Raajhorshee De

আর্থিক তছরুপ, নুসরতের সই জাল! রাজর্ষির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রযোজকদের, কী বললেন পরিচালক?

পরিচালক রাজর্ষি, প্রযোজক অরিন্দম-প্রিয়াঙ্কা আইনের পথে হাঁটবেন উভয় পক্ষ। আর্থিক তছরুপ নিয়ে আনন্দবাজার ডট কমকে কী জানালেন তাঁরা?

Advertisement

উপালি মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২৫ ২১:৫২
Share:

পরিচালক রাজর্ষি দে আর্থিক তছরুপ করেছেন? ছবি: ফেসবুক।

পরিচালক থেকে ‘খলনায়ক’ রাজর্ষি দে। নেপথ্যে তাঁর আগামী ছবি ‘ও মন ভ্রমণ’। ছবিতে চার নায়িকা স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, নুসরত জাহান, শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায় এবং কাউন্সিলর অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়াও রয়েছেন বাংলার এক ঝাঁক অভিনেতা। ইতিমধ্যে ছবির দশ দিনের শুটিং হয়ে গিয়েছে। চার দিনের কাজ বাকি রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পরিচালকের বিরুদ্ধে যৌথ ভাবে ৭৩ লক্ষ টাকার আর্থিক তছরুপের অভিযোগ এনেছেন ছবির দুই প্রযোজক অরিন্দম ঘোষ এবং প্রিয়াঙ্কা ভট্টাচার্য। প্রসঙ্গত, প্রিয়াঙ্কা এই ছবিতে অভিনয়ও করছেন। আরও একটি গুরুতর অভিযোগ রাজর্ষির বিরুদ্ধে। তিনি নাকি নুসরতের সই জাল করেছেন!

Advertisement

ঘটনাটি প্রথম প্রকাশ্যে এনেছিল আনন্দবাজার ডট কম। সমাজমাধ্যমে পরিচালকের একটি পোস্ট দেখে রাজর্ষির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁর অনুযোগ ছিল, তিনি ইন্ডাস্ট্রি থেকে প্রাপ্য সম্মান পাচ্ছেন না। তাই বড় পর্দায় ছবি পরিচালনা থেকে সাময়িক বিরতি নেবেন। কাজ করবেন ছোট পর্দা অথবা ওয়েব প্ল্যাটফর্মে। কিন্তু তিনি তাঁর ছবির দুই প্রযোজকের বিরুদ্ধে কোনও কথা বলেননি। এর পরেই খবর ছড়িয়ে পড়ে, তাঁর আর্থিক তছরুপ এবং অভিনেত্রীর সই জাল করার কথা। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ক্ষোভ উগরে দেন দুই প্রযোজক। পরিচালক কিন্তু নীরব। সোমবার, অভিনেত্রীর সই জালের ঘটনা ছড়িয়ে পড়ার পর ফের সমাজমাধ্যমে বক্তব্য রাখেন রাজর্ষি। এ বার তিনিও ‘ও মন ভ্রমণ’ ছবির প্রযোজকদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ জানিয়েছেন।

তার পরই পুরো ঘটনা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠেছে। প্রকৃত দোষী কে? বিবাদ মেটাতে উভয় পক্ষ কী পদক্ষেপ করতে চলেছেন? ছবির ভবিষ্যৎ-ই বা কী? উত্তর খুঁজতে আনন্দবাজার ডট কম যোগাযোগ করেছিল প্রযোজক অরিন্দম, প্রিয়াঙ্কা ও পরিচালক রাজর্ষির সঙ্গে। কী বলছেন তাঁরা?

Advertisement

অরিন্দম ও প্রিয়াঙ্কা জানিয়েছেন, এর আগে তাঁরা একসঙ্গে কাজ না করলেও রাজর্ষির সঙ্গে পরিচয় ছিল। সেই সূত্রেই রাজর্ষি তাঁদের নতুন ছবির কথা জানান। অর্থ লগ্নিকারীর খোঁজ দিতে বলেন। অরিন্দম নিজেও ছবিতে অর্থ লগ্নি করতে আগ্রহী ছিলেন। ফলে প্রিয়াঙ্কাই মধ্যস্থতা করে উভয়ের মধ্যে যোগাযোগ করিয়ে দেন। তাঁর কথায়, “রাজর্ষিদা জ়ি বাংলা এবং জ়ি টিভির সঙ্গে তাঁর চুক্তিপত্র দেখান আমাদের। সেই চুক্তি অনুযায়ী, চ্যানেল কর্তৃপক্ষ রাজর্ষিদার মোট ছ’টি ছবি কিনবেন। সেই ছ’টি ছবির অন্যতম একটি ‘ও মন ভ্রমণ’। এই ছবির মোট বাজেট ১ কোটি ৮৫ লক্ষ। ছবিমুক্তির পর ব্যবসা দেখে খরচের ৮৫ শতাংশ অর্থ জ়ি আমাদের ফেরত দেবে। খুব ভাল ব্যবসা করলে পুরো অর্থই ফেরত পাব আমরা।” প্রিয়াঙ্কা-অরিন্দম এর পরে অর্থলগ্নিতে রাজি হয়ে যান। তাঁরা প্রথমে ১০ লক্ষ টাকা নগদ দেন, বাকিটা চেকে দিতে থাকেন। তাঁদের অভিযোগ, পরিচালক নাকি পুরো টাকা একবারে পেতে চেয়েছিলেন। প্রযোজকেরা তাতে রাজি না হয়ে ভাগে ভাগে টাকা দিতে থাকেন। এ দিকে, পরিচালকও নাকি কিছু দিন অন্তর টাকার জন্য তাড়া দিতে শুরু করেন।

এ ভাবে মোট ৮০ লক্ষ টাকা খরচের পর প্রযোজকদের সন্দেহ হওয়ায় তাঁরা পরিচালকের কাছে খরচের হিসেব জানতে চান। কিন্তু রাজর্ষি তা জানাতে রাজি হননি! শুরু হয় প্রযোজক-পরিচালক কাজিয়া।

আরও খবর, গোড়ার দিকে প্রযোজকদের হাতে অর্থ না থাকায় অরিন্দম রাজর্ষিকে তারিখ ছাড়া চারটি চেক দিয়ে রেখেছিলেন। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকলে পরিচালক চেক ভাঙাবেন— এই কড়ারে। পরে তাঁর হাতে প্রয়োজনমাফিক অর্থ এসে যাওয়ায় তিনি ধাপে ধাপে নগদে টাকা দিতে থাকেন। চেকগুলো ভাঙাতে বারণ করেন। কিন্তু সেগুলো পরিচালকের কাছে থেকে গিয়েছিল। দুই প্রযোজকের অভিযোগ, অর্থ নিয়ে অনর্থ বাধাতেই নাকি পরিচালক ওঁদের শায়েস্তা করতে এক দিনে চারটি চেক ব্যাঙ্কে জমা দেন। যার ফলে, চারটি চেক-ই বাউন্স করে।

ঘটনার এখানেই শেষ নয়। ছবির তৃতীয় প্রযোজক নুসরত জাহান। প্রিয়াঙ্কার কথায়, “রাজর্ষিদার সঙ্গে কথা বলেই নুসরতদি ছবিটি স্টার জলসায় বিক্রির চেষ্টা করবেন জানিয়েছিলেন। সেই সময় রাজর্ষিদাও জানিয়েছিলেন, জ়ি-এর থেকে স্টার জলসা বেশি অর্থ দিলে তাঁরা যেন সেখানেই তাঁদের ছবি বিক্রি করেন। তার আগে জ়ি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পুরনো চুক্তি বাতিল করতে হবে।” প্রিয়াঙ্কা আরও জানান, তাই আর্থিক সমস্যা দেখা দেওয়ার পর নুসরতের সঙ্গে যোগাযোগ করেন প্রযোজকেরা। সেই সময় অভিনেত্রীর পারিশ্রমিকের প্রতিলিপি নুসরতকে দেখালে তিনি নাকি জানান, প্রিয়াঙ্কাদের যা বলা হয়েছে তার থেকে কম অর্থ তিনি পারিশ্রমিক হিসাবে পেয়েছেন। রাজর্ষি চুক্তিপত্রের যে প্রতিলিপি তাঁদের দেখিয়েছেন সেটি ভুয়ো। অভিনেত্রীর দাবি, পরিচালক তাঁর সই জাল করে ভুয়ো চুক্তিপত্র বানিয়েছেন। একই কথা বলেছে জ়ি কর্তৃপক্ষও! এই প্রসঙ্গে নুসরতের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল আনন্দবাজার ডট কম। তবে তিনি ফোনে অধরা। জানা গিয়েছে, বেশ কিছু অভিনেতা এবং কলাকুশলী প্রযোজকদের কাছে হোয়াটসঅ্যাপে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন, তাঁরা পারিশ্রমিক পাননি। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, তিন নায়িকা-সহ একাধিক অভিনেতা, কলাকুশলীরা কিন্তু পারিশ্রমিক পেয়েছেন। কারও ১ লক্ষ, কারও হয়তো পঞ্চাশ হাজার বা তারও কম টাকা পাওয়া বাকি।

প্রযোজকদের অভিযোগ, এখনও বিদেশে শুটিং বাকি। তাঁরা জানেন, শুধুই কলকাতায় শুটিং করে ৮০ লক্ষ টাকা খরচ করা অসম্ভব। এই প্রসঙ্গে পরিচালকের থেকে সদুত্তর মেলেনি। তার পর ইমপা, পরিচালক গিল্ড এবং ফেডারেশনের দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁরা। পাশাপাশি, থানায় লিখিত অভিযোগও জানিয়েছেন।

তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ। কী বলছেন পরিচালক রাজর্ষি?

আনন্দবাজার ডট কমকে তিনি বললেন, “আমি যদি এই মানসিকতার হই, তা হলে পাঁচটি ছবি বানালাম কী করে? আমার এক কথায় বাংলা ইন্ডাস্ট্রির তাবড় অভিনেতারা অভিনয় করতে রাজি হয়ে যান কেন?” তাঁর আরও দাবি, ওঁদের অভিযোগের কোনও সারবত্তা নেই। আমার তিন নায়িকা-সহ দলের বেশির ভাগ কর্মী তাঁদের পারিশ্রমিক পেয়ে গিয়েছেন। তার প্রতিলিপি ইমপাকে জমা দিয়েছি। আপাতত এর বেশি বলতে পারব না। বাকিটা বলবেন আমার আইনজীবী।” একই কথা জানিয়েছেন দুই প্রযোজকও। আইনি পথে হাঁটবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা।

আন্দবাজার ডট কম যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল ইমপা, পরিচালক গিল্ড, ফেডারেশনের সঙ্গে। বিষয়টি যে হেতু বিচারাধীন তাই মুখ খুলতে নারাজ তিন সংগঠনের মুখপাত্র। তবে সূত্রের খবর, প্রযোজকেরা ইমপাকে দেওয়া চিঠিতে নতুন পরিচালক গিল্ডকে জুড়ে দিয়েছেন। গিল্ডকে আলাদা করে চিঠি পাঠাননি। তাই গিল্ড পুরোটাই ইমপার উপরে ছেড়ে দিয়েছে। সংগঠনের পদক্ষেপের পর পরিচালক গিল্ড বিষয়টি বিশ্লেষণ করার কথা ভাববে। সে ক্ষেত্রে সবার আগে পরিচালকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতাও যাচাই করা হবে।

তার পরেও কিছু প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। এক, প্রযোজক প্রিয়াঙ্কা-অরিন্দমের অভিযোগ, রাজর্ষির নামে নাকি এ রকম বদনাম আগেই ছিল। তা হলে তার পরেও কেন রাজর্ষির ছবিতে লগ্নি করলেন? পরিচালকের দেওয়া নথি, বক্তব্য কেন তাঁরা যাচাই করলেন না? দুই, তিন নায়িকাই যদি পারিশ্রমিক পেয়ে থাকেন তা হলে তাঁরা কেন পরিচালকের হয়ে মুখ খুলছেন না? তিন, নুসরত প্রযোজকদের জানিয়েছেন, তাঁর সই জাল করেছেন পরিচালক। সংবাদমাধ্যমে বা প্রশাসনের কাছে অভিনেত্রী তেমন কোনও বক্তব্য রাখেননি কেন? চার, কেনই বা জ়ি কর্তৃপক্ষ চুপচাপ? পরিচালক গিল্ডকে পাঠানো মেলের প্রতিলিপি প্রযোজকদের কাছে চেয়েছিল আনন্দবাজার ডট কম। এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার আগে পর্যন্ত প্রযোজকদের কেউই তা দিতে পারেননি।

তা হলে প্রকৃত ঘটনা কী? প্রকৃত দোষী কে? পুরোটাই সময় বলবে। তবে ছবির কাজ শেষ হবে, কথা দিয়েছেন পরিচালক। রাজর্ষির কথায়, “যে অর্থ খরচ করেছি সেই অর্থ ফেরত দিয়ে দেব। তার জন্য সময় চেয়েছি। একেবারে দিতে পারব না। যদিও দুই প্রযোজক পুরো টাকা একসঙ্গে চেয়েছেন।” প্রযোজকদের প্রাপ্য অর্থ মিটিয়ে দিলেই ছবি তাঁর। তখন তিনি বাকি চার দিনের শুটিং শেষ করে ছবিমুক্তির কথা ভাববেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement