ইন্ডাস্ট্রিতে ‘স্বজন’ থাকলেও যে সকলে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেন না, সেই তালিকার অন্যতম নাম হরমন বাওয়েজা। বলিউডে প্রখ্যাত পরিচালক-প্রযোজক দম্পতির ছেলে হয়েও তিনি পরিচিত হয়েছেন ‘হৃতিক রোশনের ডুপ্লিকেট’ বলে।
চণ্ডীগড়ে তাঁর জন্ম ১৯৮০ সালের ১৩ নভেম্বর। মুম্বইয়ে স্কুলপর্বের পরে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি দেন লস অ্যাঞ্জেলস। পড়াশোনা করেন ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফর্নিয়ায়। পরে প্রশিক্ষণ নেন কিশোর নমিত কপূর অ্যাক্টিং ইনস্টিটিউট-এ।
হরমনের বাবা হরযশপল বাওয়েজা ইন্ডাস্ট্রিতে পরিচিত পরিচালক হ্যারি বাওয়েজা নামে। হ্যারির স্ত্রী পম্মি একজন প্রযোজক। তাঁদের যৌথ সংস্থার নাম ‘বাওয়েজা মুভিজ’।
হরমন ছাড়াও বাওয়েজা দম্পতির একটি মেয়ে আছেন। তাঁর নাম রোওয়েনা। তিনি পেশায় সিনেম্যাটোগ্রাফার।
হরমন প্রথম অভিনয় করেন ২০০৮ সালে। সে বছরই মুক্তি পায় তাঁর ছবি ‘লভ স্টোরি ২০৫০’। সাই-ফাই রোমান্টিক এই ছবির পরিচালক ছিলেন তাঁর বাবা। প্রযোজনা করেছিলেন তাঁর মা।
বক্স অফিসে চূড়ান্ত ব্যর্থ হয় হরমনের প্রথম ছবি। ছবিটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল মোট ৪০ কোটি টাকা। মুক্তির পরে এই ব্যয়ের অর্ধেকও উপার্জন করতে পারেনি ছবিটি।
পরের বছর সম্পূর্ণ অন্য স্বাদের ছবির নায়ক হন হরমন। ক্রিকেট নিয়ে এই ছবির নাম ছিল ‘ভিক্ট্রি’।
এই ছবিতে অংশ নিয়েছিলেন মোহিন্দর অমরনাথ, অ্যালান বর্ডার, স্টুয়ার্ট ক্লার্ক, মার্টিন ক্রো, ব্র্যাড হগ, মাইক হাসি, সুরেশ রায়না, রোহিত শর্মা, দিনেশ কার্তিক, ব্রেট লি, অজন্তা মেন্ডিস, সনৎ জয়সূর্য-সহ দেশ বিদেশের বহু প্রাক্তন ও বর্তমান ক্রিকেটার।
কিন্তু এত তারকা সমাবেশেও শেষরক্ষা হয়নি। বক্স অফিসে হরমন বাওয়েজার প্রথম ছবির থেকেও ব্যর্থ হয় ‘ভিক্ট্রি’। নায়ক হিসেবে ইন্ডাস্ট্রি-জয় অধরাই থেকে যায় হরমনের কাছে।
২০০৯ সালে আরও একটি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন হরমন। আশুতোষ গোয়ারিকর পরিচালিত সেই ছবির নাম ছিল ‘হোয়াটস ইয়োর রাশি?’
ছবিতে হরমনের বিপরীতে ১২টি আলাদা চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন প্রিয়ঙ্কা চোপড়া। কিন্তু এই ছবিরও লক্ষ্মীভাগ্যে মন্দা। বক্স অফিসে ব্যর্থ হয় ছবিটি।
পর পর তিনটি সুযোগ পেয়েও ব্যর্থ হরমনের কাছে আর কোনও ছবির অফার আসেনি। বলিউড থেকে ধীরে ধীরে হারিয়েই যান এই পরিচালক-পুত্র।
আবার ফিরে আসেন বছর পাঁচেক পরে। তাঁকে দেখা যায় ‘ঢিশকিয়াঁও’ ছবিতে। কিন্তু কামব্যাকের পরে দ্বিতীয় ইনিংসেও হরমনের ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়নি।
তাঁর প্রথম ছবিগুলির মতো ব্যর্থ হয় ‘ঢিশকিয়াঁও’-ও। এর পর তিনি সম্পূর্ণ বিস্মৃত হয়ে যান টিনসেল টাউন থেকে।
বছর তিনেক পরে সম্পূর্ণ অন্য কারণে খবরে আসেন হরমন। তাঁর একটি ছবি ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে তাঁকে দেখে চোখ কপালে উঠে গিয়েছিল সকলের। নতুন চেহারায় অত্যন্ত ভারী ওজনের হরমনকে সে সময় চেনাই দায়।
এক সময় হৃতিকের সঙ্গে তুলনা করা হত হরমনকে। অভিযোগ ছিল তিনি হৃতিকের ম্যানারিজম নকলও করেন। তবে এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। স্পষ্ট জানিয়েছিলেন হৃতিকের সঙ্গে তুলনা তাঁর না-পসন্দ।
অতীতের সেই সুদর্শন হরমনকে নতুন চেহারায় দেখে হতাশ হন দর্শকরা। সর্বত্র বডি শেমিংয়ের শিকার হন তিনি।
কেরিয়ারে হালে পানি না পেলেও হরমনকে নিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে গুঞ্জন কোনও সময় কম ছিল না। নিজের নায়িকাদের সঙ্গে বার বার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন তিনি।
প্রথম ছবির নায়িকা প্রিয়ঙ্কা ছিলেন তাঁর এক সময়ের প্রেমিকা। বিভিন্ন সময়ে প্রিয়ঙ্কাকে নিয়ে তাঁর তীব্র অধিকারবোধও ধরা পড়ে গিয়েছিল। তবে তাঁদের প্রেম বেশি দিন স্থায়ী হয়নি।
বিচ্ছেদের কারণ প্রসঙ্গে প্রিয়ঙ্কা কোনও দিন মুখ খোলেননি। তবে শোনা যায় ফ্লপ নায়কের সঙ্গে সম্পর্কে তাঁর কোনও আগ্রহ ছিল না। যদিও হরমনের দাবি, তিনি প্রিয়ঙ্কাকে সময় দিতে পারেননি বলেই তাঁদের সম্পর্ক ভেঙে যায়।
এর পর ২০১৪ সালে বিপাশা বসু নিজেই জানান তিনি হরমনের সঙ্গে ডেট করছেন। কিন্তু তাঁদের ঘনিষ্ঠতা স্থায়ী ছিল মাত্র কয়েক মাসের জন্য। ব্যর্থ নায়কের সঙ্গে বেশি দিন ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখতে আপত্তি ছিল বিপস-এরও।
তাঁর আর এক নায়িকা অমৃতা রাওয়ের সঙ্গেও হরমনের প্রেমের গুঞ্জন উঠেছিল। ‘নিঃশব্দ’ অভিনেত্রী প্রয়াত জিয়া খানকে নিজের দীর্ঘ দিনের পুরনো বান্ধবী বলতেন হরমন।
ব্যর্থ নায়ক এবং হতাশ প্রেমিক হরমন অবশেষে জীবনে নতুম পর্বে পা রাখলেন। সদ্য তাঁর বাগদান হয়ে গেল সাশা রামচন্দনির সঙ্গে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁদের ‘রোকা’ অনুষ্ঠানের ছবি শেয়ার করেছেন হরমনের বোন রোয়েনা এবং জাহির খানের স্ত্রী সাগরিকা ঘাটগে।
হরমনের হবু স্ত্রী সাশা পেশায় এক জন ‘ওয়েলনেস এক্সপার্ট’। জীবনে ভাল থাকার মূলমন্ত্র শেখান তিনি। আছে নিজস্ব ব্লগও। বিয়ের পরে অর্ধাঙ্গিনীর সান্নিধ্যে জীবনের নতুন স্বাদ পাবেন এই বিস্মৃত নায়ক। আশা সিনেপ্রেমীদের।