বলিউডের অন্যতম প্রভাবশালী খান পরিবারের সদস্য। দাদা, সুপারস্টার আমির খান। প্রত্যাশাপূরণে ব্যর্থ ফয়জল খান অবসাদের জেরে মানসিক রোগের শিকার হন। তার পরে আবার ফিরে আসেন জীবনের ছন্দে। কিন্তু বলিউডে সফল কেরিয়ার তাঁর কাছে অধরাই থেকে যায়।
প্রযোজক তাহির হুসেনের ছেলে ফয়জলের জন্ম ১৯৬৬ সালের ৩ অগস্ট। মাত্র তিন বছর বয়সেই প্রথম অভিনয়। কাকা নাসির হুসেনের প্রযোজনায় ‘প্যায়ার কা মওসম’ ছবিতে শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন ফয়জল।
সেই ছবিতে তিনি রূপায়িত করেছিলেন নায়ক শশী কপূরের শৈশবের অংশ। পরিণত বয়সে তাঁর প্রথম অভিনয় দাদা আমির খানের সুপারহিট ছবি ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’-এ। সেখানে তিনি খলনায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন।
তাহির হুসেনের প্রযোজনায় আমির-জুহির ‘তুম মেরে হো’ ছবিতে সহকারী পরিচালক ছিলেন ফয়জল। একটি ছোট ভূমিকায় অভিনয় করেন ‘জো জিতা ওহি সিকন্দর’ ছবিতেও।
তাঁকে নায়কের ভূমিকায় বলিউড প্রথম পায় ১৯৯৪ সালে, ‘মদহোশ’ ছবিতে। তাহির হুসেনের প্রযোজনায় এবং বিক্রম ভট্টের পরিচালনায় এই ছবি বক্স অফিসে সফল হয়নি। পরে এক সাক্ষাৎকারে ফয়জল নিজেও স্বীকার করেন, ছবিতে তাঁর অভিনয় দুর্বল ছিল।
কয়েক বছর বিরতির পরে আবার সিনেমায় ফিরে আসেন ফয়জল। ২০০০ সালে মুক্তি পায় ধর্মেশ দর্শনের পরিচালনায় ‘মেলা’। দাদা আমিরের পাশাপাশি এ ছবিতে নায়ক ছিলেন ফয়জলও। কিন্তু এই ছবিও সফল হয়নি।
‘দুশমনি’, ‘বর্ডার হিন্দুস্তান কা’, ‘বস্তি’, ‘চাঁদ বুঝ গয়া’-সহ কিছু ছবিতে অভিনয় করেন ফয়জল। কিন্তু এর মধ্যে কোনও ছবি-ই বক্স অফিসে লক্ষ্মীলাভ করেনি।
টেলি সিরিজ ‘আঁধি’-তেও কাজ করেন ফয়জল। রাজেশ খন্নার সুপারহিট ছবি ‘কাটি পতঙ্গ’-এর কাহিনি অনুসারে তৈরি হয়েছিল এই সিরিজ। কিন্তু সেখানেও তাঁর নামের পাশে ‘ব্যর্থ’ তকমা রয়েই যায়।
কেরিয়ারের পাশাপাশি ঝড় ওঠে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনেও। গুঞ্জন, লন্ডনের হ্যান্ডব্যাগ ডিজাইনার ডিজাইনার সামিয়া কামরুদ্দিনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে এই সময়েই ভেঙে যায়। জীবনের সব দিকে ধাক্কা খেয়ে মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন ফয়জল। শোনা যায়, ২০০২ সাল নাগাদ তাঁর মধ্যে মানসিক রোগের উপসর্গ ধরা পড়ে।
শেষ অবধি প্যারানয়েড স্কিৎজোফ্রেনিয়া আক্রান্ত ফয়জলকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। বাড়ি ফেরার পরে ২০০৭ সালে দু’দিনের জন্য নিখোঁজ হয়ে যান ফয়জল। তাঁকে উদ্ধার করে মুম্বইয়ে ফিরিয়ে আনা হয় পুণে থেকে।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় আমিরের সঙ্গে ফয়জলের সঙ্ঘাত চরমে ওঠে। ফয়জল অভিযোগ করেন, তিনি অসুস্থ নন। কিন্তু জোর করে তাঁকে বাধ্য করা হচ্ছে ওষুধ খেতে।
ফয়জলের অভিযোগ ছিল, তাঁকে জোর করে ফ্ল্যাটে বন্দি করে রাখছেন আমির। এই মামলা গড়ায় আদালত অবধি। এমনকি, তাহিরও অভিযোগ করেন, আমির দুর্ব্যবহার করেছেন ভাইয়ের সঙ্গে। শেষ অবধি চিকিৎসাধীন ফয়জলের কাস্টডি পান তাঁর বাবা তাহির-ই।
শুধু আমির-ই নন। ফয়জল সে সময় সন্দেহ করতেন তাঁর চারপাশের সবাইকে। তাঁর অসংলগ্ন কথাবার্তার জেরে সন্দেহের শিকার হন আমিরও। তবে শেষ অবধি শোনা যায়, দুই ভাইয়ের মধ্যে সব ভুল বোঝাবুঝি দূর হয়েছে। এমনকি, ফয়জলের চিকিৎসার ব্যয়ও নাকি বহন করছেন আমির-ই।
২০১৫ সালে আরও এক বার অভিনয়ে ফেরেন ফয়জল। ‘চিনার-দস্তান-এ-ইশক’ ছবিতে নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি। কিন্তু বক্স অফিসে ভরাডুবি হয় এই ছবিটিরও।
২০১৯-এ শোনা গিয়েছিল, ফয়জল তাঁর প্রথম ছবি পরিচালনা করতে চলেছেন। পরিচালনার পাশাপাশি এই ছবিতে আমিরের উদ্যোগে গানও গাইবেন ফয়জল।