বলিউডের প্রতিটা ছবির আড়ালে লুকিয়ে থাকে হাজারো গল্প। সেরকমই একটি ছবি ‘ওয়াতন কে রাখওয়ালে’। এই ছবির প্রযোজক ছিলেন ফিরোজ নাদিওয়াদওয়ালা। পরিচালক ছিলেন টি রামারাও। চিত্রনাট্য লিখেছিলেন কাদের খান।
বহু তারকাসমৃদ্ধ এই ছবিতে ছিলেন অশোককুমার, সুনীল দত্ত, ধর্মেন্দ্র, কাদের খান, মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়, মিঠুন চক্রবর্তী এবং তাঁর বিপরীতে নায়িকা শ্রীদেবী। খলনায়কের ভূমিকায় ছিলেন শক্তি কপূর ও প্রেম চোপড়া।
১৯৮৭ সাল ধর্মেন্দ্রর জন্য খুবই ভাল ছিল। সে বছর পর পর তাঁর ছ’টি ছবি সফল হয়েছিল বক্স অফিসে।
এই ছবিতে বলিউডের তিন প্রজন্ম একসঙ্গে কাজ করেছিল। অশোককুমার, ললিতা পওয়ারের পাশাপাশি ছিলেন সুনীল দত্ত-ধর্মেন্দ্র ও প্রেম চোপড়া। তৃতীয় প্রজন্মের প্রতিনিধি ছিলেন মিঠুন, শ্রীদেবী ও শক্তি কপূর।
এই ছবিতে শ্রীদেবীর কণ্ঠ পরে ডাবিং করানো হয়েছিল। কারণ তাঁর সেই সময়কার হিন্দি উচ্চারণ পছন্দ ছিল না পরিচালক-প্রযোজকের। ছবির নামও পাল্টানো হয়। প্রথমে এর নাম রাখা হয়েছিল ‘জেলার’।
এই ছবিতে প্রথমবার একসঙ্গে কাজ করেন মিঠুন ও সুনীল দত্ত। পরে আর একবারই একসঙ্গে কাজ করেছেন এই দুই তারকা।
শ্রীদেবীর সঙ্গে মিঠুন দ্বিতীয় বারের জন্য জুটি বেঁধেছিলেন এই ছবিতে। এ ছাড়া আরও তিনটি ছবিতে একসঙ্গে অভিনয় করেছেন তাঁরা। সে গুলি হল ‘গুরু’, ‘জাগ উঠা ইনসান’ এবং ‘ওয়ক্ত কি আওয়াজ’।
তবে তাঁদের জুটির দ্বিতীয় সিনেমা ‘ওয়তন কে রখওয়ালে’-কে জড়িয়ে সবথেকে চমকপ্রদ জল্পনা হল, এই ছবির শুটিং চলার সময়েই নাকি তাঁরা দু’জনে বিয়ে করে নিয়েছিলেন।
১৯৮৭ সালে কেরিয়ারের মধ্যগগনে ছিলেন মিঠুন। সে বছর তাঁর আটটি ছবি মুক্তি পেয়েছিল।
তবে এই জল্পনা কোনওদিন স্বীকার করেননি মিঠুন বা শ্রীদেবী, কেউই। তাঁরা তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে মুখ খোলেননি। কিন্তু গুঞ্জন শোনা যায়, শ্রীদেবী-ঝড়ে ভাঙতে বসেছিল মিঠুনের সংসার।
১৯৭৯ সালে মিঠুন বিয়ে করেছিলেন যোগিতা বালিকে। শ্রীদেবী ছাড়াও সারিকা ও বলিউডের আর এক সুন্দরী হেলেনা লুকের সঙ্গে মিঠুনের প্রণয় নিয়ে গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল। কিন্তু সে সবই যোগিতা বালিকে বিয়ের আগে।
বিবাহিত মিঠুনের পরকীয়ার জেরে দুই ছেলেকে নিয়ে নাকি সংসার ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন যোগিতা। তবে তিনি বিয়ে ভাঙতে একটুও রাজি ছিলেন না। স্ত্রীকে ডিভোর্স করার ইচ্ছে ছিল না মিঠুনেরও।
শ্রীদেবী চেয়েছিলেন মিঠুনকে বিয়ে করতে। নায়কের জীবনে দ্বিতীয় নারী হয়ে থাকার কোনও ইচ্ছে তাঁর ছিল না। ফলে মিঠুন যে যোগিতাকে ডিভোর্স করবেন না, সে কথা বুঝতে পেরে সম্পর্ক থেকে সরে দাঁড়ান শ্রী।
দূরত্ব দৃঢ় করতে এরপর মিঠুন আর শ্রীদেবী একসঙ্গে অভিনয় করেননি। ধীরে ধীরে সম্পর্ক স্বাভাবিক হয় মিঠুন-যোগিতা বালি সম্পর্কও। কয়েক বছর পরে জন্ম হয় তাঁদের তৃতীয় ছেলের। পরে মিঠুন এক শিশুকন্যাকেও দত্তক নেন।
১৯৯৬ সালে শ্রীদেবী বিয়ে করেন প্রযোজক বনি কপূরকে। দুই মেয়ে খুশি আর জাহ্নবীকে নিয়ে সযত্নে সংসার সাজিয়েছিলেন শ্রী। ২০১৮-র ২৪ জানুয়ারি শ্রীদেবীর আকস্মিক ও রহস্যময় মৃত্যুতে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে সেই সংসার।
মিঠুনও নিজেকে নিয়ে গিয়েছেন প্রচার থেকে অনেক আড়ালে। প্রকাশ্যেও বিশেষ দেখা যায় না তাঁকে। শ্রীদেবীর সঙ্গে তাঁর প্রণয় ও বিয়ের জল্পনা কল্পনা রয়ে গিয়েছে বলিউডের চিরকালীন রোমান্টিকগাথা হয়েই।