(বাঁ দিকে) দেবলীনা কেশসজ্জা বদলেছেন। চপস্টিক দিয়ে খাবার খাচ্ছেন দেবলীনা (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।
খুব অবাক করা একটা ফোন এবং তার পর আমার দক্ষিণ আফ্রিকা সফর। ফলাফল, কিছু অসাধারণ স্মৃতি সঙ্গে নিয়ে আবার কলকাতায় ফিরে আসা। একটু বিশদই না হয় লেখা যাক।
একটি বেসরকারি চ্যানেলের উদ্যোগে হঠাৎ করেই দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে একটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অতিথি হওয়ার প্রস্তাব এল। সেখানে নাকি বাংলা ছবিও প্রদর্শিত হবে। তবে বাংলা থেকে ওরা নাকি শুধু আমাকেই বেছে নিয়েছে। পরে অবশ্য জানতে পারি, ‘দোস্তজী’ ছবির জন্য প্রসূনের (পরিচালক প্রসূন চট্টোপাধ্যায়) যাওয়ার কথা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মায়ের শারীরিক অসুস্থতার কারণে প্রসূন যেতে পারেনি। আমি শেষে একাই গিয়েছিলাম। আমি ‘বৃত্ত রহস্য’ ছবির শুটিং নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শুটিংয়ের দিনক্ষণ একটু বদলে নিয়ে অবশেষে যেতে পারলাম।
বাংলায় তো আমাকে ‘উপর মহল’-এর তরফে অলিখিত ভাবে ‘নিষিদ্ধ’ ঘোষণা করা হয়েছে। সম্প্রতি আমার একাধিক অনুষ্ঠান বাতিল হয়েছে। কিন্তু তার পরেও আমি জানি, মনোবল থাকলে কেউ কাউকে আটকাতে পারে না। দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়েও এ বারে আমার এটাই বার বার মনে হচ্ছিল। শিল্পীকে হয়তো আটকানো যায় না। যিনি আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, কথা বলতে গিয়ে জানতে পারলাম, তিনি বাঙালি এবং এক সময় আমার পাড়াতেই বড় হয়েছেন। তিনি নাকি এক সময়ে আমার মায়ের কাছে আঁকাও শিখেছেন। খুবই অবাক হয়েছিলাম।
২৭ বছরের কেরিয়ারে বহু অনুষ্ঠান এবং উৎসবে অংশ নিয়েছি। বহু মানুষের সঙ্গে মিশেছি। কিন্তু এই চলচ্চিত্র উৎসবে আয়োজকদের আতিথেয়তায় আমি মুগ্ধ হয়েছি। আমার সঙ্গে ওঁরা ঠিক ‘অতিথি’-সুলভ নয়, বরং পরিবারের একজন সদস্যের মতো ব্যবহার করেছেন। নিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে কলকাতায় ফেরা পর্যন্ত— এক কথায় অতুলনীয়।
এ বারে আয়োজকদের অনুরোধেই আমি উৎসবের কয়েক দিন শাড়ি পরেছিলাম। আর এটা দেখেও অবাক হলাম, এই পোশাটার নাম যে শাড়ি, স্থানীয়েরা সেটা খুব ভাল করেই জানেন। স্বাভাবিক ভাবেই আমাকে ওখানে সকলে চেনেন না। কিন্তু শুধুমাত্র শাড়ি পরার কারণেই আমাকে প্রচুর মানুষের সঙ্গে নিজস্বী তুলতে হয়েছে। হোটেলের রিসেপশনে একজন মহিলা তো আমার কাছে শাড়ি পরা শেখার আবদারও জানালেন। আমিও তাঁকে শাড়ি পরা শিখিয়েছি। আরও একটা বিষয়, বাংলা ছবি প্রসঙ্গে ওঁদের শ্রদ্ধা জেনেও আমি খুশি হয়েছি।
আফ্রিকায় আমি আগেও তথাগতের (দেবলীনার স্বামী তথাগত মুখোপাধ্যায়) সঙ্গে ঘুরতে গিয়েছি। সে বার মাথায় কর্ন রো ব্রেড করেছিলাম। সে বার সময়ের অভাবে একটা কঠিন ডিজ়াইন করাতে পারিনি। এ বারেও সেটাই করিয়ে ফিরেছি। এই ভাবে আফ্রিকার একটা স্মৃতি আমার সঙ্গে আরও দীর্ঘ সময়ের জন্য রয়ে গেল।
দক্ষিণ আফ্রিকায় একান্তে দেবলীনা দত্ত। ছবি: সংগৃহীত।
নতুন নতুন জিনিস শিখতে আমি পছন্দ করি। এ বারের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে আরও একটা প্রাপ্তি— আমি চপস্টিক দিয়ে খাওয়া শিখলাম। আগে পারতাম না। কিন্তু এ বারে ওখানে আমার এক সহযোগী শিখিয়ে দেওয়ার পর থেকে আমি চপস্টিক দিয়েই খাবার খেয়েছি।
যখন থেকে ঘুরতে যাওয়া শুরু করেছি, তখন থেকেই বুঝতে পেরেছি যে, ঘুরতে যাওয়াটাই আমার জীবন। তার জন্য আমি অন্য কারও (তথাগত) কাছে কৃতজ্ঞ। কিন্তু গত তিন বছর আমি যে ভাবে ঘুরতে যাচ্ছি, সেটারও একটা আলাদা মাহাত্ম্য রয়েছে। কারণ, আমি একা ঘুরতে যাই। অনেকেই ভাবেন, একা মহিলা ঘুরতে গেলে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে সেটা ঘটেনি। বরং আরও বেশি করে স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছি। নিজের মতো ঘোরা, যখন যা ইচ্ছে সেটা করার স্বাধীনতা— উপলব্ধি করতে পেরেছি, এটাই তো জীবন! কত মানুষের সঙ্গে আলাপ হয়, নতুন বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। এগুলোই তো প্রাপ্তি!
এক সময়ে আমি আর তথাগত প্রচুর ঘুরে বেরিয়েছি। তবে এখন একা ঘুরতে কোনও অসুবিধা হয় না। এখন তথাগতের নতুন সম্পর্ক নিয়েও চারপাশে প্রচুর আলোচনা হচ্ছে। তথাগতের সঙ্গে আমার ছাদ আলাদা হয়েছে প্রায় তিন বছর। কাগজে-কলমে তো আমাদের বিচ্ছেদ হয়নি! কিন্তু যে মানুষটার সঙ্গে আমি আর সংসার করি না, সেখানে কোন মুখ এল বা চলে গেল তা নিয়ে আমার আর কিছু যায় আসে না।
তবে এখন ওর যে সম্পর্কের কথা শুনতে পাচ্ছি, এ ক্ষেত্রে তথাগত বলেছে ও নাকি এই সম্পর্কটা নিয়ে বেশ সিরিয়াস। আর ও যে হেতু এই সম্পর্কটা নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলছে, সেটা আমার ব্যক্তিগত ভাবে খুব ভাল লাগছে। কারণ, তথাগত যখন কোনও সম্পর্ককে ‘সিরিয়াস’ বলে, তখন ইতিহাস বলে, সেখানে ও ভাল থেকেছে। তাই আমার আশা, তথাগত নতুন সম্পর্কে ভাল আছে, খুশি আছে। আর ও যখন ভাল থেকেছে, সেটা সব সময়েই আমাকে একটা অদ্ভুত শান্তি দিয়েছে।
(সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অনুলিখিত)