন করে ফেলার।
তত ক্ষণে আফসানের চিৎকার শুনে ঘরে ছুটে এসেছেন তাঁর বৌদি এবং মা-ও। আশ্চর্যের বিষয় ছিল, তাঁরাও কেউ আফসানের পাশে দাঁড়াননি।
আফসানের সারা গায়ে-মুখে কালশিটে পড়ে গিয়েছিল। চোখ, ঠোঁটের চারপাশ ফুলে উঠেছিল। সেই অবস্থাতেই তাঁকে দোতলার একটি ঘরে বন্দি করে রেখে তাঁর প্রেমিকের খোঁজে বেরিয়ে যান দাদা।
মা-বৌদিও আফসানকে হুমকি দিয়ে যান। আফসানের সামনে তখন দু’টি শর্ত রাখেন তাঁরা। হয় তাঁকে বাংলাদেশে নিয়ে গিয়ে পরিবারের পছন্দ মতো কোনও পাত্রকে বিয়ে করতে হবে তা না হলে পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে তাঁকে খুন করা হবে।
অত্যন্ত ভয় পেয়েছিলেন আফসান। কী করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। ঘর যেখানে সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়, সেই ঘরই তাঁকে মৃত্যুভয়ে জর্জরিত করে তুলেছিল। সুযোগ বুঝে দোতলার ঘর থেকে ঝাঁপ দিয়ে পালিয়ে যান।
তারপর সোজা থানায় গিয়ে গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগ দায়ের করেছিলেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নেয় পুলিশও। দাদা এবং বাবাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে বাবা জামিনে ছাড়া পেয়ে যান কিন্তু দাদার ৬ মাসের জন্য জেল হয়।
আফসান যদিও সকললেই ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। নিজে চিঠি লিখে দাদার মুক্তি চেয়েছিলেন বিচারকের কাছে। তাঁর চিঠির বয়ান ছিল, দাদাকে তিনি ক্ষমা করে দিয়েছেন তাই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হোক। যদিও বিচারক অপরাধের গুরুত্ব বুঝে দাদার শাস্তি নাকচ করেননি।
তারপর অনেকগুলো বছর কেটে গিয়েছে। পরিবারের সঙ্গে থেকেছেন আফসান। পরিবার তাঁর সঙ্গে কী ব্যবহার করত? এরপরও কোনও দিন হিংসার শিকার হতে হয়েছিল কি না, সে সব নিয়ে আর কখনও মুখ খুললে দেখা যায়নি আফসানকে। তাঁর সেই প্রেমিকেরই বা কী হল, তাও জানা যায়নি।
আফসান নিজে একজন মডেল এবং অভিনেত্রী। ‘হ্যারি পটার’ আর কোনও ছবি তিনি করেননি। তবে টুকটাক মডেলিং করে থাকেন।
২০১৮ সালে পরিবারের সম্মতিতে নাবিল কাজি নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তাঁদের বিয়েতে হ্যারি পটার সিরিজের একাধিক অভিনেতা হাজির ছিলেন।
বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ির একাধিক ছবি ইনস্টাগ্রামে অনুরাগীদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে শুরু করেন আফসান।
এপ্রিলে একটি পোস্ট করে তিনি সমস্ত অনুরাগীদের সন্তানসম্ভবা হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। সম্প্রতি একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দিলেন।